সুস্থ পরামর্শ

অস্টিওআর্থারাইটিসে হাঁটু-কোমরের ব্যায়ামে ফাঁকি নয়

হয়তো জোরে হাঁটতে গেলেন, পা মুড়ে মাটিতে বসে পুজো করতে গেলেন বা ঘর পরিষ্কার করতে গেলেন, অমনি হাঁটুটা যন্ত্রণায় অবশ হয়ে গেল। কিংবা হয়তো সিঁড়ি দিয়ে কয়েক বার ওঠানামা করেছেন, কোমর থেকে হাঁটুতে বিদ্যুতের মতো ব্যথার প্রবাহ শুরু হল, মনে হল হাঁটু ‘লক’ হয়ে গিয়েছে। আর এক পা-ও ফেলতে পারবেন না। কখনও কখনও ব্যথা এমন বাড়ল যে জায়গাটা ফুলে গরম হয়ে গেল। আপনি হয়তো ‘অস্টিওআর্থারাইটিস’-বাধিয়ে বসেছেন। এটাও এক ধরনের বাত, যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। তবে পুরোপুরি সারানো না-গেলেও কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে একে নিয়ন্ত্রণে রেখে ভাল থাকা যায়। গোটা বিষয়টি নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের রিউম্যাটোলজি বিভাগের প্রধান অলকেন্দু ঘোষের মুখোমুখি পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়।দৌড় বাড়ছে। বাড়ছে প্রতিযোগিতা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা অসুস্থতাও। সুস্থ থাকবেন কী ভাবে? কী কী লক্ষ্মণ দেখলে যাবেন চিকিৎসকের কাছে? এই বিভাগে সুস্থ ভাবে বাঁচার ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। শুরু হল নতুন বিভাগ ‘সুস্থ পরামর্শ’। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ১৯:৫৮
Share:

প্রশ্ন: রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস নামেও একটা রোগ আছে। সেটা কি অস্টিওআর্থারাইটিসের থেকে আলাদা?

Advertisement

উ: দু’টোই বাত, তবে রকমফের আছে। রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস সব চেয়ে বেশি হয় হাতের আঙুলের গাঁটে-গাঁটে। সকালে ঘুম ভেঙে হাত নাড়ানো যায় না। তার পর যত কাজকর্ম বাড়ে, শরীর সচল হয় তত ব্যথা কমে। এটা অল্পবয়সেও হতে পারে। উল্টো দিকে বেশি হাঁটাচলা বা কাজকর্ম করলে অস্টিওআর্থারাইটিস বাড়ে। আর এটা শুরু হয় মাঝবয়সে।

Advertisement

প্রশ্ন: অস্টিওআর্থারাইটিস হয় কেন?

উ: খুব হাঁটাচলা, পরিশ্রম করলে, উবু হয়ে ঘর মোছা, ঝাঁট দেওয়ার অভ্যাস থাকলে বা মাটিতে পা মুড়ে বসে রান্না, খাওয়াদাওয়া বেশি করলে মধ্যবয়সের পর অনেকের হাঁটু, কোমর এবং পায়ের হাড় ক্ষয়ে যেতে থাকে। হাড়ের মাঝখানে যে তরল থাকে সেটা শুকিয়ে যায়। ফলে হাড়ের ঘর্ষণে এই ক্ষয় হয়। তার থেকে শুরু হয় যন্ত্রণা।

প্রশ্ন: মাঝবয়সী মহিলারা কেন এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন?

উ: পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই মহিলাদের মধ্যে অস্টিআর্থারাইটিস বেশি। কারণ তাঁরাই সাধারণত পা মুড়ে বসে রান্না, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, ঘর মোছার মতো কাজ করেন। তার উপর যত তাঁরা মেনোপজের দিকে এগোন তত হাড়ের জয়েন্টের স্থিতিস্থাপকতা কমে। ইস্ট্রোজেন হরমোন কমতে থাকে বলে হাড়ে ক্যালসিয়াম-ভিটামিন-ডি ও কমতে থাকে। ফলে হাড়ের ক্ষয় বাড়ে।

প্রশ্ন: তা হলে কি অল্পবয়স থেকেই মেয়েরা আগাম সতর্কতা হিসাবে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে শুরু করবেন?

উ: খেলে কোনও লাভ হবে না। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ওই ভাবে পূরণ হয় না। তার থেকে পরিমিত পুষ্টিকর, সুশম খাবার খেতে হবে। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খুব উপকারি। রোজ যদি একটু ঘরে পাতা সাদা দই খাওয়া যায় তা হলে এই বাত অনেকটা ঠেকানো যায়। সঙ্গে শাকসব্জি, ফল, ডাল খেতে হবে।

প্রশ্ন: কিন্তু অনেকে বলেন, ডাল খাওয়া বারণ, এতে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে?

উ: অস্টিওআর্থারাইটিসে ডাল খেতে কোনও বাধা নেই। বাদাম-ছোলা সবই খাওয়া যায়। শুধু চর্বিজাতীয় খাবার কমাতে হবে। কারণ এতে ওজন বাড়ে।

প্রশ্ন: ওজন বাড়লে কি অস্টিওআর্থারাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে?

উ: অবশ্যই। ওজন বাড়লে শরীরের ভার এসে পড়ে কোমর এবং বিশেষ ভাবে হাঁটুর উপর। এটা হাড় ক্ষয়ের অন্যতম কারণ।

প্রশ্ন: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি আর কী করলে এই বাত নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে?

উ: হাঁটু-কোমরের ব্যায়ামে কোনও ফাঁকি দেওয়া চলবে না। সেই সঙ্গে মাটিতে পা মুড়ে বসে কাজ না-করা, সিঁড়ি দিয়ে বেশি ওঠানামা না-করা, দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে রান্না না-করা, কথায়-কথায় প্রচুর না-হাটা। মর্নিংওয়াকে বাধা নেই। তবে মাইলের পর মাইল জোরে হাঁটা যাবে না। সমান্তরাল, অপেক্ষাকৃত মসৃণ রাস্তায় হাঁটতে হবে, তবে সেটা আধ ঘণ্টা-চল্লিশ মিনিটের বেশি নয়।

প্রশ্ন: অনেকে বলেন অস্টিওআর্থারাইটিসে হাঁটু ফুলে গেলে গরম শেঁক দিতে হবে। ঠিক?

উ: জায়গাটা যদি ফুলে গরম হয়ে যায় তা হলে বরফ শেঁক দিতে হবে। আর গরম না-হয়ে শুধু ব্যথা হলে ব্যথা কমানোর মলম লাগিয়ে তার উপর গরম শেঁক দেওয়া যাবে।

প্রশ্ন: অস্টিওআর্থারাইটিস কি জিনগত রোগ? পরিবারের কারও থাকলে হতে পারে?

উ: পুরোপুরি জেনেটিক নয়, তবে পরিবারের কারও থাকলে হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সেও অনেকের হয়ে যায়। ফলে নিকটাত্মীয়ের থাকলে প্রথম থেকে ব্যায়াম শুরু করা উচিত।

প্রশ্ন: কিছু কিছু আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি ওষুধ সংস্থা দাবি করে যে বাত পুরোপুরি কমানো যায়। এটা ঠিক?

উ: অন্য ধারার মেডিসিন সম্পর্কে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। শুধু এটুকু বলব যে, কোনও বাতই পুরোপুরি সারে না।

প্রশ্ন: পায়ে বেশি পরিশ্রম হলে বা অনেক ক্ষণ পা মুড়ে থাকলে হাঁটুতে বা কোমরে ব্যথা হতে পারে। তা হলে কি সঙ্গে সঙ্গে বাতের চিকিত্‌সকের কাছে যেতে হবে?

উ: তা নয়, সাময়িক ভাবে এই রকম ব্যথা হতেই পারে। তখন একটু বিশ্রাম নিতে হবে, একটু স্ট্রেচিং করতে হবে। কিন্তু সে সব করা সত্ত্বেও যদি ব্যথা বেড়ে যায় তখন চিকিত্‌সকের দ্বারস্থ হতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন