ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বিগ্ন শ্রীরামপুর পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। গত কয়েক সপ্তাহে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে বেশ কয়েক জন শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল এবং কলকাতার নার্সিংহোমে চিকিত্সাধীন। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া বা প্রচার চালানোর ক্ষেত্রে জেলা স্বাস্থ্য দফতর উদাসীন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন তাঁরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। তবে এখনই ডেঙ্গিতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শহরের ৭ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড সহ কয়েকটি ওয়ার্ডে বেশ কয়েক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েক দিন আগেই শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের তরফে ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’ সে কথা লেখাও হয়। পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিতাই গুহ বলেন, “এই শহরে আমার পরিচিত পাঁচজন কলকাতায় নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এলাকায় কোনও প্রচার নেই। পাড়ায়-পাড়ায় সচেতনার জন্য লিফলেট বিলি বা পোস্টার সাঁটা হোক।” পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে গত শুক্রবার শ্রীরামপুরে এসেছিলেন হুগলির উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২ অরবিন্দ তন্ত্রী। তিনি বলেন, “ওখানে ৫ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরিষ্কার হবে ওঁদের ডেঙ্গি হয়েছে কি না।” তিনি জানান, শুধু শ্রীরামপুরই নয়, বৈদ্যবাটি বা চাঁপদানি পুর এলাকাও ঘুরে দেখা হয়েছে। কোনও জায়গাতেই ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে বলে মনে হয়নি।
চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য দফতরের পদক্ষেপের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতাও জরুরি। ওয়ালশ হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ত্রিদীপ মুস্তাফি বলেন, “এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। তবে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। জ্বর হলে কেউ যেন অবহেলা না করেন। এখানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টো পর্যন্ত ফিভার ক্লিনিক খোলা থাকছে। অন্য সময়ে জরুরি বিভাগে দেখানো যেতে পারে।”
ডেঙ্গি প্রতিরোধে চিকিত্সকদের পরামর্শ, শোওয়ার সময় অবশ্যই মশারি টাঙাতে হবে। যত্রতত্র জল জমতে দেওয়া যাবে না। কেননা, পরিষ্কার জমা জলেই ডেঙ্গির মশা জন্মায়। এলাকায় মশা মারার স্প্রে বা কামান দাগার ব্যবস্থা করতে হবে। এক চিকিত্সকের কথায়, ডেঙ্গির খবর কোথা থেকে আসছে, সেটা বড় কথা নয়। হাত গুটিয়ে বসে না থেকে সব জায়গাতেই মশা নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সতর্ক আছি। পুরসভার তরফে মশা মারার স্প্রে ছড়ানো হচ্ছে। প্রচারও করা হচ্ছে।”
আইএমএ-র বঙ্গীয় রাজ্য শাখার কার্যকরী কমিটির সদস্য, শ্রীরামপুরের বাসিন্দা চিকিত্সক প্রদীপ দাস বলেন, “ রাতে মশারিতে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দিনের বেলা? আসল কাজটা হল, মশা নিধন করতে হবে। সে জন্য শুধু স্প্রে করলে হবে না। কামান দাগতে হবে। তাতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।” তাঁর বক্তব্য, “জমা জল জমা আটকাতে নিজের বাড়ি এবং আশপাশেও সবাইকে নজর রাখতে হবে। শহরে প্রচুর নির্মাণকাজ হচ্ছে। এই সব জায়গায় কিন্তু খোলা জায়গায় জল জমে থাকে। কেউ নজর করেন না। এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।”