মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের রাখার মতো কোনও হোমই নেই রাজ্যে। নির্ভর করতে হয় হাতে গোনা কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উপরে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ব্যবস্থাও অপ্রতুল। সম্প্রতি তিন মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরকে উদ্ধার করে তাদের আপাতত রাখার বন্দোবস্ত হলেও, স্থায়ী ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যায় কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতি।
শিশু কল্যাণ সমিতি সূত্রের খবর, গত ২৫ নভেম্বর বেহালা থানা এলাকায় ময়লা জামাকাপড়, উস্কোখুস্কো চুলের বছর বারোর এক কিশোরকে এ দিক-সে দিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখেন এলাকার লোকজন। দীর্ঘক্ষণ অচেনা একটি ছেলে কেন একই জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা জানতেও চান কয়েক জন। কিন্তু কোনও উত্তর মেলে না। শেষে তাঁরা খবর পাঠান বেহালা থানায়।
প্রায় একই ভাবে নভেম্বরের প্রথম দিকে আরও দুই কিশোর উদ্ধার হয় বেনিয়াপুকুর ও দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকা থেকে। রাস্তায় ঘুরতে দেখে পুলিশ ১৬ বছরের এবং ১৪ বছরের দুই কিশোরকে উদ্ধার করে। দু’জনকেই তুলে দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির হাতে।
উদ্ধারের পরে নিয়ম মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি তিন জনকে হাজির করে কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির সামনে। আর তখনই তাদের রাখার ব্যবস্থা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে সমিতি। কারণ উদ্ধার হওয়া তিনটি ছেলেই মানসিক প্রতিবন্ধী। আর এই মুহূর্তে ১৮ বছরের নীচের মানসিক প্রতিবন্ধীদের রাখার কোনও আলাদা সরকারি হোম নেই। সরকারি অনুদানে কয়েকটি বেসরকারি হোম রয়েছে। কিন্তু সেখানেও এখন ফাঁকা জায়গা নেই। উপায় না থাকায় আপাতত তিন জনের মধ্যে বেনিয়াপুকুর ও দক্ষিণ বন্দর থেকে উদ্ধার হওয়া দুই কিশোরের ঠাঁই হয়েছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাধারণ হোমে। অসুস্থতার জন্য বেহালা থেকে উদ্ধার বছর ১৬-র ছেলেটিকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে ওই হোমে তৈরি হয়েছে নতুন সমস্যা। হোম সূত্রের খবর, সুস্থ-স্বাভাবিক বাচ্চারা হঠাৎ করে এদের মানতে পারছে না। কারণ মানসিক প্রতিবন্ধকতার জন্য ছেলে দু’টি কখনও চিৎকার করছে, কখনও হোম নোংরা করছে। অনেকে ঘেন্নায় খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ফলে এক সমস্যা মেটাতে গিয়ে আর এক সমস্যায় জেরবার শিশু কল্যাণ সমিতি।
কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্য অমিত ভট্টাচার্যের কথায়, “আপাতত দু’জন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাধারণ হোমে রয়েছে। হাসপাতালে থাকা কিশোরটি ছাড়া পেলে, তাকেও ওখানেই রাখতে হবে। পরে মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বেসরকারি কোনও হোমে খালি জায়গা পেলে সেখানে পাঠানো হবে।” সমিতির সদস্যরা আপাতত এই সমাধান বার করলেও শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর স্থায়ী কোনও সমাধান বার করছে না কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। উত্তরে নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “আশা করছি ওদের জন্য খুব তাড়াতাড়ি কোনও বিশেষ হোমের ব্যবস্থা করতে পারব।”