আসবে কেন্দ্রীয় দল, কাজ এখনও শেষ হল না সদর হাসপাতালে

নিদেন পক্ষে ‘পাশ মার্ক’! আপাতত এটুকু হলেই চলবে। সেই লক্ষ্যেই এই গরমে পাখার হাওয়া ছেড়ে গলদঘর্ম হয়ে সোমবার ও মঙ্গলবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের এ-তলা, ও-তলা চষে বেড়ালেন হাসপাতাল সুপার নীলাঞ্জনা সেন। কারণ, শীঘ্রই নানা প্রশ্ন নিয়ে হাজির হবেন দিল্লির ‘ন্যাশন্যাল বোর্ড অব এগজামিনেশন’-এর প্রতিনিধিরা।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:৫৮
Share:

এখনও শেষ হয়নি কাজ। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিদেন পক্ষে ‘পাশ মার্ক’!

Advertisement

আপাতত এটুকু হলেই চলবে। সেই লক্ষ্যেই এই গরমে পাখার হাওয়া ছেড়ে গলদঘর্ম হয়ে সোমবার ও মঙ্গলবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের এ-তলা, ও-তলা চষে বেড়ালেন হাসপাতাল সুপার নীলাঞ্জনা সেন। কারণ, শীঘ্রই নানা প্রশ্ন নিয়ে হাজির হবেন দিল্লির ‘ন্যাশন্যাল বোর্ড অব এগজামিনেশন’-এর প্রতিনিধিরা।

কীসের পরীক্ষা?

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আগামী জুলাই থেকে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে একটি স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রম (যার পোশাকি নাম ‘ডিপ্লোমা ইন ন্যাশন্যাল বোর্ড’) চালু হওয়ার কথা, যা ‘ন্যাশন্যাল বোর্ড অব এগজামিনেশন’-এর আওতাধীন। প্রসূতি বিভাগে ৪টি, শিশু বিভাগে ২টি, শল্য চিকিৎসা বিভাগে ২টি, মেডিসিন বিভাগে ২টি এবং অ্যানাস্থেসিয়ায় ২টি-সহ মোট ১২টি আসন রয়েছে। এই পাঠ্যক্রম করতে পারবেন এমবিবিএস উত্তীর্ণরা। এই ডিপ্লোমার জন্য তাঁদের পরীক্ষায় বসতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যে সঙ্কট রয়েছে, এই ডিপ্লোমা পাশ করা চিকিৎসকেরা তা কিছুটা হলেও দূর করতে পারবেন বলে স্বাস্থ্য দফতরের আশা।

আগামী দিনে মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার আগে দিল্লির সরেজমিন খতিয়ে দেখবেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এই পাঠ্যক্রমের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে কি না। এই পাঠ্যক্রমের জন্য চাই সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, সেমিনার কক্ষ, প্রতিটি বিভাগ এবং বহির্বিভাগ সংলগ্ন ক্লাসরুম প্রভৃতি। সেই পরিকাঠামো গড়ার কাজে অন্তত পাশমার্ক পেতেই হবে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তা না হলে যে ওই ডিপ্লোমা পাঠ্যকমর চালু হওয়া নিয়েই সংশয় দেখা দিতে পারে, তা বিলক্ষণ জানেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা।

সদর হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের পাশাপাশি ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমের পরিকাঠামো গড়ার কাজ কত দূর এগিয়েছে, তা সরেজমিন খতিয়ে দেখতে দিন কয়েক আগে পুরুলিয়ায় আসে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল। কিন্তু, ওই দলের সদস্যেরা কাজের অগ্রগতি দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। গত বছর সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এপ্রিল মাসের মধ্যে। সেই কাজ এত দিনেও শেষ হয়নি কেন, তা জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে জানতে চায় প্রতিনিধিদল। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা তাঁদের জানান, পূর্ত দফতর এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি। পূর্ত দফতরের আবার দাবি, হাসপাতাল চালু থাকায় ওই কাজ করার কিছু বাস্তব অসুবিধা রয়েছে। তার মধ্যেই কাজ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা কোনও অজুহাতই শুনতে রাজি হননি। তাঁরা নির্দেশ দেন, ৮ জুনের মধ্যে কাজের কতটা অগ্রগতি হল, তা ছবি তুলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাতে হবে। কিন্তু, কাজের অগ্রগতি তেমন না হওয়ায় সেই ছবি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে এখনও পাঠানো যায়নি বলেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

মঙ্গলবারও হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন বিভাগে ওই পাঠ্যক্রমের জন্য যে সমস্ত ঘর তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে এখনও কাজ চলছে। কোথাও বিদ্যুত সংযোগের কাজ চলছে। কোথাও যন্ত্রপাতি লাগানোর কাজ। কোনও কোনও ঘরে দেওয়াল খোঁড়ার কাজও চলছে। হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন প্রতিটি বিভাগে গিয়ে কাজকর্ম তদারকি করছে। আর কর্মীদের তাড়া দিচ্ছেন দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য। সুপারের কথায়, “এখনও পুরো কাজ শেষ হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব সব শেষ করে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।”

পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “দিল্লি থেকে প্রতিনিধিদল আসবে পরিকাঠামো দেখতে। তবে, এটা প্রাথমিক পরিদর্শন। পরিভাষায় যাকে বলে ‘লেটার অব ক্রেডিট’। এর পরে ‘লেটার অব পারমিশন’। সেই পরিদর্শনের সময় পুরো পরিকাঠামো প্রস্তত রাখতে হবে। কাজের কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, পরিকাঠামো গড়ার বিষয়টি পুরোপুরি স্বাস্থ্য দফতরের হাতে নেই। পূর্ত দফতর তাঁদের হাতে না দিলে কিছু করার নেই। পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তরুণকুমার চক্রবর্তী বলেছেন, “একটা চালু হাসপাতালে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু বাস্তব অসুবিধা রয়েছে। তা মেনেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। সে কারেই কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন