গাড়াদহ গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ মেলার খবরে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শিবিরটি তুলে নেওয়া হল। কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য দাবি, গ্রামে আর কারও রক্তে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ না মেলায় শিবিরটি তুলে নেওয়া হয়েছে।
রবিবার কাঁকসার গাড়াদহ গ্রামে গিয়ে অবশ্য দেখা যায়, ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে শুয়োরের দল। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেও দেখা যায়, মশারি টাঙানো বা মশাবাহিত রোগ রুখতে যে সাধারণ সতর্কতা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে তা নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই তাঁদের। এমনকী কয়েকজন বাদে পোষা শুয়োরগুলোকে মশার হাত থেকে রেহাই দিতে কোনও ঘেরা জায়গার ব্যবস্থা করেননি তাঁরা। প্রশ্ন করা হলে বেশিরভাগ জায়গাতেই জবাব মিলল, মশারি কেনার অত টাকা আমাদের নেই। পঞ্চায়েত সে ব্যবস্থা করে দিলেই ভাল হয়।
শুক্রবার এই গ্রামেরই কিশোর সনাতন মুর্মূ কয়েকদিনের জ্বরে ভোগায় তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রক্ত পরীক্ষা করে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ মিলেছে বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। এই খবর চাউর হতেই ব্লক স্বাস্থ্য দফতর শনিবার ওই গ্রামে আশা কর্মীদের পাঠান বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য। একটি অস্থায়ী চিকিৎসা শিবিরও বসানো হয়। বাসিন্দাদের কারও জ্বর হলে তত্বাবধান করার জন্য সেখানে একজন চিকিৎসক ও নার্সও ছিলেন। তবে রবিবারই শিবিরটি তুলে নেওয়া হয়। ব্লক দফতর সূত্রের দাবি, যাঁদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে তাঁদের কারও রক্তে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ পাওয়া যায়নি। আর যাঁদের জ্বর হয়েছিল তাঁরাও এখন সুস্থ আছেন। তাই শিবিরটি তুলে নেওয়া হয়।
রবিবার সকালে গাড়াদহ গ্রামের হাল হকিকত ঘুরে দেখতে আসেন ব্লকের কর্তারা, পঞ্চায়েত ও পুলিশের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করার চেষ্টা করেন তাঁরা। ওই পাড়ার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই শুয়োর পালন করা হয়। কী ভাবে শুয়োর থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে সে বিষয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করা হয়। শুয়োরগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তাও গ্রামবাসীদের বোঝান প্রশাসনের কর্তারা। কাঁকসার বিডিও রাখী বিশ্বাস জানান, ওই এলাকায় প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। আর শুয়োর সরানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শুয়োরগুলিকে জনবসতি থেকে দূরে সরানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথাও বলা হয়েছে।”
এ দিকে, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে আজ, সোমবার থেকে একটি ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস। তিনি জানান, ওই ক্লিনিকে শুধু জ্বরের রোগীদের দেখা হবে। প্রয়োজনে সেখানেই রক্ত পরীক্ষা করারও ব্যবস্থা রাখা হবে। তবে নতুন করে আরও কারও রক্তে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ পাওয়া যায়নি। দেবব্রতবাবু বলেন, “কারও জ্বর, মাথা ব্যাথা, ঝিমুনি থাকলে অবিলম্বে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা প্রয়োজন। বাড়িতে অযথা সেই রোগীকে যেন ফেলে রাখা না হয়।”