এক দিনে মহানগরে বলি চার, উদ্বেগ বাড়ছেই

পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে এমনিতেই নাকাল রাজ্য। তার উপরে শনিবার খাস কলকাতার বুকে সোয়াইন ফ্লুয়ে চার জনের মৃত্যু নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলে দিল স্বাস্থ্যকর্তাদের। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে রয়েছে পাঁচ বছরেরও কম বয়সি দু’টি শিশু। বাকি দু’জন পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা। এ দিন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এক মহিলা মারা যান। বাকি তিন জন ভর্তি ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে এক জন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। বাকিরা পশ্চিমবঙ্গেরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৪০
Share:

পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে এমনিতেই নাকাল রাজ্য। তার উপরে শনিবার খাস কলকাতার বুকে সোয়াইন ফ্লুয়ে চার জনের মৃত্যু নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলে দিল স্বাস্থ্যকর্তাদের।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে রয়েছে পাঁচ বছরেরও কম বয়সি দু’টি শিশু। বাকি দু’জন পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা। এ দিন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এক মহিলা মারা যান। বাকি তিন জন ভর্তি ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে এক জন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। বাকিরা পশ্চিমবঙ্গেরই। এর আগে এ রাজ্যে একই দিনে সোয়াইন ফ্লুয়ে চার জনের মৃত্যুর খবর মেলেনি। সব মিলিয়ে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩। এ দিনই নতুন ১০ জনের শরীরে সোয়াইন ফ্লু-র জীবাণু ধরা পড়েছে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল ১৯৯।

এক দিনে চার জনের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বহু ডাক্তারই। এমনই এক চিকিৎসকের মন্তব্য, “কলকাতা জুড়ে ওয়াই-ফাই নগরীর হাজারো বিজ্ঞাপন দিয়েছে পুরসভা। কিন্তু সোয়াইন ফ্লু নিয়ে সচেতনতার কোনও হোর্ডিং নেই! এটা দুর্ভাগ্যের।” মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, শহরের যে এলাকাগুলিতে সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়েছে, সেখানে ইতিমধ্যেই সচেতনতা প্রসারে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। বাকি এলাকাগুলিতেও শীঘ্র ওই ব্যানার টাঙানো হবে।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য এখনও আশ্বাস দিয়ে চলেছে, ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। তা হলে এক দিনে চার জনের মৃত্যু ঘটল কী ভাবে? তাতে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যাখ্যা, ওই চার জনেরই অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁদের। তবে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে বলেন, “রোগীদের সঠিক চিকিৎসা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।”

ইতিমধ্যেই সোয়াইন ফ্লু চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে কলকাতার চারটি বেসরকারি হাসপাতালকে শো-কজ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সরকারি সূত্রের খবর, হাসপাতালগুলি জবাবও দিয়েছে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন স্বাস্থ্যকর্তারা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

দফতরের একাংশের বক্তব্য, সোয়াইন ফ্লু-র চিকিৎসায় ওই চারটি হাসপাতালেরই গাফিলতি ছিল। রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। যদিও অনেকেই বলছেন, নিজেদের গাফিলতি চাপা দিতেই হাসপাতালগুলির উপরে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে সরকার।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেকেই বিদেশবিভুঁইয়ে গিয়ে সংক্রামিত হয়ে ফিরছেন। তাই বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরেই স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ২০০৯ সালে যখন সোয়াইন ফ্লু বড় আকার নিয়েছিল, তখন বিদেশ থেকে আসা সমস্ত বিমানযাত্রীকে বাধ্যতামূলক ভাবে একটি ‘ট্রাভেল কার্ড’ পূরণ করতে হতো। ওই কার্ডে যাত্রীর পরিচয়-ঠিকানা-ফোন নম্বর ছাড়াও কোনও শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে কি না লিখতে হতো। সেই সঙ্গে তিনি যেখানে থাকতেন, তার পাশের এলাকায় সোয়াইন ফ্লু-র প্রাদুর্ভাব হয়েছে কি না, ফ্লু-আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির কাছাকাছি সম্প্রতি তিনি ছিলেন কি না, জানাতে হতো এই সব তথ্য। কার্ড পরীক্ষা করে বিমানবন্দরের চিকিৎসকেরা তাতে ‘টিক’ চিহ্ন দিলে তবেই যাত্রীরা অভিবাসন বিভাগের অনুমতি পেতেন।

এ বার অবশ্য বিমানযাত্রীদের এমন কোনও কার্ড ফিল আপ করতে হচ্ছে না। তবে অভিবাসন দফতর সূত্রের খবর, সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত কোনও দেশ থেকে কেউ এসেছেন জানতে পারলেই তাঁকে পাঠানো হচ্ছে দফতরের একটি চিকিৎসক দলের কাছে। রেহাই মিলছে প্রাথমিক কিছু পরীক্ষার পর। তবে সোয়াইন ফ্লু-র লক্ষণ ধরা পড়লে ওই ব্যক্তিকে পাঠানো হচ্ছে বিমানবন্দরের মেডিক্যাল ইউনিটে। সেখানের ডাক্তাররাও রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে, ওই যাত্রীকে পাঠানো হচ্ছে আইডি হাসপাতালে। সম্প্রতি যেমন কলকাতায় নামার পর ইন্দোনেশিয়ার এক যুবতীর দেহে সোয়াইন ফ্লু-র লক্ষণ ধরা পড়ে। তাঁকেও পাঠানো হয় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।

সোয়াইন ফ্লু নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে বিমানবন্দরের কর্মীদেরও। সূত্রের খবর, অনেকেই দু’দিনের জ্বর বা গা-ব্যথা নিয়ে আসছেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কী কী উপসর্গ থাকলে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে, তা-ও বলা হয়েছে। তবে এখনও কোনও কর্মীর সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়েনি বলেই খবর।

অসুস্থ মুলায়ম, সন্দেহ সোয়াইন ফ্লু

কিছু দিন আগেই মেতেছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। পরিবারে সেই অনুষ্ঠানের রেশ কাটতে না কাটতেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মুলায়ম সিংহ যাদব। শ্বাসকষ্ট, শরীরে অস্বস্তি। শুক্রবার রাতেই গুড়গাঁওয়ের মেদান্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সমাজবাদী পার্টির নেতাকে। রোগের লক্ষণ দেখে সোয়াইন ফ্লু বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। হাসপাতালের ডাক্তারদের বক্তব্য, যত ক্ষণ না পর্যন্ত রিপোর্ট আসছে, তত ক্ষণ বলা যাচ্ছে না কিছু। এর মধ্যেই অজ্ঞাতবাস থেকে মুলায়মের শরীরের খোঁজ নিয়েছেন রাহুল গাঁধী। দিল্লির রাজনীতিতে অনেকেই বলছেন, আগামী সপ্তাহে সংসদে বেশ কিছু বিতর্কিত বিল আসছে। লোকসভায় জমি বিল, রাজ্যসভায় বিমা বিল পাশ করাতে চায় মোদী সরকার। সে জন্যই সমাজবাদী পার্টিকে কাছে টানতে আগ্রহী কংগ্রেস। যদিও এই খোঁজখবরকে নিছক সৌজন্য বলেই ব্যাখ্যা করছে কংগ্রেস। রাহুল ফিরছেন আগামী সপ্তাহে, পূর্ব পরিকল্পনা মেনেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন