রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছবিটা এখন এমনই। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিস সংক্রমণের তীব্রতা কমার লক্ষণ নেই। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এই হাসপাতালে তিন মহিলা-সহ আরও চার আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। ওই রোগের উপসর্গ নিয়ে এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক শিশু-সহ অন্তত ১৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের ভাইরোলজির এক বিশেষজ্ঞ-সহ তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম পাঠানো হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। এ দিনই তাঁরা কলকাতা থেকে রওনা হয়ে শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ি পৌঁছবেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও যে সমস্ত এলাকা থেকে রোগীরা বেশি আসছেন সেখানে তাঁদের যাওয়ার কথা রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসবেন। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ দিন কলকাতায় জনস্বাস্থ্য বিষয়ে একটি আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য সচিব মলয়কুমার দে বলেন, খুব অল্প কিছু রোগীর ক্ষেত্রেই মশাবাহিত জাপানি এনসেফ্যালাইটিস পাওয়া গিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোম’-এর উৎস জলবাহিত ভাইরাস বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। তাঁর পরামর্শ, কুয়োর জল ফুটিয়ে খাওয়া উচিত। টিউবওয়েলের জলে ঝুঁকি কম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁরা হলেন মেটেলির বাসিন্দা আলিয়া খাতুন (৬৫) এবং জলপাইগুড়ির বড়ভিটার বাসিন্দা সুখোদয় দাস (৫৫)। আলিয়াকে বুধবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সুখোদয়বাবু ভর্তি হয়েছিলেন ১৩ জুলাই। রায়গঞ্জের জরিনা খাতুন (৫৫) এবং নিউ জলপাইগুড়ির অনুবালা রায় (৫৫) এ দিন সন্ধ্যা নাগাদ মারা যান।
হাসপাতালে এখনও অন্তত ৬০ জন রোগী জ্বর, বমি, অচৈতন্য হয়ে যাওয়ার মতো এনসেফ্যালাইটিসের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার বলেন, “জেলা থেকে অনেক রোগী গুরুতর পরিস্থিতিতে এখানে আসছেন। অনেককেই বাঁচানো যায়নি।” রোগের শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার আগেই মারা গিয়েছেন, জানান তিনি।
পাঁচদিন ধরে খারাপ এমআরআই যন্ত্রটি অবশ্য এ দিন ফের চালু হয়েছে। তবে এ দিন বিকেল পর্যন্ত যন্ত্র খারাপ হয়ে পড়ে থাকায় এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে আক্রান্ত রোগীদের অনেকেরই এমআরআই পরীক্ষা হয়নি। দিনহাটার বাসিন্দা ছ’বছরের অনুষ্কা দাস, মাথাভাঙার সফিকুল হুসেন, কালিয়াগঞ্জের ১২ বছরের কিশোরী বাণী সরকার এখনও অপেক্ষায়। বাণীর বাবা গৌতমবাবু বলেন, “চিকিৎসকরা বলেছেন এমআরআই না হলে ঠিক চিকিৎসা হবে না। মেয়ে আট দিন ধরে ভর্তি। হাসপাতালে এমআরআই করাতে অপেক্ষা করছি। বাইরে খরচ করে পরীক্ষা করানোর সামর্থ্য নেই।”
হাসপাতালের সুপার জানান, যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে গিয়ে পাঁচ দিন এমআরআই বন্ধ ছিল, তা কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়নি। যন্ত্রের একটি বিশেষ অংশ খারাপ হয়ে গিয়েছে। তা ভিন্ রাজ্য থেকে বুধবার এনে যন্ত্র চালু করা হয়। তবে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস রোগ নির্ণয়ে রক্ত এবং সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে কিটের সমস্যা আপাতত মিটেছে। দু’বাক্স কিট বুধবার পুনের ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে মিলেছে। এক একটি বাক্সে ৯৬ টি করে কিট রয়েছে। আরও ৫ বাক্স চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত ৭ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত এনসেফ্যালাইটিস উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ৩১জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ৯ জুলাই ৬ জন, ১০ জুলাই ৪ জন, ১১ জুলাই ১০ জন এবং ১২ জুলাই ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৩ জুলাই মারা গিয়েছেন ৩ জন। ১৪, ১৫ এবং ১৬ জুলাই প্রতিদিন দু’জন করে মারা গিয়েছেন।