কিট নেই, অব্যবস্থায় ক্ষোভ অব্যাহত

এনসেফ্যালাইটিস রোগের উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালগুলিতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ অব্যাহত। রোগ নির্ণয়ের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল সবাই। অথচ এখান থেকে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৬
Share:

এনসেফ্যালাইটিসের দাপট। মালদহের একটি নার্সিংহোম থেকে জ্বরে আক্রান্ত ঋদ্ধিমাকে কলকাতা নিয়ে আসার পথে উদ্বিগ্ন পরিজনেরা। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

এনসেফ্যালাইটিস রোগের উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালগুলিতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ অব্যাহত। রোগ নির্ণয়ের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল সবাই। অথচ এখান থেকে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। এর ফলে ঠিক কী কারণে রোগী অসুস্থ হয়েছেন বা মারা যাচ্ছেন তা স্পষ্ট করে জানতে পারছেন না চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয়রা। অধিকাংশ সময়ে পর্যাপ্ত কিটের অভাবেই এই দেরি হচ্ছে।

Advertisement

ডুয়ার্স জুড়ে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চললেও রাজ্য সরকার চিন্তিত নয়, বরং মৃত্যুর তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে এ দিন অভিযোগ করেন রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ডুয়ার্সের নাগরাকাটার কংগ্রেস বিধায়ক জোসেফ মুন্ডার কাছ থেকে এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন। ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতে ন্যূনতম সচেতনতা প্রচারের কাজ রাজ্য সরকার এখনও করেনি বলে অভিযোগ করেন জোসেফ। রক্ত পরীক্ষা রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার কথাও অধীরবাবুকে জানান জোশেফ মুন্ডা। লোকসভাতেও অধীরবাবু এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে রাজ্যের সমালোচনা করেন। অধীরবাবু জানান, রাজ্যে ফিরে যে সব এলাকায় এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ ছড়িয়েছে সেখানে গিয়ে সকলের থেকে বিশদে অভিযোগ শোনার চেষ্টা করবেন।

সোমবার কাওয়াখালির বিধান নগরের বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাস তাঁর মেয়ের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট নিতে যান মেডিক্যালে। তাঁকে জানানো হয় রিপোর্ট পেতে সাত দিন সময় লাগবে। শনিবার হাসপাতালে এই শিশুটির রক্ত দেওয়া হয়েছিল। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘মেয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। কয়েক দিন ধরেই জ্বরে ভুগছে। শনিবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে দেখানো হলে পরীক্ষার রক্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে কিট নেই। তাই রিপোর্ট পরে মিলবে। সুপারের সঙ্গে যোগযোগ করেছি। তিনি বললেন কিট রয়েছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

ঠাঁই নেই হাসপাতালে। তাই শয্যা সিঁড়ির নীচে।

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

কিটের অভাবে করা যায়নি আরও অনেকের রক্ত পরীক্ষা। গত ৩১ জুলাই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরই চিকিৎসকদের সংগঠন হেল্থ সার্ভিস সেন্টার ডুয়ার্সে ক্রান্তি এলাকায় শিবির করে। এনসেফ্যালাইটিস সন্দেহ করে তাঁরা ৫০ জনের রক্ত সংগ্রহ করে এনেছিলেন পরীক্ষার জন্য। কিটের অভাবে সেই রক্তের নমুনাও পড়ে। এই ঘটনায় সংগঠনের চিকিৎসকদের অনেকে ক্ষুব্ধ। এনসেফ্যালাইটিসের রক্ত পরীক্ষার জন্য মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে এক বাক্স কিট রয়েছে। তাতে ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু নতুন কিট না আসা পর্যন্ত হাতের এই কিট নিঃশেষ করতে চাইছেন না তাঁরা। তাই হিসেব করে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার কিট এলে যে সমস্ত নমুনা জমে রয়েছে সেগুলি পরীক্ষার ব্যবস্থা হবে বলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরই একটি সূত্র জানিয়েছে। সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “নমুনা পরীক্ষা প্রতিদিন হচ্ছে। মঙ্গলবার আরও কিট এসে পৌঁছনোর কথা।”

এদিকে এনসেফ্যালাইটিস সন্দেহে সোমবার মালদহ শহরের এক বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে ঋদ্ধিমা মন্ডল নামে ছ’ বছরের এক শিশু কন্যাকে কলকাতায় রেফার করা হয়েছে। ওই নার্সিংহোমের শিশু বিশেষজ্ঞ জিয়াউল হক জানান, তিনদিন ধরে ওই শিশুটি জ্বরে ভুগছে। ক্রমশ শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাঁদের সন্দেহ এনসেফ্যালাইটিস। তাই কলকাতায় রেফার করা হয়েছে। মালদহ শহরের মহানন্দাপল্লির বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক দীপঙ্কর মন্ডল এদিন দুপুরেই তাঁর শিশু কন্যাকে নিয়ে কলকাতা রওনা হন। এক সপ্তাহ আগে চাঁচল দু’নম্বর ব্লকের আলতিপুর গ্রামের জ্বরে আক্রান্ত তিন বছরের ইয়াসমিন পারভিনকেও মালদহ থেকে কলকাতায় রেফার করা হয়েছিল। কলকাতায় রক্ত পরীক্ষা করার পর জানা গিয়েছে ইয়াসমিন পারভিন এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত ! কলকাতায় এসএসকেএমে ওই শিশুর চিকিৎসা চলছে।

এনসেফ্যালাইটিস উপসর্গ নিয়ে ক্রান্তি থেকে আসা রোগী।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক

এদিকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে । গত ২৪ ঘন্টায় জ্বর নিয়ে ৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে । বর্তমানে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫। তবে সোমবার দিনও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রক্ত পরীক্ষা শুরু হয়নি। এব্যাপারে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মহম্মহ আব্দুর রসিদ এদিন বলেছেন, “জ্বরে আক্রান্ত ৩০ জন রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রেহ করা হয়েছে। আরও ২০ জনের রক্ত সংগ্রহ করার পরই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্ত বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্রুইড পরীক্ষা করা হবে। আশা করছি মঙ্গলবারের মধ্যে রক্ত পরীক্ষা হয়ে যাবে।” সুপার আরও জানান, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হলেও এখনও জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। জেলা ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনোজ সাহা জানান, আক্রান্তদের রক্ত দ্রুত পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন