ক্যানসার ঠেকাতে সিগারেটের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব

এক দফা কর বৃদ্ধিতে একেবারে তিন-তিনটি লক্ষ্য ভেদের সুলুকসন্ধান! আসন্ন বাজেটে অতিরিক্ত কর বসিয়ে সিগারেট-পিছু দাম দুই থেকে সাড়ে তিন টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

এক দফা কর বৃদ্ধিতে একেবারে তিন-তিনটি লক্ষ্য ভেদের সুলুকসন্ধান!

Advertisement

আসন্ন বাজেটে অতিরিক্ত কর বসিয়ে সিগারেট-পিছু দাম দুই থেকে সাড়ে তিন টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। নিজের এই প্রস্তাবের পক্ষে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, এতে উপকার মিলবে তিন ভাবে।

• এর ফলে এক দিকে অন্তত ৩৮০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে।

Advertisement

• কমবে ধূমপায়ীর সংখ্যা। পকেটে টান পড়লে ধূমপানে রাশ টানতে বাধ্য হবেন অনেকে। তাতে নাক ও গলার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা কমবে।

• সব মিলিয়ে আখেরে চাপ কমে যাবে দেশের স্বাস্থ্য বাজেটের উপরে।

চিঠির সঙ্গে কিছু পরিসংখ্যানও দিয়েছেন হর্ষবর্ধন। তাতে বলা হয়েছে, সিগারেট-বিড়ির নেশার ফলে প্রতি বছরে ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এবং তাঁদের বেশির ভাগই নাক, মুখ ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব, দেশে গত এক দশকে পুরুষ ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে দু’কোটিরও বেশি। হর্ষবর্ধন মনে করেন, সিগারেটের দাম বাড়িয়ে দিলে ধূমপায়ীর সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাবে। তিনি নাক ও গলার ক্যানসারের চিকিৎসক। দেশে তামাক সেবনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ক্যানসার চিকিৎসকদের একাংশ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। হর্ষবর্ষন সেই আন্দোলনেরও অন্যতম প্রবক্তা।

তামাক-জনিত ক্যানসার রুখতে বিড়ি শিল্পেও নিয়ন্ত্রণ চান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তাঁর ব্যাখ্যা, অসংগঠিত শিল্প হওয়ায় বিড়ি শিল্পকে নানান ছাড় দেওয়া হয়। তাই বিড়ির উৎপাদন এবং বিক্রির উপরে নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না। হর্ষবর্ধনের দাবি, প্রতিটি বিড়ি শিল্পকে তাদের বিড়ি উৎপাদনের মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক। এবং কর বসিয়ে বাড়ানো হোক বিড়ির দামও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, গত বছর তৎকালীন সরকার সিগারেটে ১৯% কর বাড়িয়েছিল। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।

তামাক-বিরোধী প্রচার চালাতে রাজ্যগুলিকেও পাশে চাইছে কেন্দ্র। আগেই প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে পুলিশি সক্রিয়তা বাড়াতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যের পুলিশের ডিজি-দের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু প্রকাশ্যে ধূমপান রুখতে পুলিশি সক্রিয়তা তেমন বাড়েনি। অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে রাজ্যগুলির সহযোগিতা দরকার বলে উল্লেখ করেছেন হর্ষবর্ধন। তিনি লিখেছেন, তামাকের ব্যবহারে লাগাম টানতে রাজ্যগুলির তরফে সিগারেট-বিড়ির উপরে অতিরিক্ত ভ্যাট বা যুক্তমূল্য কর বসানো প্রয়োজন। তামাকের ব্যাপারে সচেতন করতে সব স্তরে প্রচারও চাই।

ক্যানসার-সচেতনায় হর্ষবর্ধনের এই উদ্যোগে ক্যানসার চিকিৎসকেরা উৎসাহিত। মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়ার হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক পঙ্কজ চতুর্বেদী বলেন, “বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে-ভাবে নাক-গলার ক্যানসার বাড়ছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। হর্ষবর্ধন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে সিগারেট-বিড়ির উপরে অতিরিক্ত কর বসিয়ে তামাক জাতীয় পদার্থের বিক্রি কমানোর দাবি জানিয়েছিলাম।”

তামাক সেবন নিয়ন্ত্রণে হর্ষবর্ধনের সক্রিয় ভূমিকায় তাঁরাও অভিভূত বলে জানান কলকাতার ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গত বছর সিগারেটে কর বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। আমরা চাই, মুখ ও গলার ক্যানসারের রোগী কমাতে রাজ্য তামাকজাত সামগ্রীর উপরে কর বাড়িয়ে দিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন