এই সেই বাড়ি।
কোনও সাইনবোর্ড নেই। শুধু মূল ফটকের মাথায় সাইনবোর্ড ঝোলানোর লোহার খাঁচাটুকু পড়ে রয়েছে। ফটক পেরিয়ে তিনতলা বাড়ি। বাড়ির দেওয়াল জুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে বট-অশ্বত্থের শিকড়। ফেটে গিয়েছে দেওয়াল আর ছাদ। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে বাড়িটি। এ ছবি বেলেঘাটার ‘উপেন্দ্রনাথ মুখার্জি মেমোরিয়াল হাসপাতাল’-এর।
বেলেঘাটার সিআইটি মোড়ের কাছেই রয়েছে এই হাসপাতালটি। কিন্তু এটি যে হাসপাতাল তাই জানেন না অধিকাংশ স্থানীয় বাসিন্দা। বাড়ির একতলায় দু’-তিনটি পরিবারের বাস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানালেন, ১৭ বছর ধরে তাঁরা এখানে রয়েছেন। দোতলা এবং তিনতলা বাসযোগ্যই নয়। চুরি হয়ে গিয়েছে দরজা, জানালা, গ্রিল। ভেঙে পড়েছে দেওয়াল। চাঙড় খসে লোহা বেরিয়ে পড়েছে। মেঝেতে স্তূপীকৃত হয়ে আবর্জনা পড়ে আছে। যত্রতত্র মল-মূত্র পড়ে থাকে।
ভিতরে চলছে বসবাস। —নিজস্ব চিত্র
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এক সময়ে ৫০টি শয্যা নিয়ে ‘উপেন্দ্রনাথ মুখার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর পরিচালনায় হাসপাতালটি চলত। ট্রাস্ট খরচ চালাতে না পেরে হাসপাতাল ভবন এবং সংলগ্ন ফাঁকা জমির মালিকানা তৎকালীন রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু সরকারি পরিচালনায় হাসপাতালটি এক দিনও চলেনি বলে অভিযোগ। যদিও এক সময়ে এই হাসপাতালের কর্মী বর্তমানে বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালের এক কর্মী জানালেন, আগে এখানে প্রসব, হার্নিয়া, অ্যাপেন্ডিক্স-সহ নানা অসুখের চিকিৎসা হত। হাসপাতাল হস্তান্তরের সময়ে বাড়িটির কাঠামো ভালই ছিল। ধীরে ধীরে এই পরিণতি।
হাসপাতালের গায়েই তিরিশ বছরের বেশি হরিন্দর রজকের অস্থায়ী দোকান। তিনি জানান, এক সময়ে আই ডি হাসপাতালের কয়েক জন নার্স এখানে থাকতেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পরে এ ভাবেই হাসপাতালটি রয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে কয়েকটি পরিবার বাস করেন। এঁরা এক সময়ে এই হাসপাতালের কর্মী ছিলেন। তাঁদেরই এক জন বললেন, “বিপজ্জনক ভাবে বাড়িটি রয়েছে। হাসপাতাল বাড়ির একতলায় ভবঘুরেরা থাকেন। যা অবস্থা যে কোনও মুহূর্তে বাড়িটি ভেঙে পড়তে পারে।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি বলেন, “‘দ্য উপেন্দ্র মুখার্জি মেমোরিয়াল হসপিটাল অ্যাকুইজিশন অ্যাক্ট ১৯৮২’-এর মাধ্যমে তৎকালীন সরকার হাসপাতালটি অধিগ্রহণ করেছিল। কেন এত বছর ধরে এ ভাবে পড়ে রয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”