এনসফ্যালাইটিস

খামতি আছে, জানাল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল

কোথাও বসতি এলাকা ঘেঁষা শুয়োরের খামার, আবার কোথাও জমা জল মশার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস ঠেকাতে এ সব বহু ক্ষেত্রেই যে খামতি রয়ে গিয়েছে বুধবার তা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের একাংশও। সেই সঙ্গে মশারি টাঙিয়ে ঘুমনো, খিঁচুনি জ্বরে তিন চার দিন ধরে ভুগছে দেখলেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবও রয়েছে বলে প্রতিনিধিদলের একাংশ মনে করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০২:৫১
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।—নিজস্ব চিত্র।

কোথাও বসতি এলাকা ঘেঁষা শুয়োরের খামার, আবার কোথাও জমা জল মশার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস ঠেকাতে এ সব বহু ক্ষেত্রেই যে খামতি রয়ে গিয়েছে বুধবার তা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের একাংশও। সেই সঙ্গে মশারি টাঙিয়ে ঘুমনো, খিঁচুনি জ্বরে তিন চার দিন ধরে ভুগছে দেখলেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবও রয়েছে বলে প্রতিনিধিদলের একাংশ মনে করেন। আর এই অব্যবস্থার ফাঁক গলেই উত্তরবঙ্গে গত চার বছর ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জেই, এইএস। তা ছাড়া রয়েছে প্রতিষেধক টিকাকরণের অভাব। গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলেরই জে জেই টিকাকরণ জরুরি এ দিন তা জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যদের একাংশ।

Advertisement

প্রতিনিধি দলের সদস্য তথা রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট কুলজিৎ সিংহ আনন্দ বলেন, ‘‘রোগ প্রতিরোধে কিছু ক্ষেত্রে খামতি রয়েছে। সে সব দেখা হচ্ছে। বসতি এলাকার কাছ থেকে শুয়োরের খামার সরাতে হবে। জমা জল মশা জন্মাবার উপযুক্ত জায়গা। তাই কোথাও জল জমে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সচেতনতা প্রচারও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সমস্ত বাসিন্দাদের টিকাকারণ করতে হবে।’’ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন কলকাতার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হাইজিন এন্ড পাবলিক কেয়ারের ডিরেক্টর জি.কে পান্ডে, ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক পুষ্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিস কনট্রোলের পতঙ্গবীদ বি.আর থাপার। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মশার লার্ভা, কোথায় কী ধরণের মশা রয়েছে, তার ঘনত্ব-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে এ দিন দুপুর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে ৩ জন এইএস রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এইএস নিয়ে দুই জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঊভয়েই জলপাইগুড়ির মালবাজার ব্লকের বাসিন্দা। এক জন মালবাজারের বাগরাকোটের বাসিন্দা শিবকুমার বাড়ুই (৩১)। এ দিন ভোরে ভর্তি হওয়ার পর তিনি মারা যান। অপর জন মেটেলির খুদিরামপল্লির বাসিন্দা মহম্মদ সাইয়ূম (৫৫)। মঙ্গলবারই তিনি মারা যান। ওই দিন রাতেই আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম পাটকাপাড়ার বাসিন্দা ছাউতি খালকো (৩৩)। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এ বছর জেই, এইএসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫০ জন। তা ছাড়াও জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলা হাসপাতালে অন্তত ২ জন করে মারা গিয়েছেন। গত ১ মাসে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে অন্তত ৯ জনের মতো মারা গিয়েছেন বলে হাসপাতালেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

এ দিন বেলা ১টা নাগাদ প্রতিনিধি দলটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আসেন। সিসিইউ এবং এইএস ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। কোচবিহারের বাসিন্দা এইএস নিয়ে ভর্তি শান্তিরাম সাহার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা জানিয়েছেন বাডির কাছাকাছি শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। চাষের জমিতে জল দাঁড়ায়ে থাকে। একই কথা জানিয়েছেন চ্যাংরাবান্ধার বাসিন্দা জসিমুদ্দিনের পরিবারের লোকেরা। রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খামতির বিষয়ে প্রতিনিধিরা তথ্য নেন। সে সমস্ত নথিভুক্ত করেন। তাঁরা জানান, ফিরে গিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে তাঁরা রিপোর্ট দেবেন। কী ভাবে চিকিৎসা চলছে, কী করণীয়, ওষুধ মিলছে কি না, সমস্ত বিষয়েই তারা তথ্য নিচ্ছেন।

শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকায় জেই এবং এইএস নিয়ে একাধিক বাসিন্দার মৃত্যুর পর পুর এলাকাতে রোগ সংক্রমণ ঠেকাতে উদ্যোগী পুরসভা। এ দিন প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরে প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার এূবং স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে শিলিগুড়ির মাতৃসদনে বৈঠক করেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

শহরে শুয়োর ঘুরে বেড়ানোর কথা স্বীকারও করেন তিনি। অবিলম্বে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। তিনি জানান, শহরের অন্তত ৩০০ টি ফ্লেক্স লাগানো হবে রোগ প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতা প্রচারে। যে সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন তাঁরা বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সঠিক ভাবে প্রচার করছেন কি না তা দেখতে ওয়ার্ড কমিটিগুলিকে দায়ত্ব নিতে বলা হবে। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে সচেতনতা প্রচার চলবে। এ ব্যাপারে চিকিৎসক সংগঠনের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন