চিকিত্‌সক অপ্রতুল, খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র

তিন দশক আগে শয্যা ছিল। ছোটখাটো অপারেশন হত। ছিল প্রসূতিদের জন্য পৃথক বিভাগও। শল্য চিকিত্‌সার প্রয়োজন না হলে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা ছিল। তবে গত দশ বছর যাবত্‌ মালদহের রতুয়ার দেবীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার জন্য আউটডোর খোলা হয় বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। রোগী দেখতে হিমশিম খান এক জন মাত্র চিকিত্‌সক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১২
Share:

ভেঙে পড়ছে ভবন। —নিজস্ব চিত্র।

তিন দশক আগে শয্যা ছিল। ছোটখাটো অপারেশন হত। ছিল প্রসূতিদের জন্য পৃথক বিভাগও। শল্য চিকিত্‌সার প্রয়োজন না হলে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা ছিল।

Advertisement

তবে গত দশ বছর যাবত্‌ মালদহের রতুয়ার দেবীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার জন্য আউটডোর খোলা হয় বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। রোগী দেখতে হিমশিম খান এক জন মাত্র চিকিত্‌সক। এক জন ফার্মাসিস্টও অবশ্য রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মাস ছয়েক আগে একমাত্র নার্স অবসর নেওয়ার পরে আর নতুন নার্স নিয়োগ করা হয়নি। বেহাল পরিষেবার ছবি এখানেই শেষ নয়।

জরাজীর্ণ টিনের ছাদ বেয়ে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে ভিতরে পড়ে। সংস্কারের অভাবে খসে পড়ছে দেওয়ালের পলেস্তারা। রোগীরাই নন, বিপজ্জনক ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে কোনও সময় দুর্ঘটনার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ১৯৪৯ সালে হরিশ্চন্দ্রপুরের জমিদারের দান করা দু’একর জমিতে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উন্নতি তো দূর, ক্রমশ অবনতি হয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা চালু করা-সহ ভবন সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকাবাসী। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ রতুয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যাও।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরনো ভবন সংস্কারের উদ্যোগ হয়েছে। ওখানে নতুন করে প্রসূতি বিভাগ চালু করার ব্যাপারেও পদক্ষেপ করা হয়েছে। সম্প্রতি আরও এক জন চিকিত্‌সক নিয়োগের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ১০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার চেষ্টাও চলছে।”

বেহাল অবস্থা

• একটিও শয্যার ব্যবস্থা নেই।

• রোগী দেখতে হিমশিম খান এক জন মাত্র চিকিত্‌সক।

• নার্সের পদ খালি।

• প্রসূতি বিভাগ বা শল্য চিকিত্‌সার ব্যবস্থা নেই।

• হাসপাতালে উন্নীত করা হবে যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে, তার মধ্যে এটির নাম নেই।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে ১০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। নতুন ভবনও তৈরি হয়েছে। কিন্তু দেবীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সেই তালিকায় না থাকায় সমস্যা রয়ে গিয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে দেবীপুর, জাননগর, তেররসিয়া, কাহালা-সহ ফুলহার নদীর ওপারে বিলাইমারি এলাকা, এমনকী বিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকেও রোগীরা আসেন। বহির্বিভাগে প্রতি দিন গড়ে ২০০-২৫০ রোগী হাজির হন বলে হাসপাতাল সূত্রেই জানা যায়। অথচ চিকিত্‌সককে এক জন।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহির্বিভাগে চিকিত্‌সা করাতে গিয়েও মাঝেমধ্যেই রোগীদের ফিরে যেতে হয়। পরিষেবার অভাবে অনেক রোগীকেই অন্যত্র যেতে হয়। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর আবর্জনায় ভরে থাকে। অবাধে গবাদি পশু বিচরণ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরেই। শৌচাগারও ব্যবহারের অযোগ্য। এলাকার বাসিন্দা দেবব্রত সিংহ, বিজয় সাহারা বলেন, “বিশেষ করে প্রসূতিদের নিয়ে পরিবারের লোকেদের সমস্যায় পড়তে হয়। রাত বিরেতে অনেক সময়েই তাঁদের দূরে নিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। দ্রুত এখানে শয্যা চালু না হলে আন্দোলনে নামব।”

রতুয়া-১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শামিম সম্রাট বলেন, “সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি দ্রুত সমস্যা মিটবে।”

বিধায়ক সমরবাবু বলেন, “সমস্যার কথা স্বাস্থ্য কর্তাদের একাধিক বার জানিয়েম ফল হয়নি। এ বার বিধানসভায় সমস্যার কথা তুলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন