চিকিৎসা নীতি নিয়ে ধন্দ আছে, কবুল সচিবেরই

ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এক জন রোগীর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে বলে ধরা হবে? গ্রামের দিকে এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকের অভাব। সেখানে কি প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের মাধ্যমে ওষুধ বিলি করা যায়? এক জন রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। বাঁচার সম্ভাবনা দুই শতাংশ। বাড়ির লোকজন ওই হাসপাতালের বিপুল খরচ চালাতে না-পেরে তাঁকে কোনও সরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রাখতে চাইছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৪
Share:

• ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এক জন রোগীর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে বলে ধরা হবে?

Advertisement

• গ্রামের দিকে এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকের অভাব। সেখানে কি প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের মাধ্যমে ওষুধ বিলি করা যায়?

• এক জন রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। বাঁচার সম্ভাবনা দুই শতাংশ। বাড়ির লোকজন ওই হাসপাতালের বিপুল খরচ চালাতে না-পেরে তাঁকে কোনও সরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রাখতে চাইছেন। ওই রোগীকে কি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হবে, নাকি তাঁর তুলনায় বাঁচার সম্ভাবনা বেশি, এমন কোনও রোগীকে ভেন্টিলেটরটি দেওয়া হবে?

Advertisement

চিকিৎসা সংক্রান্ত এই ধরনের বেশ কিছু ‘এথিক্যাল’ বা নীতিগত প্রশ্নের সমাধান রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এখনও করে উঠতে পারেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে। মঙ্গলবার ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশন, ব্রিটেনের ‘রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস’ এবং কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতাল আয়োজিত ‘এথিকস ইন মেডিসিন’ বা ‘মেডিসিন নীতি’ শীর্ষক আলোচনাসভায় ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব। সেখানেই চিকিৎসা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের এই ধন্দের কথা জানান তিনি।

আলোচনাসভায় এমন প্রশ্নও ওঠে যে, মেডিক্যাল এথিক্স মেনে চলার জন্য কোনও চিকিৎসককে যদি আলাদা ভাবে পুরস্কৃত করা না-হয়, তা হলে খামোখা তিনি তা পালন করতে যাবেনই বা কেন? এ বিষয়ে কেন ভাবছে না স্বাস্থ্য দফতর?

মলয়বাবু এ ক্ষেত্রে পুরস্কারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে, সহমর্মিতা, মানবিকতা, নম্রতার মতো যে-সব বিষয় চিকিৎসকদের কাছ থেকে আশা করা হয়, সেগুলি মানুষের ‘বেসিক ভ্যালুজ’ বা মৌল গুণাবলির অন্তর্গত। এগুলো শেখানো যায় না বা কারও উপরে আরোপ করা যায় না। ব্যক্তির মধ্যে আপনা থেকেই এই গুণগুলি প্রত্যাশা করা হয় এবং এর অভাব দেখা দিলে পুরো সামাজিক ব্যবস্থাটাই ক্ষয় পেতে থাকে। “তাই যে-সব চিকিৎসক ব্যবহারিক জীবনে এই গুণাবলির অনুশীলন করেন, তাঁদের আলাদা ভাবে পুরস্কৃত করা অপ্রয়োজনীয়,” বলেছেন স্বাস্থ্যসচিব।

ভারতে ডাক্তারি পাঠ্যক্রমে বিষয় হিসেবে ‘মেডিক্যাল এথিক্স’-এর অনুপস্থিতির প্রসঙ্গও ওঠে ওই সভায়। ফার্মাকোলজির পাঠ্যক্রমে বছর দশেক আগে আংশিক ভাবে মেডিক্যাল এথিক্স ঢোকানো হয়েছে। তবে সামগ্রিক ভাবেই চিকিৎসাবিদ্যার পাঠ্যক্রমে হবু ডাক্তারেরা যাতে আরও বেশি করে নীতিবিদ্যার চর্চা করার সুযোগ পান, তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে রায় দিয়েছেন সভায় উপস্থিত চিকিৎসকেরা।

আলোচনাসভায় প্রশ্ন ওঠে, কোনও রোগের চিকিৎসায় চিকিৎসক একক ভাবেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, নাকি রোগীকে রোগ পরিস্থিতি বিস্তারে জানিয়ে তাঁর মতামত নিয়ে চিকিৎসাপন্থা স্থির করবেন?

এ ব্যাপারে বিমানের পাইলট ও যাত্রীর উদাহরণ দেন একাধিক চিকিৎসক। ধরা যাক, মাঝ-আকাশে বিমান খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্কটের মুহূর্তে কী করা উচিত, সেটা কি পাইলট নিজেই ঠিক করবেন, নাকি যাত্রীদের পরামর্শ নেবেন? চিকিৎসকদের একাংশের অভিমত, এখনকার দিনে অধিকাংশ রোগী সচেতন। তাঁরা রোগের বিষয়ে অনেক কিছু জানেন, ইন্টারনেটে পড়াশোনা করেন। তাই তাঁদের সব কিছু জানিয়ে এবং আলোচনা করে চিকিৎসা পদ্ধতি স্থির করা উচিত। চিকিৎসকদের মধ্যে বিরোধী মতাবলম্বীরাও রয়েছেন।

এমন অবস্থায় তিনি নিজে কী করবেন? অন্যদেরই বা কী করতে বলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব?

মলয়বাবু বলেন, “আমি চিকিৎসক নই। তবে আমি প্রথমে রোগের প্রকৃতি সম্পর্কে নিজে খোঁজ নেব। তার পরে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করব। অন্ধ ভাবে চিকিৎসকদের কথা মেনে নেব না।”

ওষুধ রাখার নয়া নির্দেশিকা

প্রসূতি ও শিশুদের কোন ওষুধ কী তাপমাত্রায় রাখতে হবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়ে বুধবার একটি নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। বহু সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঠিক তাপমাত্রায় প্রসূতি ও নবজাতকদের ওষুধ সংরক্ষিত হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ এসেছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “অনেক জায়গায় দেখছি, স্রেফ অজ্ঞতা থেকে ড্রাগ স্টোরের দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট বা নার্স ভুল তাপমাত্রায় ওষুধ রাখছেন। এতে ওষুধের গুণ নষ্ট হচ্ছে, ওষুধ খেলে কাজ হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ওই ওষুধে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।” তাই নতুন নির্দেশিকা। ফ্রিজ বা ঘরের তাপমাত্রা কিংবা গরম ও ঠান্ডা জায়গা বলতে ঠিক কী বোঝায়, ওই নির্দেশিকায় বিস্তারিত ভাবে সবই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন