ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ইংরেজবাজারের ফুলবাড়িয়া গ্রামের ভোঁদল চৌধুরীকে তাঁর বাড়ির লোকেরা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। ১৬ জুন সকাল থেকে ওই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে ওয়ার্ডের কর্ত্যবরত নার্স চিকিৎসক ইন্দ্রনীল রায়কে কলবুক পাঠিয়েছিলেন। একবার নয়, চার বার কলবুক পাঠানোর পরেও ওই চিকিৎসক রোগীকে দেখতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে আসেননি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, কলবুক পাওয়ার পরেও ওই চিকিৎসক নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এদিকে ওই রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করলে, চিকিৎসকের পাশাপাশি ওয়ার্ডের নার্সরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারকেও কলবুক দিয়েছিলেন। তার কিছুক্ষণ পরই ওই রোগীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি কানে আসার পর ক্ষুব্ধ রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ওই চিকিৎসককে পুরসভার অফিসে ডেকে এনে রীতিমতো ধমক দিয়েছিলেন। অভিযুক্ত চিকিৎসক মন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে সেই যাত্রায় রেহাই পেয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকের গাফিলতিতে শুধু ভোঁদল চৌধুরীই নয়, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আকছারই গাফিলতির নানা অভিযোগ উঠছে। কয়েকদিন আগে রোগীর পরিবারের লোকেরা এক চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর করেছিল।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ৬০০ বেডের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে খাতায় কলমে দুই শতাধিক চিকিৎসক রয়েছেন। তার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন ১৫৭ জন। ৪০ জন চিকিৎসক। হাউসস্টাফ ২০ জন।
অথচ বেশিরভাগ চিকিৎসকদের দেখাই পান না রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা। তবে সামান্য কিছু চিকিৎসক এখনও রাতদিন খেটেই চলেছেন। সেই চিকিৎসকেরা জোড়াতালি দিয়ে কোনও রকমে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিষেবা বজায় রেখেছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা থেকে শুরু করে জেলার মন্ত্রী বারবার সতর্ক করার পরেও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশ বদলায়নি। অনেক শিক্ষক চিকিৎসক এখনও অনিয়মিত। অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বরং খারাপ হয়েছে। আগে যে চিকিৎসক সপ্তাহে তিন দিন থাকতেন, সেই চিকিৎসক সপ্তাহে দেড় থেকে দু’দিন হাজিরা দিয়েই মালদহ থেকে বেপাত্তা হয়ে যাচ্ছেন।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মেডিক্যাল কলেজ কলেজের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায় অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। দিনের পর দিন মালদহে না থেকেই ওই শিক্ষক-চিকিৎসকেরা মাসের পরে মাস বেতন তুলে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ শৈবালবাবু বলেন, “আমার যেখানে অভিযোগ জানানোর, আমি সেখানেই অভিযোগ জানিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষক চিকিৎসকদের বেপরোয়া মনোভাবে ক্ষুব্ধ তৃণমূল চিকিৎসক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তার কাছে নালিশ জানান।
মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “রাতারাতি সব পাল্টাতে পারব না। তবে আগে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যে বিপুল পরিমাণে চিকিৎসক শিক্ষকরা হাসপাতালে কাজ না করে জেলার বাইরে বসে মাসের পর মাস বেতন তুলতেন, সেই প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ না হলেও অনেকটা কমেছে।” কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মালদহের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। আমি চেষ্টা করছি মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিষেবা উন্নত করতে।”
প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি তাপস চক্রবর্তী বলেন, “মালদহে মেডিক্যাল কলেজ চালু হওয়ার পরে শুধু মালদহই নয়, আশপাশের জেলার মানুষ আশা করেছিল এখানে উন্নত পরিষেবা মিলবে। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের খামতি নেই, কিন্তু চিকিৎসক থেকে লাভ হয়নি। বেশিরভাগ চিকিৎসক সপ্তাহে দেড় থেকে দু’দিনের বেশি থাকেন না।” তিনি জানান, তাঁরা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তাকে নালিশ করেছেন। কিন্তু তারপরেও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাল ফেরেনি।