চোখ নষ্টে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবি

ছানি কাটাতে গিয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি উঠল। গত ১৬ অগস্ট মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ছানি কাটানো হয় ৫ জনের। তাঁদের মধ্যে ৪ জন বৃদ্ধা এবং এক বৃদ্ধ। সকলেই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী। একটি করে চোখে ছানি কাটানোর দু’দিন পরে বাড়ি চলে যাওয়ার পরে প্রত্যেকের চোখেই সংক্রমণ শুরু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share:

ছানি কাটাতে গিয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি উঠল।

Advertisement

গত ১৬ অগস্ট মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ছানি কাটানো হয় ৫ জনের। তাঁদের মধ্যে ৪ জন বৃদ্ধা এবং এক বৃদ্ধ। সকলেই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী। একটি করে চোখে ছানি কাটানোর দু’দিন পরে বাড়ি চলে যাওয়ার পরে প্রত্যেকের চোখেই সংক্রমণ শুরু হয়। ফের মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের দেখালে তাঁদের দ্রুত শিলিগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের চোখের নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাদের সংক্রমণের তীব্রতা আঁচ করে ছানি কাটানো চোখ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। গত ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই খতেজা খাতুন, আমিরুল ইসলাম, সরুবালা রায় এবং জাবেদা বেওয়ার একটি করে চোখ বাদ দিতে হয়। হামিদা খাতুন নামের এক বৃদ্ধা এখনও শিলিগুড়ির নার্সিংহোমটিতে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবশ্য এখনও চোখ বাদ দিতে হয়নি। চোখ বাদ পড়ার পরেও ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে কেন রাজনৈতিক দলগুলি কোনও আন্দোলন শুরু করছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

খতেজা খাতুন এবং হামেদা খাতুনের বাড়ির লোকজন এ দিন মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতির সঙ্গে দেখা করে দাবি করেন, ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই ঘটনায় যাঁরা দোষী তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও দাবি করেন তাঁরা। জোতির্ময়বাবু জানিয়েছেন, ওই দাবি তিনি ঊর্ধ্বতন মহলে জানাবেন।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবারই জলপাইগুড়ি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধার নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ২ পূরণ শর্মার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ওই কমিটি শুক্রবার মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে যায়। দীর্ঘক্ষণ থাকার পর বিকালে দলটি ফের জলপাইগুড়ি ফিরে যায়।ওই পাঁচ জনের চোখের ছানির অস্ত্রোপচার করেন মালবাজার মহকুমা হাসপাতালের চোখের চিকিৎসক এম এন ঢালি। এ দিন তাঁর সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যেরা। তিনি বলেন, “যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলেছি। নতুন করে কিছু বলতে চাই না।” চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, এম এন ঢালির হাতে গত এক বছরে এই হাসপাতালে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির ছানির অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে এই পাঁচ জন ছাড়া আর কারও চোখে সংক্রমণের অভিযোগ ওঠেনি। ওই মহলের দাবি, যে দিন ওই পাঁচ জনের অস্ত্রোপচার হয়, তার আগের দিন স্বাধীনতা দিবস বলে হাসপাতালের অস্ত্রোপচারের বিভাগটি বন্ধ ছিল। তাই তার পরের দিন যন্ত্রপাতি ঠিক মতো জীবাণুমুক্ত করা হয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

প্রকাশবাবু অবশ্য বলেন, “কেন সংক্রমণ হয়েছিল, তা জানতে পারিনি। ১৬ অগস্ট ছানি কাটার দিনে অস্ত্রোপচারের সময় ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি, ওষুধ সবই পরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সেগুলি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হবে। এ ছাড়া শিলিগুড়িতে ভর্তি হামিদা খাতুন সুস্থ হয়ে ফিরে এলে তাঁকেও ফের পরীক্ষা করে সংক্রমণটি কী ধরনের, তা বোঝার চেষ্টা হবে।”

ওই ৫ রোগীর তিন জনই মালবাজার ব্লকের কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি রাজা শর্মা বলেছেন, “যাদের চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাদের পরবর্তী জীবনের কথা ভেবে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিতে আমরাও সহানুভূতিশীল। প্রয়োজনে প্রশাসনিক স্তরেও আমরা কথা বলব।” ক্ষতিপূরণের দাবি সমর্থন করেছেন সিপিএমের মালবাজার জোনাল সম্পাদক চানু দে-ও। মালবাজার বিজেপি-র টাউন কমিটির নেতা মানিক বৈদ্য বলেন, “আগামী ৭ সেপ্টেম্বর দলের সাংগঠনিক সভা আছে কলকাতায়। সেখান থেকে ফিরেই এ নিয়ে পথে নেমে আন্দোলন হবে।”

শুক্রবার ৭০ বছরের বৃদ্ধা খতেজা খাতুন জানান, চোখ ভাল করতে গিয়ে এমনটা হয়ে যাবে ভাবেনননি। তাঁর ছেলে পেশায় কৃষক খয়রুজ্জামান বলেন, “বাড়িতে আশাকর্মীরা এসে মাকে বুঝিয়ে রাজি করায়। তারপর অ্যাম্বুল্যান্সে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু মায়ের চোখ খারাপ হয়ে যাবে, তা বুঝিনি।” হামিদা খাতুনের পুত্রবধু হামিদা বেওয়া বলেন, “সঠিক তদন্ত করে অপরাধী চিহ্নিত যদি না করা হয়, তা হলে আমরা আন্দোলনে নামতেও প্রস্তুত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন