বহিরাগতকে সহকারী বলে পরিচয় দিয়ে হাসপাতালের অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকেরা যেমন পোশাক পরেন তা পরিয়ে ওটি-তে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক শুভাশিস রঞ্জন মিত্রের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে ওই অভিযোগে স্বাস্থ্য দফতর তোলপাড় হতেই স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি নিয়েছেন শুভাশিসবাবু। ওই রাতেই তিনি কলকাতা চলে যান। বৃহস্পতিবার তা নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অন্দরেই গুঞ্জন উঠেছে। বহিরাগতকে স্বাস্থ্যকর্মীর অ্যাপ্রন পরিয়ে অস্ত্রোপচারের ঘরে প্রবেশ করানোর ঘটনাকে এ দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জরুরি বৈঠকে সকলেই নিন্দা করেছেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা প্রসূন অধিকারী। তা ছাড়া ছিলেন সুপার, ডেপুটি সুপার, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অনুপ রায়, অর্থোপেডিক বিভাগ, ফরেনসিক বিভাগের প্রধান এবং অন্যরা। এ দিন ৪ জনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে ওই কমিটি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে হাসপাতাল সুপারকে রিপোর্ট দেবেন।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার বলেন, “বহিরাগত ব্যক্তিকে শুভাশিসবাবু অ্যাপ্রন পরিয়ে অস্ত্রোপচার কক্ষে ঢুকিয়েছেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ৪ জনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শুভাশিসবাবু জানান, স্ত্রীর টাইফয়েড হয়েছে। সে কারণেই তাঁকে ছুটি নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, “কী ঘটেছে বিস্তারিত লিখিত ভাবে জানাতে হাসপাতালেরই জুনিয়র এক চিকিৎসককে ই-মেল করেছি। শুক্রবার তা সুপারের কাছে জমা পড়বে।”
বহিরাগতকে অস্ত্রোপচারের কক্ষে ঢোকানোর অভিযোগ চিকিৎসক স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। অথচ তাঁকে শো-কজ বা সাময়িক বরখাস্ত কেন করা হয়নি? সুপারের দাবি, “তদন্তের রিপোর্ট পেলেই শো-কজ করা হবে। তবে কোনও অভিযোগ উঠলে চিকিৎসককে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করলে দেখা যায় তিনি ছুটিতে থেকে সেই ক’দিন দিব্যি বেতনের একটি অংশ ভোগ করেন। সে জন্যই ওই সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া হয়নি।”
বেশি দামে রোগিণীর পরিবারকে অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম সরবরাহ করার ঘটনায় দোকানের কর্মী ধৃত নির্মল মণ্ডলকে এ দিন আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁকে ৫ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ প্রতারণার মামলা করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বেশি দামে সরঞ্জাম সরবরাহ করা ছাড়াও সরকারি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে অবৈধ ভাবে ঢোকার অভিযোগও করা হয়েছিল। তা না নিয়ে পুলিশ পরে নিজেদের মতো করে বয়ান লিখিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার। পুলিশ কমিশনার জগ মোহন বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে এ ধরনের অভিযোগ থাকলে বয়ান নথিভুক্ত করানোও যাবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
আদালতে নির্মলবাবুর আইনজীবী অখিল বিশ্বাস জানান, যে সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে, তার গুণমান বিচারে দাম ঠিকই নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সরঞ্জামের ব্যবহার যাতে সঠিক ভাবে হয়, সে ব্যাপারে সাহায্য করতেই চিকিৎসকের অনুমতিতে নিমর্লবাবুকে অস্ত্রোপচারের কক্ষে গিয়েছিলেন। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে তো মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভরাও যান। তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বিধি অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনও বহিরাগত ওই পোশাক পরে ওটিতে ঢুকে সরকারি চিকিৎসককে সাহায্য করতে পারেন না।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি কদমতলার বাসিন্দা ভারতী দাসের কোমরের ভাঙা অংশ ঠিক করতে বুধবার অস্ত্রোপচার করা হয়। ভারতী দেবীর বাড়ির লোকজনই তাঁদের থেকে অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম কেনা বাবদ ১৬ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন। তা নিয়ে হইচই হলে দেখা যায়, অস্ত্রোপচার কক্ষে এমন একজন রয়েছেন, যিনি স্বাস্থ্যকর্মীই নন। তদন্তে দেখা যায়, তিনিই নির্মল মন্ডল। যিনি জনসমক্ষে দাবি করেন, চিকিৎসক শুভাশিসবাবুর অনুমতিতে তিনি সেখানে ছিলেন।