জেনেরিক নাম কই, প্রশ্ন

সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা তা মানছেন না বলে অভিযোগ। অভিযোগের যে সত্যতা রয়েছে, শনিবার তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে এসে হাতেনাতে তার প্রমাণ পেলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ও আয়ুষ দফতরের পরিষদীয় সচিব নির্মল মাজি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৪ ০৭:৫৬
Share:

সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা তা মানছেন না বলে অভিযোগ। অভিযোগের যে সত্যতা রয়েছে, শনিবার তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে এসে হাতেনাতে তার প্রমাণ পেলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ও আয়ুষ দফতরের পরিষদীয় সচিব নির্মল মাজি। এ দিন তমলুক জেলা হাসপাতাল চত্বরে ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান পরিদর্শনে এসেছিলেন নির্মলবাবু। তখনই তিনি দেখেন, প্রেসক্রিপশনে ওষুধের ‘ব্র্যান্ড নেম’ লেখা। পাশেই ছিলেন জেলা হাসপাতালের সুপার ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষুব্ধ নির্মলবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সরকারি হাসপাতালে ওষুধের প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করেছেন। স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকাও দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি এখানে এসে যে দু’টি প্রেসক্রিপশন দেখলাম, সেখানে চিকিৎসকেরা ওষুধের ব্র্যান্ড নাম লিখেছেন।” সুপারের উদ্দেশে নির্মলবাবু বলেন, “এর দায় কিন্তু আপনার উপর বর্তাবে। আপানাকে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

Advertisement

হাতেনাতে অনিয়ম ধরা পড়ে যাওয়ায় আর দ্বিরুক্তি করেননি হাসপাতাল সুপার। অভিযোগ মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ এখনও ওষুধের ব্র্যান্ড নামে প্রেশক্রিপশন করছেন। ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।” সব শুনে বিরক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তিনি বলেন, “সরকারের সুস্পষ্ট নীতিই হল, কোনও ভাবেই ওষুধের ব্র্যান্ড নাম সরকারি ডাক্তারবাবুরা হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারবেন না। এত প্রচারের পরেও যদি কেউ তা করেন তবে তা অপরাধ।” দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

রাজ্যে ৬২টি ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান চালু রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের মত, সেখানে কোথায় কোন চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে কী ওষুধ লিখছেন তা নজরদারির পরিকাঠামো স্বাস্থ্য দফতরের নেই। তাছাড়া, চিকিৎসকদের একাংশের সঙ্গে ওষুধ সংস্থাগুলির সখ্য এবং কমিশন ব্যবস্থা এতটাই পাকা, যে রাতারাতি তা অবলুপ্ত হওয়া মুশকিল। আগামী এক বছরে রাজ্যে ন্যায্যমূল্যের দোকানের সংখ্যা বেড়ে হবে ১১০টি। তখন সমস্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশেরই। তাঁদের মত, গ্রামাঞ্চলের বহু রোগীই এখনও জেনারিক নাম লেখার বিষয়টি জানেন না। ফলে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ড নাম লিখে দিলে তাঁরাও সবসময় প্রতিবাদ করতে পারেন না।

Advertisement

এর আগে কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় সরকারি প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ড নাম লেখার ঘটনা সামনে এসেছে। এমআর বাঙুর, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম বা বারাসতের মতো হাসপাতাল এর মধ্যে অন্যতম। এমআর বাঙুর হাসপাতালে জেনারিক নামে প্রেসক্রিপশন চালু হওয়ার পরে প্রথম-প্রথম বেশ কয়েক জন চিকিৎসক বেনামি হুমকি চিঠিও পেয়েছিলেন যেখানে তাঁদের ওষুধের ব্র্যান্ড নাম লিখতে রীতিমতো নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন