শুশ্রূষায় রোগীর পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।
এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছেন বিশেষজ্ঞদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। সোমবার জলপাইগুড়ি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তাঁরা। আজ মঙ্গলবার দলটির কোচবিহার যাওয়ার কথা। এদিকে রবিবার বিকেল থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে আড়াই ও সাত বছরের দু’টি শিশু রয়েছে। অনস ওঁরাও নামের আড়াই বছরের শিশুটির বাড়ি আলিপুরদুয়ারের মহেশপাড়ায়। সোমবার তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। মৃত ৭ বছরের পিঙ্কি মল্লিক শিলিগুড়ির দুর্গানগরের বাসিন্দা। ওই কিশোরী জেই আক্রান্ত ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাকেও সোমবার এই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মৃতদের মধ্যে অন্য দু’জন বারোবিশার প্রতিমা দেবনাথ( ৪৭) এবং বাগডোগরার কমলপুরের মঙ্গরু ওঁরাও (৫০)।
এই নিয়ে জুলাই মাসে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ৩২ জনের মৃত্যু হল। জানুয়ারি থেকে এই সংখ্যা ৪৫ জন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে এঁদের মধ্যে জেই ২০ জন। অন্য দিকে গত পাঁচ দিনে জেই বা এইএস-এ আক্রান্ত হয়ে আলিপুরদুয়ারে মৃত্যু হল ৭ জনের। সোমবার ভোর ও রবিবার মধ্যরাতে ফের দুজন খিঁচুনি জ্বরে মারা যান। আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে ভাটিবাড়ির রতন আচার্য (৩২) এবং দমনপুর এলাকার সোহাগী বর্মন (৪৫) মারা গিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ১৯ জন রোগী জেই এইএস নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে ৫ জনে জেই। খিঁচুনি জ্বর নিয়ে একটি শিশুকে এ দিন সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়।
মশা বাহিত রোগে আক্রান্ত উত্তরবঙ্গ। খোদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল চত্বরের জঙ্গলেই মশার আঁতুরঘর। ছবি: সন্দীপ পাল।
দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এবং তাঁদের সঙ্গে রাজ্যের আরও দুই জন বিশেষজ্ঞ সহ মোট চার জনের দলটি এ দিন জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে খিঁচুনি জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগীদের দেখেন। দলে ছিলেন কলকাতার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হাইজিন এন্ড পাবলিক হেলথের ডিরেক্টর জি.কে পান্ডে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক পুষ্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট কে.এস আনন্দ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের একজন পতঙ্গবিদ বি.কে থাপার। হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া বিভাগে কনফারেন্স হলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা, হাসপাতালের সুপার পার্থ দে এবং জলপাইগুড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের একটি দল। প্রতিনিধি দলটি আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলা হাসপাতাল এবং কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসবেন। বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে জানাবেন।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলটি হাসপাতালের আইসিসিইউ ইউনিটে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের দেখেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা জি.কে পান্ডে বলেন, “আমরা এনসেফ্যালাইটিস প্রবণ তিনটি জেলা জলপাইগুড়ি, আলিপুরদূয়ার এবং কোচবিহার জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করব। সেই সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেব। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা রয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখলাম। রোগ প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, কী কী সুবিধা রয়েছে দেখা হচ্ছে।” প্রতিনিধি দলের আর একজন সদস্য বি.কে.থাপার পরামর্শ, “জ্বর খিঁচুনি এবং অন্য উপসর্গ থাকলে রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। তাতে মৃত্যুর হার কমবে এবং সর্বোচ্চ চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া যাবে।”