জাল রোধে ড্রাগ কন্ট্রোলের ভূমিকায় প্রশ্ন

প্রসূতিদের দেওয়া হয়, এমন ভেজাল ওষুধ সরবরাহের অভিযোগে কলকাতার এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে হুগলি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিআইবি)। শ্রীরামপুরের এক ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটরের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যবসায়ীকে ধরা হয়। তবে বিষয়টি সামনে আসার পরেই জেলার ড্রাগ কন্ট্রোলের ভূমিকা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। ভেজাল ওষুধের বিষয়টি বাজার ঘুরে তাদেরই দেখার কথা। কিন্তু ওই দফতরের আদৌ নজরদারি নেই বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৯
Share:

প্রসূতিদের দেওয়া হয়, এমন ভেজাল ওষুধ সরবরাহের অভিযোগে কলকাতার এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে হুগলি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিআইবি)। শ্রীরামপুরের এক ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটরের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যবসায়ীকে ধরা হয়। তবে বিষয়টি সামনে আসার পরেই জেলার ড্রাগ কন্ট্রোলের ভূমিকা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। ভেজাল ওষুধের বিষয়টি বাজার ঘুরে তাদেরই দেখার কথা। কিন্তু ওই দফতরের আদৌ নজরদারি নেই বলে অভিযোগ। এমনকী অভিযোগের সারবত্তা প্রমাণ করতেই নিরঞ্জন সাহা নামে শ্রীরামপুরের লেনিন সরণীর ওই ব্যক্তির কয়েক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। ছোটাছুটি করতে হয়েছে বিভিন্ন দফতরে। নিরঞ্জনবাবু জানান, সিঙ্গুরের এক ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে তিনি ‘ডুফাস্টন’ নামে এক ধরণের ট্যাবলেট (ব্যাচ নম্বর বিইডিআর ৪০২৩) কেনেন। ট্যাবলেট প্রসূতিদের দেওয়া হয় গর্ভস্থ শিশুর ওজন বাড়ানোর জন্য। ওই ট্যাবলেট তিনি বিক্রিও করেন।

Advertisement

চলতি বছরের মে মাসে সিঙ্গুরের ওই ডিস্ট্রিবিউটর নিরঞ্জনবাবুর কাছে চিঠি দিয়ে জানান, ওই ওষুধ অবিক্রিত থাকলে তা যেন তিনি ফেরত্‌ দিয়ে দেন। তবে তার কারণ জানানো হয়নি। নিরঞ্জনবাবুর দাবি, এ ব্যাপারে তিনি সিঙ্গুরের ওই ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলেও সদুত্তর মেলেনি। ইতিমধ্যেই তাঁর এক আত্মীয়া চিকিত্‌সকের পরামর্শে একই ওষুধ অন্য একটি দোকান থেকে কিনে খান। ওষুধটি খেয়ে তেমন ফল হয়নি বলে চিকিত্‌সক তাঁকে জানান। তখনই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সন্দেহ হয়। ওষুধের প্যাকেটে প্রস্তুতকারক সংস্থা হিসেবে একটি বহুজাতিক সংস্থার নাম লেখা ছিল। তাদের কাছেও মেল করে বিষয়টি জানতে চান নিরঞ্জনবাবু। ওই কোম্পানি তাঁকে পাল্টা মেলে জানিয়ে দেয়, ওই নামের কোনও ওষুধ তারা তৈরিই করে না। এর পরেই বিষয়টি ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকদের জানান নিরঞ্জনবাবু। কিন্তু ওই দফতর গা করেনি বলে অভিযোগ। তখন শ্রীরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। হুগলির পুলিশ সুপার এবং শ্রীরামপুরের এসডিপিওর কাছেও লিখিত ভাবে অভিযোগ জমা করেন।

পুলিশ সুপার বিষয়টি ডিইবি-র কাছে পাঠান তদন্তের জন্য। এর পরে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে ড্রাগ কন্ট্রোলও। ওই দফতর সূত্রের খবর, তারা বাজার থেকে প্রচুর ‘ডুফাস্টন’ ট্যাবলেট বাজেয়াপ্ত করে। ওই ওষুধ পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ডিইবি তদন্ত শুরু করে মঙ্গলবার কলকাতা থেকে একটি ওষুধ বিক্রেতা সংস্থার মালিককে গ্রেফতার করে। ধৃত নেপাল সাউয়ের বাড়ি কলকাতার প্রেমচন্দ্র বড়াল স্ট্রিটে। বুধবার আদালত ধৃতকে ৭ দিনের পুলিশ হাজতের নির্দেশ দেন। কোথায় ওই ওষুধ তৈরি করা হচ্ছিল তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, আদৌ নিয়ম মেনে সেগুলি তৈরি করা হচ্ছিল না। সহজে বাজার ধরতে প্রস্তুতকারক হিসেবে নামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করা হচ্ছিল। ওই বহুজাতিক সংস্থার তরফে অবশ্য কোথাও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “তদন্ত চলছে। ওই ঘটনায় আরও কারা জড়িত, তা জানার চেষ্টা চলছে।” তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা মনে করছেন, কলকাতাতেই ওই ওষুধ তৈরি হচ্ছিল। গোটা বিষয়টি জানাজানি হতে ওষুধ ব্যবসায়ীদের মধ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, নিরঞ্জনবাবু ওষুধ বিক্রেতা হওয়ায় তিনি গভীরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করেছেন। অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওষুধের গুনগত মান পরীক্ষা, ওষুধের দোকানে ফার্মাসিস্ট আছে কি না, সেখানে ঠিকমতো ওষুধ সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না, বাজার ঘুরে এ সব দেখার দায়িত্ব ড্রাগ কন্ট্রোলের। কিন্তু আদপেই তাদের কোনও নজরদারি নেই বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় ওষুধের দোকান এবং ডিস্ট্রিবিউটর বা হোলসেলারদের তুলনায় ড্রাগ কন্ট্রোলের অফিসারদের সংখ্যা নগন্য। ফলে, তাঁদের পক্ষে যথাযথ নজরদারি করা সম্ভবই নয়। হুগলির এক ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটর বলেন, “ড্রাগ কন্ট্রোলকে চোখে কার্যত দেখা যায় না। হিসেব করলে দেখা যাবে হয়তো চার-পাঁচশো দোকান পিছু এক জন করে অফিসার রয়েছেন।” হুগলির ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকরা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ড্রাগ ইনস্পেক্টর পার্থ দেব কর বলেন, “আপনারা যে বিষয়গুলি জানতে চাইছেন, তার কোনও জবাবই আমরা দিতে পারব না। যা জানার রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলারের থেকে জেনে নিন।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন