টাকা দিয়েও পরিষেবা মেলে না গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে

বহির্বিভাগে চিকিত্‌সককে দেখাতে হলে রোগী প্রতি দিতে হয় ৫ টাকা। তবে সে জন্য রোগীকে আসতে হবে সকাল ৯টা-১২টার মধ্যে। অন্য সময়ে বহির্বিভাগে চিকিত্‌সককে দেখাতে হলে দিতে হয় ১০ টাকা। রোগী ভর্তির জন্য দিতে হয় ৩০ টাকা। চিকিত্‌সক পরিষেবা বাবদ রোগীদের এমনই খরচ করতে হয় উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। তবে বহু গরিব রোগীর পক্ষে এই খরচ দেওয়া সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে হাতুড়েদের শরণাপন্ন হতে হয় তাঁদের।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০১:৪৫
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

বহির্বিভাগে চিকিত্‌সককে দেখাতে হলে রোগী প্রতি দিতে হয় ৫ টাকা। তবে সে জন্য রোগীকে আসতে হবে সকাল ৯টা-১২টার মধ্যে। অন্য সময়ে বহির্বিভাগে চিকিত্‌সককে দেখাতে হলে দিতে হয় ১০ টাকা। রোগী ভর্তির জন্য দিতে হয় ৩০ টাকা। চিকিত্‌সক পরিষেবা বাবদ রোগীদের এমনই খরচ করতে হয় উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। তবে বহু গরিব রোগীর পক্ষে এই খরচ দেওয়া সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে হাতুড়েদের শরণাপন্ন হতে হয় তাঁদের।

Advertisement

জেলা পরিষদের অধীন এই হাসপাতালের চিকিত্‌সা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই রোগী ও রোগীর পরিবার-পরিজনদের। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরেই বন্ধ অস্ত্রোপচার। এ জন্য রোগীদের হয়রান হতে হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। সব থেকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রসূতিদের। কারণ এখানে সিজার হয় না। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সার্জন ও অ্যানাস্থেটিস্ট না থাকায় যন্ত্রপাতি ও পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও অস্ত্রোপচার ও সিজার বন্ধ রয়েছে বহু দিন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি জেলা পরিষদের অধীন হলেও এখানকার পরিষেবা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও মাথাব্যথা নেই। ভাল চিকিত্‌সা পরিষেবার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালটি যাতে জেলা পরিষদের হাত থেকে স্বাস্থ্য দফতরের হাতে যায়, সে জন্য আন্দোলন। রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, অন্য সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগী দেখাতে ২ টাকা দিতে হয়। রোগী ভর্তির জন্য কোনও অর্থ লাগে না। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে চিকিত্‌সক রয়েছেন ৬ জন। তার মধ্যে ২ জন চুক্তিভিত্তিক। স্বাস্থ্য দফতরের কোনও মেডিক্যাল অফিসার এখানে না থাকায় সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই হাসপাতাল। হাসপাতালে নেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক। নেই প্যাথোলজিস্ট। আলট্রা সোনোগ্রাফির ব্যবস্থা নেই। শয্যাসংখ্যা মাত্র ৩০। যা, যে পরিমাণ রোগী আসে তার তুলনায় খুবই নগণ্য। অথচ প্রায় ২ লক্ষ মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। গোবরডাঙা ছাড়াও গাইঘাটা, স্বরূপনগর, হাবরার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এখানে আসেন।

Advertisement

রোগীদের অভিযোগ, চিকিত্‌সক দেখাতে অর্থ দিতে হলেও মেলে না বিনামূল্যে ওষুধপত্র। দেওয়া হয় না রোগীদের খাবারও। চিকিত্‌সা পরিষেবা যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তাতে হাসপাতালটি এখন সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছু নয়। পরিষেবার উন্নতি চেয়ে হাসাপাতালটি স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে বাসিন্দারা হাসপাতালে বহু বার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে বহু বার চিঠি, স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের সময় চিকিত্‌সক না পেয়ে হাসপাতালের গেটে তালা ঝোলানোর ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। কিন্তু বদল হয়নি অবস্থার।

বছর তেরো আগে উপ-সহায়ক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল হিসেবে এটি চালু হয়। কিন্তু নামটুকু ছাড়া বদলায়নি কিছুই। যদিও গোবরডাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এখানে রোগীরা ভাল চিকিত্‌সা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ যাতে জেলা পরিষদের হাত থেকে স্বাস্থ্য দফতর নেয়, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে অনুরোধ করেছি।’’ জেলাপরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের রহিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ থেকে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য দফতরের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরকে তা জানানোও হয়েছে।’’ হাসপাতালটি স্বাস্থ্য দফতর নিজেদের অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় কুমার আচার্য।

এখন স্বাস্থ্য দফতরের হাতে গিয়ে হাসপাতালের চিকিত্‌সা পরিষেবার উন্নতি হয় কি না তারই অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকার মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন