শহরের আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কেন্দ্রটিকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে পুরপ্রধানের সিদ্ধান্তে বিতর্ক দেখা দিয়েছে কাউন্সিলরদের মধ্যেই। সোমবার পুরভবনে বৈঠকের পরে কালনার পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু জানিয়েছিলেন, আইনি পরামর্শ মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র থাকলে এবং ওই সংস্থা পুরসভার সঙ্গে নতুন ভাবে চুক্তি করলে ট্রেড লাইসেন্স দিতে বাধা থাকবে না। কিন্তু মঙ্গলবার পুরপ্রধানের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন তিন কাউন্সিলর। দেবপ্রসাদ বাগ, গোকুলচন্দ্র বাইন এবং বরুণ সিংহ নামে ওই তিন কাউন্সিলরের দাবি, শুধুমাত্র জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতিপত্র থাকলেই লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। নতুন চুক্তির কথা বলা হয়নি।
কালনা শহরে নতুন বাসস্ট্যান্ডের কাছে এসটিকেকে রোডের পাশে পুরসভার ৩৩ শতক জমি জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য নিতে চেয়ে ১৯৯৬ সালে আবেদন জানায় ওই বেসরকারি সংস্থাটি। পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেই মতো চুক্তিও হয়। সিদ্ধান্ত হয়, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন চুক্তি হবে। নতুন চুক্তির সময়ে ভাড়া বাড়বে দশ শতাংশ। সংস্থার দাবি, এই নিয়ম মেনে ২০০১ ও ২০০৬ সালে পুরসভার সঙ্গে তাদের নতুন চুক্তি হয়। তবে বর্তমান বোর্ড লিখিত চুক্তির রাস্তায় না গিয়ে ২০১৪ সালের অগস্ট পর্যন্ত দু’বছরের জন্য দু’লক্ষ টাকা আগাম ভাড়া নিয়ে নেয়। চলতি বছর সংস্থার তরফে ওই জমিতে একটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ হয়। তার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া নিয়েই বিতর্ক শুরু।
এ দিন তৃণমূল কাউন্সিলর গোকুলবাবু জানান, “সংস্থাটি কালনায় কেন্দ্র গড়লে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। অথচ পুপ্রধান বিষয়টি জটিল করে তুলেছেন।” পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলার বরুণ সিংহও জানান, সংস্থাটি ইতিমধ্যে কালনা ছেড়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। পুরসভার উচিত সাধারণ মানুষের স্বার্থে সহযোগিতা করা। তবে পুরপ্রধানের দাবি, ওই বৈঠকে পুরসভার সঙ্গে চুক্তি এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি দুটি বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি ওই কেন্দ্রের সম্পাদককে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েও দেওয়া হবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হয়েছে কালনা আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মলয় পাঁজার। এ দিন মলয়বাবু বলেন, “আমি পুরসভাকে জানিয়েছি জেলা স্বাস্থ্য দফতর অনুমতি দিলে ট্রেড লাইসেন্স দিতে আইনি বাধা নেই। পাশাপাশি পুরসভাকে নতুন চুক্তি করারও পরামর্শ দিয়েছি।” তবে চুক্তিটি বাধ্যতামূলক নয় বলেও মলয়বাবুর দাবি। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গ গোস্বামীরও দাবি, যেহেতু পুরসভার সঙ্গে আগে চুক্তি ছিল এবং বর্তমানে যেহেতু ব্যবসার ধরণ বদলাচ্ছে সেহেতু পুরসভার উচিত নতুন চুক্তি করা।
তবে ওই বেসরকারি সংস্থার সম্পাদক সুশীল মিশ্রের দাবি, “পুরসভা কী পাঠায় তা দেখে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা চুক্তির মধ্যেই রয়েছি। নতুন চুক্তিতে আমাদের সায় নেই।”