ডাক্তারের ঘাটতি পূরণে অবসর পঁয়ষট্টিতে

বাষট্টি থেকে পঁয়ষট্টি। পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজগুলোয় শিক্ষক-চিকিৎসকদের অবসরের বয়স এ ভাবে তিন বছর বাড়িয়ে দিল রাজ্য সরকার। লক্ষ্য, রাজ্যে শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণ। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের অ-শিক্ষক চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে দু’বছর বাড়িয়ে ৬২ করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০৩:০৫
Share:

বাষট্টি থেকে পঁয়ষট্টি। পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজগুলোয় শিক্ষক-চিকিৎসকদের অবসরের বয়স এ ভাবে তিন বছর বাড়িয়ে দিল রাজ্য সরকার। লক্ষ্য, রাজ্যে শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণ। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের অ-শিক্ষক চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে দু’বছর বাড়িয়ে ৬২ করা হচ্ছে।

Advertisement

সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “মেডিক্যালে আসন বেড়েছে। অথচ সে তুলনায় শিক্ষক নেই। গত তিন বছরে রাজ্যে আইসিসিইউ, সিসিইউ, এসএনসিইউয়ের সংখ্যাও অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা বেড়েছে দশ হাজারেরও বেশি। সেই অনুপাতে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়েনি। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এই সিদ্ধান্ত।”

স্বাস্থ্য দফতরের খবর: শিক্ষক-চিকিৎসকের আকালের কথা মাথায় রেখে প্রথমে তাঁদের অবসরের বয়স ৬২ থেকে এক লাফে ৬৮-তে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু চাকরির মেয়াদ এক ধাক্কায় ছ’বছর বাড়ানোয় আপত্তি তোলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। উপরন্তু প্রশ্ন ওঠে, পঁয়ষট্টি পেরিয়েও মেডিক্যাল শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় যুক্ত থাকলে পদের প্রতি কতটা সুবিচার করা যাবে?

Advertisement

এই প্রেক্ষাপটে সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হয়, ওঁদের অবসরের বয়সসীমা হবে ৬৫ বছর। সেই সিদ্ধান্ত এ দিন মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। যার পিছনে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র চাপ সর্বাধিক প্রভাব ফেলেছে বলে স্বীকার করছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তাদের অনেকে। তাঁরা জানিয়েছেন, এমসিআই প্রতি বার পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে এসে চিকিৎসকের সঙ্কট নিয়ে শুধু যে প্রশ্ন তুলেছে তা-ই নয়, পরিকাঠামোয় ঘাটতির যুক্তিতে হরেক মেডিক্যাল কলেজে মোট সাড়ে সাতশো আসন ছাঁটাইয়ের সুপারিশও করেছে। এমতাবস্থায় সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার মূল স্তম্ভটিকে পোক্ত করতে হলে শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

এবং তা করতে গেলে অবসরের বয়স না-বাড়িয়ে অন্য পথ যে আপাতত নেই, তা কবুল করতে দ্বিধা করছেন না স্বাস্থ্য-কর্তারা। “শিক্ষক না-থাকায় বহু মেডিক্যাল কলেজে দিনের পর দিন ক্লাস হয় না। পঠনপাঠনের মান নিয়ে বিভিন্ন মহল সন্দিহান। মেডিক্যালে বেশ কিছু আসন কমে যাওয়ার খাঁড়াও ঝুলছে আমাদের মাথায়।” বলছেন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর আশা, সরকারের এ দিনের সিদ্ধান্তটি এমসিআইয়ের মনোভাবকে কিছুটা নরম করতে সাহায্য করবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ফি মাসে অন্তত চার জন প্রফেসর অবসর নিচ্ছেন। অর্থাৎ বছরে ৪৮ জন। আপাতত এটা ঠেকানো গেলেই অনেকটা সুরাহা হবে।”

প্রসঙ্গত, সুশান্তবাবুর নিজের চাকরির মেয়াদ ফুরনোর কথা ছিল আগামী মাসে। নতুন সিদ্ধান্তের আওতায় তিনিও পড়ছেন। অধিকর্তা জানিয়েছেন, শুধু অবসরের বয়সবৃদ্ধি নয়, অবসরপ্রাপ্তদের ফের নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভেবে দেখা হচ্ছে, সরকারি ডাক্তারের অভাব মেটাতে আর কী কী করা যায়। তবে সরকারের এ হেন পদক্ষেপ সম্পর্কে চিকিৎসক মহলের একাংশের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষও দানা বেঁধেছে। কী রকম?

এই মহলের দাবি: নতুন পদ তৈরি না-করে নিছক অবসরের বয়স বাড়ালে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, তাতে পদোন্নতির প্রক্রিয়া ধাক্কা খাবে, যাতে পরবর্তী ধাপের শিক্ষক-চিকিৎসকেরা হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। উদাহরণও দিচ্ছেন তাঁরা। “বর্তমানে কোনও মেডিক্যাল কলেজের কোনও বিভাগীয় প্রধান পদে রয়েছেন যিনি, নতুন সিদ্ধান্তক্রমে তাঁর অবসরের সময় তিন বছর পিছিয়ে যাচ্ছে। ওঁর পরে যাঁর পদটিতে বসার কথা ছিল, তিনি কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়তেই পারেন। উনি কাজে আগ্রহ হারাবেন না, তার গ্যারান্টিই বা কোথায়?” প্রশ্ন তুলছে সরকারি ডাক্তারদের এই মহল। সরকারের কী বক্তব্য? স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশ্বাস, ব্যাপারটা তাঁদেরও মাথায় রয়েছে। এ নিয়ে পরের ধাপে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষক-চিকিৎসকদের পাশাপাশি এ দিন সরকারি হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসকদের অবসরের বয়স বাড়ানো হয়েছে দু’বছর। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্তবাবু জানান, গত ক’মাসে স্বাস্থ্য দফতর ধাপে ধাপে বেশ কিছু চিকিৎসক নিয়োগ করলেও মোট শূন্য পদের খুব কমই পূরণ করা গিয়েছে। এ দিকে বিজ্ঞাপন দিয়েও যোগ্য ডাক্তার মিলছে না। বিভিন্ন হাসপাতালের ইমার্জেন্সি-সহ নানা বিভাগে ডাক্তার বাড়ন্ত, পরিষেবায় গাফিলতিরও বিস্তর অভিযোগ আসছে নিত্যদিন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু একটা বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি ছিল। সেই ‘বিকল্প’ই হল সাধারণ চিকিৎসকদের অবসরের বয়সবৃদ্ধি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ দিন বলেন, “রাজ্যে নতুন চল্লিশটি মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। কোথাও টেন্ডার হয়েছে, কোথাও পরের ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার না-থাকলে কোনওটাই সুষ্ঠু ভাবে করা যাবে না। তাই এই সিদ্ধান্ত।” এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতি ঠিক কত? সরকারি হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসকই বা কত কম?

এর জবাব অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন