ডেঙ্গির জীবাণু শরীরে, প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রয়াত

দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারে ভুগছিলেন। চিকিৎসা করে অনেকটা সুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলে শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়ে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমে মারা যান শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর বলরাম নাথ (৭৫)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

বলরাম নাথের মরদেহে শ্রদ্ধার্ঘ্য।—নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারে ভুগছিলেন। চিকিৎসা করে অনেকটা সুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলে শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়ে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমে মারা যান শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর বলরাম নাথ (৭৫)। বুধবার শিলিগুড়ির কিরণচন্দ্র শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পুরসভাতেও এ দিন তাঁর মরদেহ নিয়ে গেলে আধিকারিক-কর্মীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান। তবে তিনি যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন সে খবর পুর কর্তৃপক্ষ এ দিন বিকেল পর্যন্ত জানেন না। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছেও কোনও খবর নেই।

Advertisement

গত বছর ডেঙ্গিতে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায়। কার্যত ডেঙ্গি ত্রাসের সৃষ্টি করে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আগাম ব্যবস্থা নিতে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর একে অপরকে দোষারোপও করে। এ বছর ডেঙ্গি প্রতিরোধে তাই আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে তখন থেকেই। অথচ স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর কর্তৃপক্ষ ওই রোগ সংক্রমণ নিয়ে কতটা উদাসীন বলরামবাবুর রোগ সংক্রমণ নিয়ে কোনও তথ্য তাদের কাছে না থাকায় তা স্পষ্ট বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

দার্জিলিঙের মুখা স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “এখনও এ ব্যাপারে কোনও তথ্য পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখব।” নিয়ম মাফিক নার্সিংহোমে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বা এনসেফ্যালাইটিসের মতো রোগ সংক্রমণে কেউ আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পুরসভাকে তা জানাতে হয়। তা ছাড়া রক্তের নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেই মতো স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভার কাছে সেই তথ্য পৌঁছে যাওয়ার কথা। রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ অক্টোবর সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তাঁর ডেঙ্গি ধরা পরে। ১৮ অক্টোবর রাতে প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমে তাকে আনা হয়। ডেঙ্গির জীবাণু মেলায় সেখান থেকে রক্তের নমুনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে সেই রিপোর্ট এখনও হাতে পাননি পরিবারের লোকেরা।

Advertisement

বলরামবাবুর ছেলে সঞ্জীববাবু বলেন, “বাবার পিঠে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল ২০০১ সালে। চিকিৎসা করা হয়। দুটো কেমো নিয়েছিলেন। গত ২১ অক্টোবর তৃতীয় কেমো নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে ডেঙ্গিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই নির্ধারিত সময়ে কেমো নেওয়া সম্ভব হয়নি।” পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “বলরামবাবুর ডেঙ্গি হওয়ার বিষয়টি জানা নেই। কেউ বলেননি।” এ দিন বলরামবাবুর বাড়ির আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার করতে, ব্লিচিং ছড়াতে পুরকর্মীদের কাউকে তাই পাঠানোও হয়নি।

এ দিন প্রয়াত সিপিএম নেতা বলরামবাবুকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে যান দলের জেলা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার, প্রাক্তন কাউন্সিলর মুন্সি নুরুল ইসলাম, মুকুল সেনগুপ্ত-সহ অন্যান্যরা অনেকেই। গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকাররা। শ্মশানে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যান শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য কলকাতায় রয়েছেন। তিনি শোক প্রকাশ করেন। দার্জিলিং জেলা সিপিএম সূত্রেই জানা গিয়েছে, আশির দশকের শুরুতে বলরামবাবু ওই এলাকা থেকে দলের টিকিটে জিতে পঞ্চায়েত সদস্য হন। পরে মাটিগাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে ওই এলাকা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি কাউন্সিলর ছিলেন। দলের উদ্বালস্তু আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন