ভারতে ক্যানসারে ম়ৃত্যুর হার ক্রমেই উদ্বেগ বাড়িয়ে চলেছে। অন্যান্য ক্যানসারের চেয়ে প্রাণহানি বেশি হচ্ছে মাথা ও গলার ক্যানসারে। তার মধ্যে আবার সব থেকে বিপজ্জনক মুখের ক্যানসার। সারা দেশে প্রতি বছর মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত অজস্র পুরুষ-নারীর খোঁজ মেলে। এবং তাঁদের অধিকাংশেরই মৃত্যু হয় আক্রান্ত হওয়ার বছরখানেকের মাথায়। এমনটাই জানাচ্ছেন টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।
এই নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই ২৭ জুলাই বিশ্ব জুড়ে মাথা ও গলার ক্যানসার দিবস পালনের প্রস্তাব দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হেড অ্যান্ড নেক অঙ্কোলজি সোসাইটিজ। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গিয়েছে, মুখের ক্যানসারের ৯০ শতাংশই হয় মদ, তামাক (সিগারেট, বিড়ি, গুটখা-সহ), সুপারি থেকে। ওই সব উৎস থেকে সম্ভাব্য মারণ ক্যানসারের মোকাবিলার পথ খুব যে দুরূহ, তা নয়। এবং মোকাবিলার অদ্বিতীয় পথ তামাক বর্জন।
তামাকু সেবনের অপকারিতা নিয়ে বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেট, গুটখা-পানমশলার মোড়ক, সংবাদপত্র, প্রচারপত্র, টিভি-সিনেমার পর্দায় লাগাতার প্রচার চালু আছে। কিন্তু তাতে কাজ কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ বাড়াচ্ছে ক্যানসার রোগীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা। সচিত্র সতর্কতা সত্ত্বেও সিগারেট-বিড়ি-গুটখার বিক্রির উজ্জ্বল রেখাচিত্র চিন্তা বাড়িয়ে চলেছে। তামাক কেনাবেচার বিধিনিষেধ নিয়মমাফিক আরোপ করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার রূপায়ণে সরকারি উদ্যোগ প্রশ্নাতীত নয়। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কমবয়সিরা সহজেই নাগালে পেয়ে যাচ্ছে বিড়ি-সিগারেট-গুটখা।
এই অবস্থায় তামাক-বিরোধিতায় আক্রান্তদেরই হাতিয়ার করেছে বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান। ‘ভয়েস অব টোব্যাকো ভিকটিম’ নামে এই প্রচার মূলত তামাকঘটিত রোগে আক্রান্তদের প্রচারের মুখ করে সচেতনতা বৃদ্ধির এক নিবিড় প্রচেষ্টা। পরীক্ষামূলক এই প্রচার শুরু হয় ২০০৮ সালে। প্রশ্ন উঠছে, তামাকজাত দ্রব্য তৈরি ও বিক্রি, দুইয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সর্বত্র রমরমিয়ে চলছে কেনাবেচা। তা হলে কতটা ফলপ্রসূ হবে এই প্রচার?
আশা হারাতে বারণ করছে এবং চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আবেদন জানাচ্ছে ‘ভয়েস অব টোবাকো ভিকটিম’। তারা জানাচ্ছে, গত বছরের এক সমীক্ষায় তামাকসেবীদের বড় একটি অংশ স্বীকার করেছেন, নিষেধাজ্ঞার পরে তাঁদের নেশায় অল্প হলেও টান পড়েছে। আক্রান্তদের মুখোমুখি দেখে, তাঁদের কথা জানার পরে নেশা ছাড়ার পথে পা বাড়িয়েছেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই এই শিবিরে যোগ দিয়েছেন ৬২০ জন ক্যানসার রোগী এবং ৩০২ জন চিকিত্সক। সমাজের সর্বস্তরের সহযোগিতা আশা করছেন উদ্যোক্তারা। স্বপ্ন দেখছেন তামাকমুক্ত পৃথিবীর।