অতি সংক্রমণের পরে পেরিয়েছে কুড়ি বছর। কাগজে-কলমে টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত বর্ধমান জেলা থেকে রোগটা পুুরোপুরি পাততাড়ি গুটোয়নি। মাঝে-মধ্যে তার হানাদারিতে প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত হতে হয়েছে ও হচ্ছে। অভিযোগ, প্রতিরোধের আয়োজন সম্পর্কে স্বাস্থ্য-কর্তাদেরই সম্যক ধারণা নেই।
জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ও তীব্র এনসেফ্যালাইটিস-উপসর্গ (অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোম, সংক্ষেপে এইএস) উত্তরবঙ্গে মারাত্মক চেহারা নেওয়ায় রাজ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তখনই দেখা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম এনসেফ্যালাইটিস-প্রবণ জেলা বর্ধমান সম্পূর্ণ রোগমুক্ত নয়। সরকারি হিসেব বলছে, গত দু’বছরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৭ জন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরেও সেখানে রক্ত ও সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) পরীক্ষায় এক জনের দেহে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু ধরা পড়েছিল। তাঁর বাড়ি অবশ্য বীরভূমে। তাঁকে শেষমেশ বাঁচানো যায়নি।
কারও রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস থাকার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আক্রান্ত যেখানে রয়েছেন বা যেখানে গিয়ে জ্বর বাধিয়েছেন অথবা ওই দু’জায়গাতেই শুয়োর (জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ভাইরাস যার শরীরে বংশবৃদ্ধি করে) ও কিউলেক্স বিশনোই মশা (যার কামড় মারফত জীবাণু রক্তে ঢোকে) রয়েছে কি না। কার ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে কি? সদুত্তর নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য প্রতিটি হাসপাতালে নির্দেশিকা পাঠিয়ে বলেছে, জ্বরে নিয়ে ভর্তি রোগীর ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করাতে হবে। ম্যালেরিয়া ধরা না-পড়লে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস যাচাই করতে নমুনা পাঠাতে হবে বর্ধমান মেডিক্যালে।
বর্ধমান মেডিক্যাল সূত্রের খবর, ২০১২-য় জেলার ৪২ জন এইএস-রোগী ভর্তি হন। ২০১৩-য় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩। এ বছর গত কুড়ি দিনেই অন্তত ৬৪ জন রোগী এসেছেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, রক্ত পরীক্ষায় কারও জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ধরা পড়েনি। তা হলে ওঁদের কী হয়েছে?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের ব্যাখ্যা, ৬৪ জনের প্রায় সকলেই গলসি-১ ও ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা। সালালপুর, গোহগ্রাম, সুন্দরপুর, পুরাতনগ্রাম, শিররাই, কুলগোড়িয়া গ্রামে অজানা জ্বরের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। হাসপাতাল-সূত্রে খবর, গত ১ অগস্ট সনাতন লায়েক নামে এক ৪৫ বছরের ব্যক্তি এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মারা যান। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে ‘মেনিঙ্গো এনসেফ্যালাইটিস।’ তিনি কালনার বাসিন্দা। জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের (এইএস) সঙ্গে মেনিঙ্গো এনসেফ্যালাইটিসের ফারাক কী? বর্ধমান মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, জীবাণু-বিশেষজ্ঞ বিজয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোম বলতে বোঝায় কয়েকটি রোগের সম্মিলিত উপসর্গ। জ্বর, খিঁচুনি, ভুল বকা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া। ওই রোগীদের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস মিলতে পারে। মেনিঙ্গো এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলতে পারে।”
জেলার উপ স্বাস্থ্য-আধিকারিক-২ দ্বৈপায়ন হালদার এ দিন বলেন, “নজর রাখছি। জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে কেউ আক্রান্ত হলেই তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হবে।” জেলার শুধুমাত্র ওই সরকারি হাসপাতালেই এইএস পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।