না এসেও বেতন নেওয়ায় চার চিকিৎসককে শো-কজ মেডিক্যালে

দীর্ঘদিন ধরে কাজে না-আসা, অনুপস্থিত থেকে মাসের পর মাস বেতন নেওয়ার ঘটনায় আরও ৪ জনকে শোকজ করেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব তা জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৪
Share:

দীর্ঘদিন ধরে কাজে না-আসা, অনুপস্থিত থেকে মাসের পর মাস বেতন নেওয়ার ঘটনায় আরও ৪ জনকে শোকজ করেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব তা জানিয়েছেন। কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই চার জন হলেন অ্যানাটমি বিভাগের অনূসূয়া ঘোষ, শুভ্রময় চৌধুরী, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অদিতি আয়কত এবং দেবাশিস বিশ্বাস। আগে আরও ৩ জনকে শোকজ করা হয়েছিল। তাঁরা হলেন অ্যানাস্থেসিওলজি বিভাগের তীর্থ সাহু, ইউরোলজি বিভাগের তাপস মৈত্র এবং আরএস কানাগলি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাত জনকে শোকজ করা হল। গত ১৩ অগস্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের ওই অনিয়ম নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের কাছ থেকে স্টেটাস রিপোর্ট চাওয়া হয়। গত ৬ মাসের ওই স্টেটাস রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরেও অনেক দফতর স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। তা নিয়ে এ দিনের বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মন্ত্রী গৌতম দেব।

Advertisement

তা ছাড়া, ৪টি বিভাগ এ দিন বৈঠকের আগে পর্যন্ত স্টেটাস রিপোর্ট দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। তার মধ্যে রয়েছে নিউরোমেডিসিন বিভাগ, ইএনটি বিভাগ, শল্য বিভাগ এবং রেডিওলজি বিভাগ। নিউরো মেডিসিন এবং ইএনটি বিভাগের প্রধানরা এ দিন বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন না। কেন তারা বৈঠকে আসেননি এবং স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেননি তা তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হবে। শল্য বিভাগের প্রধান গৌতম দাসকে এ দিন বৈঠকে ভর্ৎসনাও করেন মন্ত্রী। গৌতমবাবু বলেন, “যাঁরা এখনও স্টেটাস রিপোর্ট দেননি, তাঁদের কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া হবে। এ দিন বৈঠকে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছে স্টেটাস রিপোর্টগুলি ৩ জনের কমিটি খতিয়ে দেখবেন। তাঁরা রিপোর্ট দিলে কর্তৃপক্ষকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হবে। যে সমস্ত অভিযোগ রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে কী করা হতে পারে তা সুপারিশ করে স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হবে।”

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসকদের একাংশ হাসপাতালে আসছেন না বলে অভিযোগ। অনেকে মাসের পর মাস না এসে বেতন নিয়েছেন। সাসপেন্ড হওয়া অধ্যক্ষ অনুপ রায়কে সে সব নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে অনেকেই জানিয়েছিলেন। এ দিন বৈঠকে তাঁরা তা জানিয়েছেন। অথচ প্রাক্তন ওই অধ্যক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি। এমনকী কলেজের পরিচালন কমিটির বৈঠক বা রোগী কলাণ সমিতির বৈঠকেও তিনি সে সব ব্যাপারে কখনও কিছু বলেননি বলে মন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। মন্ত্রীর অভিযোগ, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী যে দিশা নিয়ে এগোচ্ছেন, তাঁকে নষ্ট করে দিতে চেয়েছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ। তিনি নিজেও বেশিরভাগ সময় কলকাতায় থাকতেন। জেনে বুঝে, সচেতন ভাবেই তিনি সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করতে চেয়েছেন। তাতে পড়ুয়াদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে আজকের বৈঠকের রিপোর্ট স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হবে।” সাসপেন্ডে থাকা অধ্যক্ষ অনুপবাবু বলেন, “এ সব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।”

Advertisement

মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, অ্যানাটমি বিভাগের যে দুই চিকিৎসককে শোকজ করা হয়েছে, তাঁরা বছর খানেক কলেজে আসছেন না। অদিতি দেবীকে আগেও শোকজ করা হয়েছিল। তিনি অবৈধ ভাবে ছুটি নিয়ে রয়েছেন। তাঁর বেতনও বন্ধ রয়েছে। দেবাশিসবাবু মাস ছয়েক আগে ইস্তফা দিতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেননি। তার পর থেকেই তিনি আসছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কর্তৃপক্ষ। সে কারণেই তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। আগে যাদের শোকজ করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে তাপসবাবু গত বছর অক্টোবর থেকে কাজে আসছেন না বলে অভিযোগ ছিল। তিনি এ বছর এপ্রিল মাস পর্যন্ত বেতন পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তাপসবাবু জানিয়েছিলেন চাকরি জীবনে তাঁর অনেক ছুটি পাওনা রয়েছে। তা ছাড়া তাঁর সার্ভিস বুক দফতর থেকে হারিয়ে গিয়েছে। বারবার আবেদন নিবেদন করলেও সমস্যা মেটেনি। তীর্থবাবুও গত বছর জুলাই মাস থেকে আসছেন না। আরএস কানাগলি মার্চ মাস থেকে অবৈধ ভাবে ছুটিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ। নিয়মিত কাজে না আসার অভিযোগ উঠেছিল শল্য বিভাগ-সহ কয়েকটি বিভাগে একাধিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। তাঁদের এখনও শোকজ করা হয়নি কেন তা খতিয়ে দেখা হবে জানান মন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন