সৌজন্যে ন্যায্য মূল্যের দোকান

নলজাতক এ বার সরকারি ব্যবস্থায়

বহু চেষ্টাতেও সন্তান আসছে না। সরকারি হাসপাতালে স্ত্রী-রোগ বিভাগের ডাক্তারবাবুরা নানা ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও ফল হচ্ছে না। শেষ ভরসা হিসেবে আইভিএফ পদ্ধতি, অর্থাৎ টেস্ট-টিউব বেবির কথা বলেছেন অনেকেই। কিন্তু সেটা কী ভাবে সম্ভব? নিম্নবিত্ত দম্পতিরা কী ভাবে জোগাড় করবেন লক্ষাধিক টাকা? অগত্যা সন্তানহীনতাকে ভাগ্য বলে মেনে নিয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৪
Share:

বহু চেষ্টাতেও সন্তান আসছে না। সরকারি হাসপাতালে স্ত্রী-রোগ বিভাগের ডাক্তারবাবুরা নানা ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও ফল হচ্ছে না। শেষ ভরসা হিসেবে আইভিএফ পদ্ধতি, অর্থাৎ টেস্ট-টিউব বেবির কথা বলেছেন অনেকেই। কিন্তু সেটা কী ভাবে সম্ভব? নিম্নবিত্ত দম্পতিরা কী ভাবে জোগাড় করবেন লক্ষাধিক টাকা? অগত্যা সন্তানহীনতাকে ভাগ্য বলে মেনে নিয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই।

Advertisement

এ বার ছবিটা বদলাতে চলেছে। সরকারি হাসপাতালে নলজাতকের জন্মের পরিকাঠামো চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। বেসরকারি কেন্দ্রের চার ভাগের এক ভাগ বা তারও কম খরচে এই পরিষেবা দেওয়া হবে। এর সূচনা হিসেবে এসএসকেএম হাসপাতালে রাজ্যের বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু চিকিৎসা নয়, বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার বিশেষ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা হবে ওই কেন্দ্রে। বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এক স্ত্রী-রোগ চিকিৎসককে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।

সরকারি হাসপাতালে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার পৃথক পরিকাঠামো নেই। বিমা সংস্থাগুলিও এই চিকিৎসার কোনও খরচ দেয় না। ফলে সন্তানলাভের আশায় ঘটি-বাটি বিক্রি করেও বহু মানুষ বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে সরকারি পরিকাঠামোয় বন্ধ্যত্ব চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছিল বহু দিন ধরেই। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান দিল্লির এইমস, পিজিআই চণ্ডীগড় বা চেন্নাইয়ের ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজে যে টাকায় আইভিএফ চিকিৎসা হয়, তার চেয়েও অনেক কম খরচে এ রাজ্যে ওই পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করা হোক।

Advertisement

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সরকারি হাসপাতালে কাজে লাগানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল। এসএসকেএমের ওই উৎকর্ষকেন্দ্রের জন্য গৌতম খাস্তগীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “স্ত্রী-রোগ চিকিৎসার পরিকাঠামো ঢেলে সাজার কথা ভাবা হয়েছে। এই উৎকর্ষকেন্দ্রে চালু হলে বহু আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি মানুষের নাগালে আসবে।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে একটি মডেলের প্রস্তাব রেখেছেন গৌতমবাবু। এক শীর্ষ কর্তা জানান, মূলত ওষুধের জন্যই প্রচুর খরচ হয়ে যায়। ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি ওষুধের ক্ষেত্রে প্রচুর লাভ রাখে। তাদের কাছ থেকে অনেক কম খরচে ওষুধ নিয়ে ন্যায্যমূল্যের দোকানের মাধ্যমে তা বিক্রির ব্যবস্থা হবে। ফলে এইমস-এ যেখানে এই চিকিৎসার খরচ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়, এ রাজ্যের ক্ষেত্রে সেটাই ২৫-৩০ হাজারে করা যাবে।

প্রশ্ন উঠেছে, ওষুধ সংস্থাগুলি তাতে রাজি হবে কেন? গৌতমবাবুর বক্তব্য, “এতে ওষুধ সংস্থার লাভের কোনও ঘাটতি হবে না। কারণ সরকারি পরিকাঠামোয় এই চিকিৎসা চালু হলে রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়বে। তাই ওষুধের চাহিদাও থাকবে বেশি। সে ক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্যের দোকানে লাভের অঙ্ক কমিয়ে ওষুধ দিয়েও আখেরে তাদের লাভের পরিমাণ ঠিকই থাকবে। একেবারে নিম্নবিত্ত মানুষের কাছেও যাতে এই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটাই মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য।”

এরই প্রথম ধাপ হিসেবে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এসএসকেএমে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হবে। পরবর্তী ধাপে এই হাসপাতালে রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন-এ ফেলোশিপ অব ন্যাশনাল বোর্ড চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কী ভাবে নিচ্ছেন বেসরকারি বন্ধ্যত্ব চিকিৎসকরা? চিকিৎসক বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী বলেন, “উদ্যোগটা ভাল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে বেশ কয়েক বছর আগে নীলরতন সরকার হাসপাতালে এমন একটা উদ্যোগ শুরু হয়েও মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এ ক্ষেত্রে যাতে তা না হয়, সে জন্য গোড়া থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। আর এমন একটা কেন্দ্র তৈরি হলে, তাকে স্বশাসন দিতেই হবে। না হলে যে কোনও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে লাল ফিতের ফাঁস বড় হয়ে দেখা দিয়ে মূল উদ্যোগটাকে নষ্ট করবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement