প্রচণ্ড গরমে ত্বকে সংক্রমণ শিশুদের

অতি গরমে হাঁসফাঁস করা শিশুদের চামড়ায় অদ্ভুত সংক্রমণ শুরু হয়েছে। মুখে ও মাথায় ফোস্কার মতো দেখতে ওই রোগ বেশি হচ্ছে। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের রায়পুর চা বাগানের শতাধিক শিশু সংক্রমণের শিকার। রোগ ছড়িয়েছে সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামেও।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

রায়পুর বাগানে। ছবি: সন্দীপ পাল।

অতি গরমে হাঁসফাঁস করা শিশুদের চামড়ায় অদ্ভুত সংক্রমণ শুরু হয়েছে। মুখে ও মাথায় ফোস্কার মতো দেখতে ওই রোগ বেশি হচ্ছে। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের রায়পুর চা বাগানের শতাধিক শিশু সংক্রমণের শিকার। রোগ ছড়িয়েছে সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামেও। স্বাস্থ্য আধিকারিক ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, যে সমস্ত শিশু অস্বাস্থ্যকর গুমোট পরিবেশে থাকে, তাদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। যদিও অল্প দিনের চিকিৎসায় সহজে রোগ নিরাময় সম্ভব। কিন্তু সময়মত চিকিৎসা না করালে শিশুর কিডনি সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

Advertisement

জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নিরঞ্জন হালদার বলেন, “অত্যাধিক গরমের জন্য শিশুদের মধ্যে ওই রোগ বেশি দেখা দিচ্ছে। যে সমস্ত শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি আছে, অস্বাস্থ্যকর গুমোট পরিবেশে বসবাস করে, তাদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে শিশুর কিডনি সংক্রমিত হতে পারে।” জলপাইগুড়ি সদর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভদীপ সরকার জানান, চিকিৎসায় শিশুরা সুস্থ হচ্ছে।

স্বাস্থ্যকর্তা দাবি করলেও চা বাগান এলাকার কতজন অভিভাবক সংক্রমিত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন তা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জানাতে পারেননি। সাধারণ ঘা মনে করে শ্রমিক পরিবারের মায়েরা শিশুদের ছেড়ে রেখে কাজ করছেন। দুই থেকে চার বছরের শিশুদের মধ্যে ওই রোগ বেশি ছড়িয়েছে। প্রথমে একটা ফোস্কার মতো গোটা গালে দেখা যাচ্ছে। এর পরে সেটা ফেটে আরও ফোস্কা বার হচ্ছে। কিছু শিশুর এমন উদ্বেগজনক সংক্রমণ হয়েছে, যে গোটা মুখের চামড়া দগদগে ঘায়ে ঢেকেছে। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে আক্রান্তরা। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, রোগটি ‘ইনটেটাইগো কনটাডিয়েসা’ নামে পরিচিত। অত্যধিক গরমে ওই রোগের প্রকোপ বেশি হয়।

Advertisement

প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পরে সদ্য খোলা রায়পুর চা বাগান জুড়ে অপুষ্টির ছায়া। ওই কারণে এলাকায় ইনটেটাইগো কনটাডিয়েসা নতুন কিছু নয় বলে জানান চিকিৎসকদের কয়েকজন। স্থানীয় শ্রমিক বিশু শশী জানান, গত বছর তাঁর ছেলে আক্রান্ত হয়। এবার চার বছরের মেয়ে অর্পিতা ভুগছে। সদর হাসপাতালে চিকিৎসার পরে অনেকটা কমেছে। কতজন বিশুর মতো হাসপাতালে যাচ্ছেন বা কতজনের চিকিৎসা হচ্ছে তা জানাতে পারেননি স্থানীয় তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান হেমব্রম। তিনি বলেন, “গরমের দিনে এটা তো হয়েই থাকে। নিজে থেকে কমেও যায়। এবার গরম বেশি, তাই রোগ বেশি হচ্ছে।”

বাগানের শ্রমিকরা জানান, ঘরে ঘরে না হলেও বাগানের বিভিন্ন বস্তিতে রোগ ছড়িয়েছে। গুদাম লাইনে তিন বছরের শিশু রচনার গোটা মুখে সংক্রমণ ছড়ালেও মা মিলা বড়াইক বুধবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে যাননি। একই দশা সুস্মিতা মুণ্ডার তিন বছরের মেয়ে সঞ্জনার। ফেটে যাওয়া ফোস্কার যন্ত্রণায় মাটির মেঝেতে শুয়ে কাঁদছে সুস্মিতা। নিজের মনে ঘরের কাজ করছিলেন সুস্মিতা। খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা এক রকম জোর করে শিশুটিকে নিয়ে তাঁকে চা বাগানের হাসপাতালে যেতে বাধ্য করেন। পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্বাস্থ্য কর্মী কৃষ্ণা বিশ্বাস বাগান ঘুরে জানান, বেশ কিছু শিশু ওই রোগে আক্রান্ত। খুঁজে খুঁজে হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। বাগানের হাসপাতালের চিকিৎসক সুদীপ চক্রবর্তী বলেছেন, “কিছু মায়েরা শিশুদের নিয়ে আসছে। ওদের চিকিৎসা চলছে। আশা করি, শিশুরা ভাল হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন