রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল

প্রসূতির মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ, বিক্ষোভ

চিকিত্‌সায় গাফিলতির অভিযোগে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চিকিত্‌সক ও নার্সদের শাস্তির দাবিতে প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ হল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে। শুক্রবার দুপুরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ঘটনা। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক না দেখায় প্রায় ১০ ঘণ্টা বিনা চিকিত্‌সায় পড়ে ছিলেন সুমিত্রা রায় (২৪) নামে ওই প্রসূতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৯
Share:

চিকিত্‌সায় গাফিলতির অভিযোগে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চিকিত্‌সক ও নার্সদের শাস্তির দাবিতে প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ হল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে। শুক্রবার দুপুরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ঘটনা।

Advertisement

তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক না দেখায় প্রায় ১০ ঘণ্টা বিনা চিকিত্‌সায় পড়ে ছিলেন সুমিত্রা রায় (২৪) নামে ওই প্রসূতি। তাঁর বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার বাঙালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোরাগ্রাম এলাকায়। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পর এ দিন সকাল থেকে তাঁরা একাধিকবার নার্সদের চিকিত্‌সকদের খবর দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এ দিন প্রসূতির মৃত্যুর পর তাঁর পরিজনেরা প্রায় এক ঘণ্টা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে বিক্ষোভ দেখান। এমনকী, দোলের জন্য এ দিন হাসপাতাল সুপারের দফতর দিনভর তালাবন্ধ ছিল বলে অভিযোগ। পরিবারের লোকজনের দাবি, এ দিন তাঁরা একাধিকবার সুপারের কাছে বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সকদের খবর দেওয়ার অনুরোধ জানাতে গিয়ে ফিরে আসেন। বিকেলে ওই প্রসূতির স্বামী গব্বর রায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় চিকিত্‌সায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন। তবে ওই অভিযোগপত্রে তিনি নির্দিষ্ট করে কোনও চিকিত্‌সক বা নার্সের নামোল্লেখ করেননি। গব্বরবাবুর দাবি, তিনি হাসপাতালের কোনও চিকিত্‌সক বা নার্সের নাম জানেন না। পুলিশ তদন্ত করেই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করুক।

Advertisement

রায়গঞ্জের ডিএসপি (সদর) শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”

হাসপাতালের সুপার অনুপ হাজরার দাবি, তিনি সরকারি কাজে বাইরে আছেন। পরে খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “হাসপাতালে চার জন প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন ছুটিতে। বাকি দু’জন চিকিত্‌সক কর্তব্যরত অবস্থায় থাকাকালীন কেন গাফিলতির অভিযোগ উঠছে, তা নিশ্চই খতিয়ে দেখব।”

পাঁচ বছর আগে পেশায় দিনমজুর গব্বরবাবুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কালিয়াগঞ্জ থানার ডালিমগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের লোহাতারা এলাকায় সুমিত্রাদেবীর বাপের বাড়ি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাপের বাড়িতে সুমিত্রাদেবীর প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরিবারের লোকজন তাঁকে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিত্‌সকেরা তাঁকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে রেফার করেন। সেইমতো রাত ৩টে নাগাদ বাপের বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা সুমিত্রাদেবীকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ দিন দুপুর একটা নাগাদ তিনি মারা যান।

গব্বরবাবু জানান, জরুরি বিভাগের কর্তব্যরক চিকিত্‌সকের পরামর্শে রাতে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে সুমিত্রাদেবীকে ভর্তি করেন তাঁরা। তাঁর অভিযোগ, “হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক দেখতে যাননি। টানা ১০ ঘন্টা বিনা চিকিত্‌সায় পড়ে ছিলেন আমার স্ত্রী। নার্সরা শুধু স্যালাইন ও কয়েকটি ইঞ্জেকশন দিয়ে রেখেছিল। এদিন সকালে স্ত্রীর অসহ্য পেটে ব্যথা শুরু হয়। তখন একাধিকবার কর্তব্যরত নার্সদের বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সকদের খবর দেওয়ার অনুরোধ করলেও নার্সরা তাঁদের ডেকে পাঠানোর ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেননি। চিকিত্‌সক ও নার্সদের গাফিলতির জন্যেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু হল।”

গব্বরবাবুর প্রতিবেশী তথা এলাকার তৃণমূল নেতা অসিত দাসের অভিযোগ, “এ দিন রং খেলার জন্য দিনভর হাসপাতাল সুপারের দফতর তালাবন্ধ অবস্থায় ছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সককে খবর দেওয়ার জন্য একাধিকবার সুপারের কাছে অনুরোধ জানাতে গিয়েও ফিরে আসি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন