প্রসূতির মৃত্যুর পর আয়াদের মারধর

এক প্রসূতির মৃত্যুকে ঘিরে সোমবার সকালে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের মাতৃসদন। মৃত কোহিনুর বিবির (২২) বাড়ি ডোমকল থানার শিবনগরে। হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কোহিনুরের পরিজনেরা। হাসপাতালে তাঁর দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়েছে অভিযোগে দুই আয়াকে মারধরও করেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০২:১২
Share:

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আয়া সম্মানী দাস। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

এক প্রসূতির মৃত্যুকে ঘিরে সোমবার সকালে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের মাতৃসদন।

Advertisement

মৃত কোহিনুর বিবির (২২) বাড়ি ডোমকল থানার শিবনগরে। হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কোহিনুরের পরিজনেরা। হাসপাতালে তাঁর দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়েছে অভিযোগে দুই আয়াকে মারধরও করেন তাঁরা।

হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, “শয্যা থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ওই প্রসূতির খিঁচুনি হচ্ছিল। অবস্থাও ভাল ছিল না। পা ফুলে গিয়েছিল। উচ্চ-রক্তচাপ ছিল। রোগীকে ইঞ্জেকশন (ম্যাগসালফ্) দেওয়া হয়েছিল।”

Advertisement

শনিবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ মাতৃসদনে ভর্তি হন কোহিনুর বিবি। রবিবার দুপুরে অস্ত্রোপচার করে তাঁর একটি পুত্রসন্তান হয়। প্রসূতির মাসি নসিয়া বিবি বলেন, “ও ভালই ছিল। সমস্যার কথা বলেনি। শুধু বলেছিল পাশে থাকতে। কিন্তু আয়ারা থাকতে দেয়নি।” সোমবার সকাল ছ’টায় হাসপাতাল থেকে মাইকে রোগীর বাড়ির লোকজনদের ডাকা হলে নসিয়া বিবি যান। তাঁর অভিযোগ, “নার্সদের কাছে নিয়ে গিয়ে টিপ সই করানোর পরে মৃত্যুর খবর জানানো হয় আমাকে।”

এর পর ডোমকল থেকে কোহিনুর বিবির বাড়ির লোকজন হাসপাতালে এসে পৌঁছন। তাঁদের রোষের মুখে পড়েন আয়ারা। রবিবার রাতে ওই প্রসূতির দেখভালের জন্য ছিলেন আয়া পঞ্চাশোর্ধ্ব সম্মানী দাস। এদিন মৃতার পরিবারের সদস্য ও পরিচিতরা তাঁর উপরে চড়াও হয়ে চুলের মুঠি ধরে মারধর করেন। মারের চোটে তিনি জ্ঞান হারান। নিউ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সম্মানীদেবীকে। জিন্নাতুন বিবি নামে আর এক আয়াকেও মারধর করা হয়।

নিগ্রহের প্রতিবাদে আয়ারা কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান এ দিন। বেলার দিকে কোহিনুর বিবির পরিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে গেলে আয়ারা সেখানে চড়াও হন বলে অভিযোগ। ফের আয়া এবং পরিবারের লোকজনের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মৃতার পরিবারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন আয়া জিন্নাতুন বিবি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ বহরমপুর থানায় পাঠিয়ে দেন। আয়াদের বিরুদ্ধেও পাল্টা মারধরের অভিযোগ করেন মৃতার বাড়ির লোকেরা। মৃতার স্বামী জামিরুল মণ্ডল বলেন, “আয়াদের বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় পৃথক একটি অভিযোগ করেছি আমরা।”

হাসপাতালের বিছানায় শুনে সম্মানীদেবীর দাবি, “গত ২২ বছর ধরে আয়ার কাজ করছি। আমার কোনও গাফিলতি ছিল না। রোগীর অবস্থা ভাল ছিল না। রাতে ছটফট করছিল। তখন বেডের সঙ্গে গজ দিয়ে হাত ও পা বেঁধে রাখি। বার বার নার্সদের কাছে ছুটে গিয়ে রোগীর অবস্থার কথা জানাই। রাতে কলবুক দিলে ডাক্তারবাবুও এসে দেখে যান।”

কোহিনুর বিবির চিকিৎসা করছিলেন সোমা দত্ত। তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। গণ্ডগোল এড়াতে সুপার ২৪ ঘণ্টার জন্য হাসপাতালে পুলিশ পিকেট বসানোর আবেদন জানিয়েছেন জেলা পুলিশের কাছে। সুপার বলেন, “ওই প্রসূতির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যভবন থেকে নির্দেশ এসেছে। সেই সঙ্গে মৃত্যু-পরবর্তী ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের পৃথক একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।” কোহিনুর বিবির সদ্যোজাত সন্তান সুস্থই আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন