পরিদর্শকদলের জন্য রান্না, হাসপাতালেই জ্বলল উনুন

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিনিধি দলকে খাবার খাওয়ানোর জন্য নিরাপত্তা বিধি শিকেয় তুলে হাসপাতালের মধ্যেই উনুন জ্বালিয়ে রান্না হল। রবিবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের ঘটনা। এ দিন হাসপাতালের মূল ভবনেই উনুন জ্বালিয়ে রান্নার ঘটনা চোখে পড়েছে। যদিও হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেনের যুক্তি, “বাইরে থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে আসা হয়ছিল। সেগুলি গরম করতে হতে পারে, এই ভেবে উনুন জ্বালানো হলেও তার প্রায়োজন না হওয়ায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উনুন নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৫
Share:

তখন চলছে রান্না। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।—নিজস্ব চিত্র।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিনিধি দলকে খাবার খাওয়ানোর জন্য নিরাপত্তা বিধি শিকেয় তুলে হাসপাতালের মধ্যেই উনুন জ্বালিয়ে রান্না হল। রবিবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের ঘটনা। এ দিন হাসপাতালের মূল ভবনেই উনুন জ্বালিয়ে রান্নার ঘটনা চোখে পড়েছে। যদিও হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেনের যুক্তি, “বাইরে থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে আসা হয়ছিল। সেগুলি গরম করতে হতে পারে, এই ভেবে উনুন জ্বালানো হলেও তার প্রায়োজন না হওয়ায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উনুন নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ন্যাশনাল বোর্ড অফ এগজামিনেশনের আওতায় শুরু হচ্ছে এমডি-এমএসের সমতুল পাঠ্যক্রম। তার পরিকাঠামো পরিদর্শন করতে রবিবার হাসপাতালে এসেছিলেন ওই কেন্দ্রীয় বোর্ডের দুই প্রতিনিধি ভি আর আনন্দ এবং ভি কে গোয়েল। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দুই সদস্য। অভিযোগ, এই প্রতিনিধি দলকে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর জন্য উনুন জ্বালিয়ে রান্না হয়েছে হাসপাতালের মধ্যে। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, এক তলায় সুপারের অফিসঘরের কাছে লিফটের উল্টো দিকে একটি ফাঁকা ঘরে কাঠের পাটাতন দিয়ে আড়াল তৈরি করে রান্নাবান্নার কাজ চলছে। এই ঘরটি নতুন শুরু হতে চলা পাঠ্যক্রমের জন্য লাইব্রেরি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হাসপাতালে ভাল ভাল খাবারের গন্ধ পেয়ে ওই ঘরে উকিঝুঁকি দিতে দেখা গিয়েছে বহু রোগীকেই।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন ওই প্রতিনিধি দলটি মেডিসিন ও প্রসূতি বিভাগ পরিদর্শন করে। এমডি-এমএসের সমতুল পাঠ্যক্রমে মোট ১২টি আসন রয়েছে সদর হাসপাতালে। এই পাঠ্যক্রমের জন্য পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ মে মাসে পরিদর্শন করতে এসেছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। সেই সময়ে কাজ ধীরগতিতে এগোনোয় পূর্ত দফতর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সমালোচিত হতে হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে। তার পরে কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হয়েছে। এ দিন অবশ্য পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের দুই সদস্য বলেন, “বিস্তারিত রিপোর্ট বোর্ডে জমা দেওয়া হবে।” পরিকাঠামো নির্মাণ সন্তোষজনক কি না, সে বিষয়ে তাঁরা মন্তব্য করতে চাননি।

Advertisement

রবিবারই জেলার রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে এক রোগীর খাবারে পোকা মেলার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। হাসপাতাল সুপার শান্তনু সাহু বলেন, “ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। যাদের গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরের খাবারে পোকা পেয়েছেন মুবারক খান নামে এক রোগী। শনিবার পেটে ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রঘুনাথপুরের নতুনডি গ্রামের বাসিন্দা মুবারক বলেন, “এ দিন দুপুরে ভাত, ডাল,ক ুমড়োর তরকারির সঙ্গে মাছ দেওয়া হয়েছিল। খাওয়া শুরু করার সময়েই দেখি মাছের ঝোলে বেশ বড় কালো রঙের একটা পোকা ভাসছে। খাওয়া বন্ধ করে বিষয়টি নার্সদের জানাই।” খাবারে পোকা মেলার ঘটনাটি হাসপাতালে চাউর হতেই অনেক রোগী মাঝপথে খাওয়া বন্ধ করে দেন। পরে মুবারক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

এ দিন হাসপাতালে গিয়ে খাবার নিয়ে রোগীদের বিস্তর অভিযোগ কানে এসেছে। বহু রোগীরই ক্ষোভ, খাবারের মান ভাল নয়, মাঝেমধ্যেই খাবারে ময়লা থাকে। কর্তব্যরত নার্সদের জানিয়েও ফল হয় না। হাসপাতালের সুপার শান্তনু সাহু বলেন, “ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে ওই খাবার খেয়ে কোনও রোগীর সমস্যা হয়েছে কি না, দেখতে বলা হয়েছিল। তবে কারও সমস্যা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।” হাসপাতালের কর্মীদের একাংশেরও বক্তব্য, রান্নাঘরের হাল ভাল নয়। তার উপরে খাবার রান্না থেকে শুরু করে পরিবেশন করে বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। তাঁরা সব সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেন না। এই বিষয়ে অবশ্য কথা বলতে চাননি ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। হাসপাতাল সুপার বলেন, “ইতিমধ্যেই আমরা রান্নাঘরের কিছু সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। ‘ডায়েটম্যান’-দের(রান্নার সঙ্গে যুক্ত কর্মী) পোশাক দেওয়ার পাশাপাশি রান্নার কাজে নজরদারিও শুরু করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন