এনসেফ্যালাইটিসের জন্য ব্যবস্থা

ফের খুলছে বন্ধ স্টাডি সেন্টার

উত্তরবঙ্গে সংক্রমণের ধাক্কায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা ‘জাপানি এনসেফ্যালাইটিস স্টাডি সেন্টার’ খোলার কথা মনে পড়েছে রাজ্য প্রশাসনের। কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় জানান, বৃহস্পতিবার মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধানকে নিয়ে বৈঠক করে সেটি চালু করার চেষ্টা হবে। আক্রান্তদের রক্ত এবং জীবাণুবাহী মশা কিউলেক্স ভিশনুই নিয়ে গবেষণার জন্য তিন দশক আগে কেন্দ্রটি খোলা হয়েছিল।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০২:২৮
Share:

উত্তরবঙ্গে সংক্রমণের ধাক্কায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা ‘জাপানি এনসেফ্যালাইটিস স্টাডি সেন্টার’ খোলার কথা মনে পড়েছে রাজ্য প্রশাসনের। কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় জানান, বৃহস্পতিবার মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধানকে নিয়ে বৈঠক করে সেটি চালু করার চেষ্টা হবে।

Advertisement

আক্রান্তদের রক্ত এবং জীবাণুবাহী মশা কিউলেক্স ভিশনুই নিয়ে গবেষণার জন্য তিন দশক আগে কেন্দ্রটি খোলা হয়েছিল। প্রায় নয় বছর সেটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। বুধবার কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে বর্ধমান মেডিক্যালে এসে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন বিধানসভার পরিষদীয় সচিব (স্বাস্থ্য) নির্মল মাজি। ছিলেন জেলার মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। মঞ্জুশ্রীদেবী বলেন, “উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস সংক্রমণের খবর দেখে আমরা ভাবছিলামই যে এখানকার স্টাডি সেন্টারটি ফের চালু করা যায় কি না।” নির্মলবাবুও কেন্দ্রটি খোলার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন।

১৯৮৫ সালে পুজোর মুখে বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়ায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ওই সময়েই বর্ধমান মেডিক্যালের তৎকালীন মেডিক্যাল অফিসার বিজয় মুখোপাধ্যায়ের অধীনে ওই স্টাডি সেন্টার খোলা হয়। সেখানে এক কীটতত্ত্ববিদ,আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা করার জন্য দু’জন টেকনিক্যাল কর্মী, চার জন হেল্থ ইন্সপেক্টর এবং গাড়ির চালক মিলিয়ে ১২ জন ছিলেন। বর্ধমান মেডিক্যালে আসা আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এবং নানা তথ্য-পরিসংখ্যান ওই কেন্দ্র থেকেই কলকাতায় স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হত।

Advertisement

বর্তমানে কাটিহার মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত বিজয়বাবু জানান, স্টাডি সেন্টারের তরফে নানা জেলায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের বাহক কিউলেক্স ভিশনুই প্রজাতির মশাদের বংশবৃদ্ধি, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ইত্যাদি দেখা হত। কিউলেক্স ভিশনুই প্রজাতির মশাদের পেট চিরে দেখা হত, তারা কতটা এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস বহন করছে। তা থেকে অনুমান করা হত, সে বছর পুজোর পরে (ওই সময়েই রোগের প্রকোপ বাড়ে সাধারণত) কতখানি সংক্রমণ ঘটতে পারে। প্রয়োজনে বর্ধমান মেডিক্যালে বিশেষ ওয়ার্ড খোলা হত।

বিজয়বাবুর দাবি, ওই কেন্দ্রের উদ্যোগেই এক সময়ে বর্ধমানের গ্রামে-গ্রামে কসৌলিতে তৈরি জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই জেলায় এই রোগের প্রকোপ কমে যায়। বিজয়বাবু বলেন, “২০০৫ সালের পরে অবসর নিয়ে আমি বর্ধমান থেকে চলে আসি। স্টাডি সেন্টারের কাজকর্মও ক্রমে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সরকারের উচিত ছিল, কেন্দ্রটিকে আঞ্চলিক করে না রেখে বরং আরও বাড়ানো।” তেমনটা হলে সংক্রমণ ঠেকাতে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভায়রোলজি বা মাদুরাইয়ের পতঙ্গবিদদের ডাকতে হত না বলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকে মনে করছেন।টিকাকরণের দৌলতে এক সময়ে বর্ধমান ও তার আশপাশের জেলায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ স্তিমিত হয়ে এলেও এখন তা ফের বেড়েছে। বর্ধমান মেডিক্যালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান গদাধর মিত্র জানান, বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলার বহু রোগীর রক্ত ও সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করে ওই জীবাণুর সন্ধান মেলে। ২০১২-য় এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে তাঁদের হাসপাতালে বর্ধমানের ১৯৩ জন, বীরভূমের ৪৯, হুগলির ১৮, পুরুলিয়ার ৪, ঝাড়খণ্ডের ১৯, নদিয়ার ৬ এবং মুর্শিদাবাদের ৮ জন ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্তের সংখা ছিল ৯। পরের বছরও জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত ১৮ জনের সন্ধান পাওয়া যায়। চলতি বছরে জুন পর্যন্ত বর্ধমানের ৪২ জন, বীরভূমের ২৬, হুগলির ৫, বাঁকুড়ার ৮ জন, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের এক জন করে রোগী এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ থেকে এসে ভর্তি হওয়া একটি বালক জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের শিকার।

এই পরিস্থিতিতে বর্ধমানের স্টাডি সেন্টারটি দ্রুত চালু করার পাশপাশি সারা রাজ্যেই এমন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন