ফোঁড়ায় পোকা না-দেখেই শিশুকে রেফার, অভিযোগ

সাড়ে তিন বছরের শিশুর পায়ে হওয়া ফোঁড়া থেকে পোকা বেরনোয় চিন্তিত পরিবারের লোকেরা ভর্তি করেছিলেন আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে। অভিযোগ, চিকিৎসকেরা শিশুটিকে ভাল ভাবে না দেখেই রেফার করে দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪২
Share:

আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে মা ফুলমতীর সঙ্গে পিন্টু।

সাড়ে তিন বছরের শিশুর পায়ে হওয়া ফোঁড়া থেকে পোকা বেরনোয় চিন্তিত পরিবারের লোকেরা ভর্তি করেছিলেন আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে। অভিযোগ, চিকিৎসকেরা শিশুটিকে ভাল ভাবে না দেখেই রেফার করে দেন। দরিদ্র পরিবারের শিশুটিকে রেফার করতে বাধা দেন শিশু বিভাগের নার্সরা। তাঁরাই যত্ন নিয়ে প্রতিদিন শিশুটির ডান পা থেকে ১০-১২টি করে পোকা বের করেছেন। শিশুটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। শিশুটির পা থেকে পোকা বার করার সময় হাজির থাকার কথা শল্য চিকিৎসকের। সেই সময় চিকিৎসকরাও উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও নার্সরা পৃথক ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন সুপারের কাছে। হাসপাতালের সুপার সুজয় বিষ্ণু বলেন, “মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। শল্য চিকিৎসকদের শিশুটির চিকিৎসায় নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।”

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার খোলটা চেকপোস্ট এলাকার বাসিন্দা ফুলমতি দাস তাঁর সাড়ে তিন বছরের শিশু পিন্টুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেই সময় তার ডান পায়ে হওয়া ফোঁড়া থেকে ছোট ছোট সাদা লার্ভা জাতীয় পোকা বের হচ্ছিল। সেই সময় দায়িত্বে থাকা শল্যচিকিৎসক শিশুটিকে রেফার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা দেখে নার্সরাই শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করার উপর জোর দেন। শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হলেও চিকিৎসকেরা পরে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ। ওই শিশুটির মা ফুলমতী দাস জানান, প্রায় মাস দু’য়েক আগে ছেলের পায়ে ফোঁড়া হয়েছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন নিজে নিজেই সেরে যাবে। পরে পা থেকে পোকা বের হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, “সিস্টার দিদিরাই রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত পিন্টুকে নিয়ে রোজ পা থেকে পোকা বের করেছে। তবে সেই সময় কোনও চিকিৎসক আসেননি।” ঘটনার কথা স্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে অবশ্য প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি নার্সরা। যিনি ওই শিশুটিকে প্রথম দেখেছিলেন সেই শল্য চিকিৎসক অমিত সিংহকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমি ছুটিতে পারিবারিক কাজে রয়েছি।”

হাসপাতালের চিকিৎসক যুধিষ্ঠির দাস বলেন, “শরীরের কোনও ঘা বা ফোঁড়া হলে তা পেকে যাওয়ার পর তা যদি পরিস্কার করা না হয় তা হলে তাতে সংক্রমণ হতে পারে। অপরিচ্ছন্ন ঘায়ে বসে মাছি বা মশা ডিম পাড়ে। তা থেকেই ওই পোকা বা ম্যাগট জন্মাতে পারে। বাইরে না এলে তা সাধারণত চোখে পড়ে না। অপরিচ্ছন্ন থাকার জন্যই এই ঘটনা ঘটে।”

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির শরীরে যে পোকা বা ম্যাগোট হয়েছে তা প্রায় ১ থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নার্সরা জানান, শিশুটির ঘায়ে ওষুধ দিতেই সেখান থেকেই কিলবিল করে এক সঙ্গে বেরিয়েছে ১০-১২টি ম্যাগট। হাসপাতালের এক শল্য চিকিৎসক পুষ্পজিৎ মিশ্র বলেন, “বিষয়টি ঠিক নয়। দুই চিকিৎসক মিলে ওই শিশুটিকে দেখেছি। ও সুস্থ। আমার তত্ত্বাবধানে ওর ড্রেসিং হয়েছে। এখন ম্যাগট নেই। ঘা অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে।”

আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসুর অভিযোগ, “যে চিকিৎসা আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে সম্ভব, তার জন্য কেন চিকিৎসকেরা রোগীদের রেফার করছেন? বিষয়টি হাসপাতাল সুপারকে জানিয়েছি।” শিশুটিকে রেফার করার কথা স্বীকার করেছেন হাসপাতাল সুপার সুজয় বিষ্ণু। তিনি বলেছেন, “যার চিকিৎসা এখানেই হতে পারে সেই রোগীকে কেন রেফারের কথা বলা হল তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন