বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জেলায় না গেলেই জরিমানা

মেডিক্যালে ডক্টরেট (ডিএম, এমসিএইচ) ডিগ্রি পেয়ে গেলেই চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলক ভাবে এক বছর জেলায় কাজ করতে হবে। ২০১৪ সাল থেকেই এই নিয়ম চালু করেছে রাজ্য সরকার। একই ভাবে, স্নাতকোত্তরে এমডি, এমএস পাশ করার পরেও চিকিৎসকদের এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে জেলায় যেতে হবে। তবে এই নিয়ম চালু হবে পরের বছর থেকে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০২:২০
Share:

মেডিক্যালে ডক্টরেট (ডিএম, এমসিএইচ) ডিগ্রি পেয়ে গেলেই চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলক ভাবে এক বছর জেলায় কাজ করতে হবে। ২০১৪ সাল থেকেই এই নিয়ম চালু করেছে রাজ্য সরকার। একই ভাবে, স্নাতকোত্তরে এমডি, এমএস পাশ করার পরেও চিকিৎসকদের এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে জেলায় যেতে হবে। তবে এই নিয়ম চালু হবে পরের বছর থেকে।

Advertisement

চলতি বছরে যাঁরা ডিএম বা এমসিএইচ পাঠ্যক্রমে ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে লিখিত সম্মতিপত্র বা বন্ড দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তিন বছরের কোর্স শেষ করার পরে ডক্টরেট ডিগ্রি হাতে পেয়ে কেউ যদি চুক্তি মেনে জেলায় যেতে না চান, তা হলে সেই চিকিৎসক ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য থাকবেন। ভিন্ রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে যাঁরা ডক্টরেট ডিগ্রি করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এমডি, এমএস-দের ক্ষেত্রেও চুক্তি না মানলে জরিমানার অঙ্ক একই রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন নিয়েই নতুন নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে।

জেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা কী ভাবে বাড়ানো যায়, তাই নিয়ে অনেক দিন ধরেই স্বাস্থ্য দফতরে চিন্তাভাবনা চলছিল। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, চুক্তি ভেঙে জেলায় না-গেলে চিকিৎসকদের জরিমানা করা হবে কি না, তা নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। পরে সকলেই একমত হন যে, সম্মতি জানালেও ডক্টরেট ডিগ্রি হাতে পেয়ে অনেক চিকিৎসকই নানা কারণ দেখিয়ে জেলায় না-ও যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জরিমানার ব্যবস্থা না থাকলে কিছু করার থাকবে না।

Advertisement

মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পাশ করার পর চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলক ভাবে জেলায় পাঠানোর প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টাস্ক ফোর্স।

এর প্রধান সুব্রত মৈত্র বলেন, “রাজ্যে ৩৪টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ছ’টি এ বছরেই চালু হওয়ার কথা। জেলার হাসপাতালগুলিতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট খোলার চেষ্টা হচ্ছে। চিকিৎসার এই বিশেষ ক্ষেত্রগুলি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া চলবে না। তাই এমডি, ডিএম-দের জন্য নিয়ম বেঁধে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।”

প্রায় একই অভিমত রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “সরকারি হাসপাতালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে এক জন চিকিৎসক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। এ জন্য নিজেকে খরচ করতে হয় অনেক কম। তার পরেও তিনি কোনও বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাবেন, অথবা শহরে থেকেই চিকিৎসা করবেন এটা আর চলবে না।”

টাস্ক ফোর্সের প্রস্তাব নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের যে কমিটি আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন কলকাতার ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র।

তাঁর কথায়, “স্নাতকোত্তর পাশের পর চুক্তিকে সই করা চিকিৎসকদের গণ্ডগ্রামে ফেলে রাখা হবে না। পাঠানো হবে জেলা শহরের হাসপাতাল ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের আপত্তি থাকার কথা নয়।” স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব দেখিয়ে প্রায় সব জেলা হাসপাতালই ১৫-২০% রোগীকে এসএসকেএম-সহ কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেয়। নতুন নিয়মে এই ব্যবস্থাতেও রাশ টানা সম্ভব হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন