আর জি কর

বেড়াতে না পেরে ‘ছুটি’তে ইন্টার্নরা

বেড়াতে গিয়ে কাজ বন্ধ করার নজির আগেই গড়েছিলেন ইন্টার্নরা। এ বার বেড়াতে যাওয়ার অনমুতি না পেয়ে কাজ বন্ধ করার নতুন নজির গড়লেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষ বেড়াতে যাওয়া বাতিল করার নির্দেশ দেওয়ায় শনিবার দিনভর কাজ বন্ধ রাখলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের ইন্টার্নদের একটা বড় অংশ।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৮:০০
Share:

বেড়াতে গিয়ে কাজ বন্ধ করার নজির আগেই গড়েছিলেন ইন্টার্নরা। এ বার বেড়াতে যাওয়ার অনমুতি না পেয়ে কাজ বন্ধ করার নতুন নজির গড়লেন তাঁরা।

Advertisement

কর্তৃপক্ষ বেড়াতে যাওয়া বাতিল করার নির্দেশ দেওয়ায় শনিবার দিনভর কাজ বন্ধ রাখলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের ইন্টার্নদের একটা বড় অংশ। ফলে বিভিন্ন বিভাগে রোগীদের ভোগান্তির শেষ রইল না। ক্যাজুয়ালটি ব্লক থেকে রোগী ফেরানো নিয়ে গোলমালও বাধল। এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে হাসপাতালে। রবিবারও সারাদিন এ নিয়ে আলোচনা চলেছে। একাধিক সিনিয়র ডাক্তার বিষয়টি স্বাস্থ ভবনে জানিয়েছেন।

প্রতি বছরই ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার মুখে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্নরা দল বেঁধে কাজ বন্ধ করে বেড়াতে যান। এই সব বেড়ানোর খরচের একটা মোটা অংশ ওষুধ সংস্থা বহন করে বলেও অভিযোগ ওঠে। চলতি বছরে আর জি করে ইন্টার্নশিপ শেষ হচ্ছে আগামী ২২ মার্চ। তার আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি ইন্টার্নরা মন্দারমণি বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। স্থির হয়, ২৬ তারিখ ভোরে মন্দারমণি পৌঁছে ২৭ তারিখ রাতে ফেরা হবে। সেখানে একটি বিলাসবহুল রিসর্ট বুক করা হয়। বেড়িয়ে ফেরার পরের দিন অর্থাৎ ২৮ তারিখ কলেজেই ইন্টার্নদের একটি ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ হবে বলে স্থির হয়।

Advertisement

কিন্তু ছন্দপতন ঘটায় এসএসকেএমের হস্টেলে মাদক নিয়ে এক ইন্টার্নের মৃত্যুর ঘটনা। আরজিকর সূত্রে খবর, এসএসকেএমের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে জোর আলোচনা শুরু হতেই কর্তৃপক্ষ ইন্টার্নদের বেড়াতে যেতে নিষেধ করেন। তবে বলা হয়, বেড়ানো বন্ধ হলেও শুক্রবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে। কিন্তু ইন্টার্নরা কর্তৃপক্ষের এই নিষেধ মন থেকে মানতে পারেননি। কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে এ নিয়ে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। তাতেও অনুমতি মেলেনি। ২৮ তারিখ কলেজের অডিটোরিয়ামে মাঝরাত পর্যন্ত ‘ডিজে নাইট’ এবং খানাপিনা চলে। তার পরে শনিবার ১৫০ জন ইন্টার্নের মধ্যে মাত্র পাঁচ জন হাসপাতালে কাজে যোগ দেন বলে জানা গিয়েছে।

ফলে পরিষেবা ব্যহত হয় বিভিন্ন বিভাগেই। বিভাগীয় প্রধানরা এ নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্যাজুয়ালটি ব্লক থেকে রোগী ফেরানো নিয়ে বিকেলে হাসপাতালে গোলমালও হয়।

কেন তাঁরা কাজে যোগ দিলেন না? এক ইন্টানের্র কথায়, “অন্য মেডিক্যাল কলেজে কী হল, তার দায় আমরা কেন বহন করব? কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারিনি। সেই কারণেই স্থির করেছিলাম শনিবার ডিউটি করব না।”

ইন্টার্নদের অনেকেই জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ শুদ্ধোধন বটব্যাল তাঁদের ছুটি মঞ্জুর করেছেন। এক ইন্টার্নের কথায়, “আমরা ওঁকে স্পষ্ট জানিয়েছিলাম যে বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না, তা বাধ্য হয়েই মেনে নিচ্ছি। কিন্তু শনিবার আমরা কাজ করব না। উনি সেটা মেনে নিয়েছেন।”

কী বলছেন অধ্যক্ষ? রবিবার শুদ্ধোধনবাবু বলেন, “এমন অনুমতি কখনও দেওয়া যায় নাকি? এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি।”

তা হলে বিনা অনুমতিতে কাজে না আসার জন্য ইন্টার্নদের বিরুদ্ধে তিনি কি কোনও ব্যবস্থা নেবেন? এর সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে অধ্যক্ষের জবাব, “কাজ না করার বিষয়টা আমি বিস্তারিত জানি না। আপনার কাছেই পুরোটা শুনলাম।” শনিবার সারা দিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও বিষয়টা কী ভাবে তাঁর অজানা থাকতে পারে? অধ্যক্ষ কোনও উত্তর দেননি। তবে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেরাই অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাই তাঁর না জানার প্রশ্নই নেই।

মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “এমন যথেচ্ছাচার চলতে দেওয়া ঠিক নয়। পেশার শুরুতেই যাঁরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন, তাঁরা ভবিষ্যতে কী করবেন, সেটা ভেবেই আতঙ্কিত বোধ করছি।”

এক বছরের ইন্টার্নশিপের পরে এক বছর গ্রামে যাওয়া বাধ্যতামূলক করতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র ভাবনাচিন্তা পাকা হচ্ছে খবর পেয়েই আন্দোলনে নেমেছিলেন ইন্টার্নরা। রাজ্যের বহু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজ বন্ধ করে আন্দোলনেও নেমেছিলেন তাঁরা। প্রশ্ন উঠেছে, কখনও এমসিআই-এর সিদ্ধান্ত, আবার কখনও নিজেদের মর্জিমতো বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্তে বাধা— যে কোনও অজুহাতে যখন-তখন এ ভাবে কাজে যোগ না দিয়েই কি পার পেয়ে যাবেন তাঁরা?

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কড়া হয়েছি বলেই ইন্টার্নরা মন্দারমণি যেতে পারেননি। স্পষ্টই বলে দেওয়া হয়েছিল, বেড়াতে গেলে ইন্টার্নশিপ পিছিয়ে দেওয়া হবে। তার পরে ওঁরা এমন একটা ঘটনা ঘটালেন। এই প্রবণতা কখনওই বরদাস্ত করা যায় না। কাজ বন্ধ করে রোগীদের অসুবিধা ঘটালে তাঁরা যে পার পাবেন না, সে কথা মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এমন ঘটতে থাকলে আমরা কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য হব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন