বরাদ্দ টাকা পড়ে কেন, প্রশ্ন স্বাস্থ্য সমিতির সভায়

কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অথচ কাজ হচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো ‘দরিদ্র মানুষের’ জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমন হাল কেন? জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সমিতির সভায় এই প্রশ্ন তুলেই সরব হলেন সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

মেদিনীপুর শহরের পরিকল্পনা ভবনে বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।

কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অথচ কাজ হচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো ‘দরিদ্র মানুষের’ জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমন হাল কেন? জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সমিতির সভায় এই প্রশ্ন তুলেই সরব হলেন সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া।

Advertisement

সোমবার জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তীর উপস্থিতিতেই মানসবাবু বলেন, “এটা দরিদ্র মানুষের জেলা। এখানে জঙ্গলমহল রয়েছে। তা-ও এই জেলায় স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বরাদ্দ টাকা কেন খরচ হবে না? কেন মানুষ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা পাবেন না?” তাঁর অভিযোগ, “পূর্ত দফতর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর, পঞ্চায়েত ও স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ব্যাপক ভাবে দেখা দিচ্ছে।”

জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা ছিল সোমবার। মেদিনীপুর শহরের পরিকল্পনা ভবনে এই সভায় জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) ছাড়াও ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা-সহ অন্য স্বাস্থ্য-কর্তারা। কংগ্রেসের হয়ে সভায় প্রতিনিধিত্ব করেন মানসবাবু। তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো। সভার শুরুতে গত এক বছরের খতিয়ান তুলে ধরেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। গিরীশচন্দ্রবাবুর বক্তব্য, জেলায় ৮৫৮টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৫৭৬টির উন্নতিকরণ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ৫০৭টির উন্নতিকরণ হয়েছে। বাকি ৬৯টির কাজ চলছে। ২০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নতিকরণ হওয়ার কথা। এর মধ্যে ১৬টির কাজ শেষ হয়েছে। ২০টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩০ শয্যার হওয়ার কথা। এর মধ্যে ১৫টির কাজ শুরু হয়েছে। ২২টি এসএনসিইউ-এর মধ্যে ২১টির কাজ শুরু হয়েছে। একটির শুরু হবে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়ে দেন, জেলায় ১১টি পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র হওয়ার কথা। দু’টির কাজ চলছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের সিসিইউতে ৬টি থেকে বেড়ে শয্যা হবে ২০টি। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালেও সিসিইউ চালু হবে। জেলায় এখন প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৮৬ শতাংশ। জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকের মধ্যে ৯টিতে মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট চলছে। জেলায় ৬টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে।

Advertisement

এই সব পরিসংখ্যানকে সামনে রেখেই সরব হন মানসবাবু। প্রশ্ন তোলেন, “আগে দু’টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কাজ এগোয়নি। নতুন করে আরও চারটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কবে এ সব তৈরি হবে?” তাঁর কথায়, “খড়্গপুরে ট্রমা সেন্টার সাত বছর ধরে তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। লোক নেই বলে চালু হচ্ছে না। ভাবা যায়?” সবংয়ে কেন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে না, সেই প্রশ্নও তোলেন বিধায়ক।

২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে জেলায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ হয়েছিল ৯৮ কোটি ৫৯ লক্ষ ১৮ হাজার ২৩৫ টাকা। খরচ হয়েছে ৬২ কোটি ৯২ লক্ষ ৬৬ হাজার ৯৬৭ টাকা। মানসবাবুর প্রশ্ন, “৩৫ কোটি ৬৬ লক্ষ ৫১ হাজার ২৬৮ টাকা কেন খরচ হল না? এর জবাব কে দেবে?” সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, “মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে যথেচ্ছ রেফার হচ্ছে। ৬৫ শতাংশ রোগীকেই রেফার করে দেওয়া হয়। সামান্য পেটে ব্যাথা নিয়ে কেউ এলে তাঁকেও এসএসকেএম কিংবা এনআরএসে পাঠানো হয়। এটা কেন হবে?”

সভায় অবশ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু মেনে নেন, কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজের অগ্রগতি প্রত্যাশিত নয়। তাঁর কথায়, “জেলায় কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা কমেছে। এখন প্রতি ১০ হাজারে রোগীর সংখ্যা ১.৭ জন। এক সময় ২০ জন ছিল। তবে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এখনও ১৪ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হচ্ছে। আমরা এটার উন্নতি করার সব রকম চেষ্টা করছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করারও চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন