মুচলেকা সত্ত্বেও বাইরে ডাক্তারি, অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্তা

তিনি জেলায় স্বাস্থ্য দফতরের অন্যতম শীর্ষকর্তা। দফতরের কাজকর্ম নিয়ম মেনে, স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে কি না, তা দেখার ভারও তাঁর। সেই তিনিই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে স্বাস্থ্য দফতর থেকে বেতন ছাড়াও অতিরিক্ত ভাতা পান। আবার একাধিক ওষুধের দোকানে চুটিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেন!

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪২
Share:

তিনি জেলায় স্বাস্থ্য দফতরের অন্যতম শীর্ষকর্তা। দফতরের কাজকর্ম নিয়ম মেনে, স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে কি না, তা দেখার ভারও তাঁর। সেই তিনিই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে স্বাস্থ্য দফতর থেকে বেতন ছাড়াও অতিরিক্ত ভাতা পান। আবার একাধিক ওষুধের দোকানে চুটিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেন!

Advertisement

‘তিনি’ উত্তর ২৪ পরগনার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা-১ দিব্যেন্দুকুমার চক্রবর্তী। তাঁর বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। দিব্যেন্দুবাবু নিজেও রোগী দেখার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর ক্ষেত্রে সাসপেন্ড হওয়া থেকে বেতন বৃদ্ধি এবং পদোন্নতি আটকে যাওয়ার মতো শাস্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা।

প্রশ্ন উঠেছে, উপ মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার মতো জেলার এক জন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকর্তা দিনের পর দিন কাজের সময়ে অনুপস্থিত থেকে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখছেন জেনেও জেলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চুপ করে ছিলেন কেন? সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের কিছু চিকিৎসক হাসপাতালে অনুপস্থিত থেকে অন্যত্র প্র্যাকটিস করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার প্রাক্তন অধ্যক্ষ অনুপ রায় কেন সে দিকে নজর রাখেননি এবং বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানাননি, সেই প্রশ্ন তুলে তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। এখন সেই একই অভিযোগ উঠছে উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা (সিএমওএইচ) প্রলয়কুমার আচার্যের ক্ষেত্রে।

Advertisement

দিব্যেন্দুবাবুর দফতর বারাসত হাসপাতালে। তাঁর অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করলে সিএমওএইচ প্রলয়বাবু বলেন, “বিষয়টি আমার কানে এসেছিল। হাতেনাতে ধরতে পারিনি। তাই কিছু দিন নজরদারি করে একটু নিশ্চিত হতে চাইছিলাম।” কিন্তু দিব্যেন্দুবাবুর গতিবিধি যে সন্দেহজনক এবং তাঁকে যে কাজের সময়ে অফিসে পাওয়া যাচ্ছে না এটা স্বাস্থ্য ভবনকে জানাননি কেন? প্রলয়বাবুর সাফাই, “অফিসে দীর্ঘক্ষণ অনুপস্থিত দেখলে আমি ফোন করতাম, তখন উনি কোনও না কোনও অজুহাত দিয়ে কুড়ি মিনিট থেকে আধ ঘণ্টার মধ্যে হাজির হয়ে যেতেন। বুঝতে পারিনি উনি হাসপাতালের কাছেই বিভিন্ন ওষুধের দোকানে বসে রোগী দেখছেন আর ফোন পেয়ে চলে আসছেন।” যদিও উত্তর ২৪ পরগনার স্বাস্থ্য দফতরের অন্য একাধিক চিকিৎসক ও কর্মীরা জানিয়েছেন, চাপের মুখে পড়ে প্রলয়বাবু সত্য গোপন করছেন। দিব্যেন্দুবাবু যে কাজের সময়ে দোকানে রোগী দেখছেন, এই অভিযোগ সিএমওএইচকে একাধিক বার করা হয়েছে।

দিব্যেন্দু চক্রবর্তীর প্রেসক্রিপশনগুলি থেকে দেখা যাচ্ছে তিনি বারাসত ঈশ্বরীগাছা ও রাজীবপুর বাজারের দু’টি ওষুধের দোকানে সপ্তাহে দু’দিন করে রোগী দেখেন। রোগী দেখার সময় বিকেল তিনটে থেকে সন্ধ্যা ছ’টা। এ দিকে তিনি ‘ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিক হেল্থ অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাডার’-এর অফিসার। এটি সম্পূর্ণ নন-প্র্যাকটিসিং পদ এবং এর জন্য তিনি সরকারের থেকে নন-প্র্যাকটিসিং অ্যালাওয়েন্সও পান। তা হলে রোগী দেখতেন কেন? দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “রোগীরা একটু দেখে দেওয়ার অনুরোধ করত, সেটা ফেলতে পারতাম না। তাই মাঝে মাঝে ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখে দিতাম।” কিন্তু ওষুধের দোকানে নিয়মিত তাঁর রোগী দেখার কথা জানিয়েছেন দোকানমালিক থেকে রোগী প্রত্যেকেই। তার প্রেসক্রিপশনেও সে কথা ছাপা রয়েছে। দিব্যেন্দুবাবু জবাব দেন, “ওষুধের দোকানের লোকেরা নিজের মনের মতো সময় ছাপিয়ে দিয়েছে। আমি আর ওঁদের বাধা দিইনি। ওই কাগজেই কয়েক জনকে ওষুধ লিখে দিয়েছি।”

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “উনি যা করেছেন, তা গর্হিত অপরাধ। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা ভাবছি। যিনি জেলায় দফতরের তরফে অন্যতম নিয়মরক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন, তাঁর এমন কাজ নিন্দনীয়।” বিশ্বরঞ্জনবাবু আরও জানান, কলকাতার স্বাস্থ্য ভবন থেকে জেলায় কে কী করছে নজর রাখা অসম্ভব। জেলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সেটা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন তা করা হয়নি, সে ব্যাপারে মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন