ত্রিপুরায় প্রায় মড়কের আকার নিয়েছে ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার প্রকোপে ত্রিপুরায় মারা গিয়েছেন ২৪ জন। পার্বত্য ত্রিপুরার ধলাই জেলার দু’টি মহকুমা---গণ্ডাছড়া এবং লংতরাই ভ্যালিতে এই রোগের শিকার সব চেয়ে বেশি। এ ছাড়া, ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর খবর এসেছে ত্রিপুরার খোয়াই জেলা, দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম, এবং করবুক থেকেও। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সার্ভিলেন্স অফিসার প্রণব চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে।’’
এখনও পর্যন্ত সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে মোট ৮২৪ জন ব্যক্তি ম্যালেরিয়া সন্দেহে ভর্তি রয়েছেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী গণ্ডাছড়া ও লংতরাই ভ্যালির ম্যালেরিয়া কবলিত এলাকা ঘুরে দেখে এসেছেন। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছেন। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে এবং ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করার নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়ায় মৃতদের পরিবারকে ন্যাশনাল সোসাল বেনিফিট স্কিমে আর্থিক সহায়তা করা হবে।’’
এ দিকে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে ইতিমধ্যেই ৪২ জন আইসিডিএস ও স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে দফতর প্রয়োজনীয় ব্যস্থা নিতে চলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের অধীন ‘পরিবার কল্যাণ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন’ বিভাগের কর্তা এন ডার্লং জানান, আক্রান্তদের চিকিৎসার সব খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে। এ ছাড়াও, সরকারি খরচে রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্রে আনা, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অতিরিক্ত চিকিৎসক, নার্স, টেকনিসিয়ানের ব্যবস্থা, ম্যালেরিয়া কবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি ঘুরে রক্তের নমুনা সংগ্রহ, সংক্রমণ হলেই চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তির নির্দেশ, এলাকায় আরও বেশি করে মশা নিধনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে সরকারি কর্তাদের দাবি। রাজ্যে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এ বছর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য দফতর উদ্বিগ্ন। ডার্লং বলেন, ‘‘পরিস্থিতি উপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখা হচ্ছে।” গণ্ডাছড়া ও লংতরাই ভ্যালি মহকুমার সরকারি হাসপাতালগুলিতে বিশেষ শিবির চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ধলাই জেলার কুলাই, মনু, ছামনু, ছৈলংটা, মানিকপুর, গণ্ডাছড়া, গঙ্গানগর ইত্যাদি অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। গত এক সপ্তাহে খোয়াই জেলা ও দক্ষিণ ত্রিপুরার উদয়পুর এলাকায়ও ম্যালেরিয়া নতুন করে থাবা বসিয়েছে। খোয়াইয়ের পূর্ব ও পশ্চিম চম্পাছড়া, শিকারিবাড়ি, বিদ্যাবিল এলাকার বহু মানুষ জ্বরে কাবু হয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন।