ব্র্যান্ডেড ওষুধ লেখার অভিযোগ

মন্ত্রীকে নালিশ জানালেন কল্যাণীর মহকুমাশাসক

হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রীর সামনে যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বসেন তৃণমূলের কাউন্সিলর কিংবা খোদ মহকুমাশাসক?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৫৮
Share:

হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রীর সামনে যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বসেন তৃণমূলের কাউন্সিলর কিংবা খোদ মহকুমাশাসক? সোমবার সকালে এমনটাই ঘটল কল্যাণী গাঁধী মোমোরিয়াল হাসপাতাল ও কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।

Advertisement

এ দিন সকালে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এসেছিলেন ওই দুই হাসপাতালে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু ওই দুই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানও। প্রথমে গাঁধী হাসপাতালের বৈঠকে সকলের সামনে স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘স্যার, এখানে রোগীরা চিকিৎসা পেতে আসে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে তাঁদের অতিষ্ঠ হতে হয়। ওই তো সুপার সাহেব বসে রয়েছেন। উনি তো সব জানেন।’’ এরপরেই মন্ত্রী সুপারকে জানতে চান, ‘‘সুপার সাহেব কী হচ্ছে এ সব? কারা এ সব করছে? যারাই হোক, যে দলেরই হোক, কোনও রেয়াত করবেন না। সরকারি হাসপাতালে এ সব চলতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে পুলিশ ডেকে চক্র ভাঙুন।’’

এরপরের ঘটনা জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের। সেখানকার বৈঠকে কল্যাণীর মহকুমাশাসক স্বপন কুণ্ডু জ্যোতিপ্রিয়বাবুকে বলেন, ‘‘এখানে অনেকেই রয়েছেন। আমি একটা কথা বলতে চাই। আমার কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসছে যে, হাসপাতালে ওষুধ থাকতেও ডাক্তারবাবুরা বাইরের ওষুধ লিখছেন। এমন ওষুধ লিখছেন, যেগুলি ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানেও পাওয়া যায় না।’’ সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী ওই হাসপাতালের সুপারকে বলেন, ‘‘আপনি কড়া ব্যবস্থা নিন। যাতে এই জিনিস বন্ধ হয়।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের ব্যাখ্যা, এ দিন রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে দালাল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল ভূত রয়েছে সর্ষের মধ্যেই!

Advertisement

গাঁধী হাসপাতালে বৈঠক করতে এসে মন্ত্রী দেখলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দলেরই কাউন্সিলর, পুরসভার চেয়ারম্যানের ক্ষোভ রয়েছে বিস্তর। তাঁরা মন্ত্রীর সামনেই হাসপাতালের সুপার বীরেন্দ্র প্রসাদ শাউকে বললেন, ‘‘আপনাকে কত বার বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু আপনি কোনও ব্যবস্থাই নেননি। আমাদের নিজেদের মধ্যে যে বৈঠক করার কথা থাকলেও সেটা হয়নি।’’ বৈঠকের মধ্যেই এলাকার বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা সিনে অ্যাঞ্জিওগ্রাফি যন্ত্রটি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তার জন্য বাইরে চিকিৎসা করিয়ে রোগীদের হাজার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সুপার জানান, তিনি বার বার চেয়েও টেকনিশিয়ান পাননি। আর ঠিক তাঁর পাশে বসেই জেএনএম মেডিক্যালের সুপার স্নেহপ্রিয় চৌধুরী জানান, তিনি শুনেছেন যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোই হয়নি। সেই সময় বীরেন্দ্রবাবু মৃদু প্রতিবাদ করতে গিয়েও অনেকের বিরোধিতা করায় তিনি চুপ করে যান।

জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি আমিও জানি।’’ বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে টেকনিশিয়ান পাওয়াটা তেমন সমস্যার নয়। এ বার প্রচণ্ড রেগে মন্ত্রী সুপারকে বলেন, ‘‘আমি কোনও কথা শুনতে চাই না। আপনাকে একমাস সময় দিলাম। তার মধ্যে যে ভাবেই হোক টেকনিশিয়ানের ব্যবস্থা করে আপনি ওই যন্ত্র চালু করবেন।’’ মন্ত্রী নিজেও জানান, তাঁর কাছে অভিযোগ আসছে যে, সরকারি জায়গায় রোগীর বাড়ির লোকেদের রাতে থাকার জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা এই কাজ করেন। সেই ব্যক্তিকে ডাকা হলে তিনি জানান, বিছানা ও অন্যান্য জিনিসপত্রের জন্য মাথাপিছু ১০ টাকা করে নেওয়া হয়। এরপরেই মন্ত্রী নির্দেশ দেন, কেউ এ ভাবে সরকারি জায়গায় ব্যাবসা করতে পারেন না। টেন্ডার করে তা করতে হবে। রোগীর বাড়ির লোকেদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া যাবে না। ওই টাকা দেওয়া হবে রোগী কল্যাণ সমিতির তববিল থেকে। স্থানীয় কাউন্সিলর জানান, এখন গাঁধী হাসপাতালের এমন অবস্থা যে, সবদিন ৫০ জনও রোগীও থাকে না। আর আগে এখানে শয্যা পাওয়া যেত না। মন্ত্রী সুপারকে নির্দেশ দেন, হাসপাতালের যা যা প্রয়োজন সরকার তা দেবে। কিন্তু যে কোনও মূল্যে এই হাসপাতালের পুরনো চেহারা ফিরিয়ে আনতে হবে।

জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কয়েকটি নতুন ভবনের কাজ দীর্ঘদিন আগে শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি। কেন শেষ হয়নি জানতে চাইতেই পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা জানান, ঠিকাদার টাকা পাননি বলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘টাকার কোনও অভাব নেই। প্রয়োজনে আগাম টাকা দেওয়া হবে।’’ জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘ওই ঠিকাদার যদি অবিলম্বে তালা না খুলে দেন, তাহলে তাঁকে কালো তালিকাভূক্ত করা হবে।’’

মাদক বিরোধী পদযাত্রা। পুলিশের উদ্যোগে মাদক বিরোধী পদযাত্রা হল নন্দকুমারে। সোমবার নন্দকুমারের তালপুকুর এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। যোগ দেন বিধায়ক সুকুমার দে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার বেরা প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন