রুগণ শিশুদের পৌষ্টিক লাড্ডু বিলি শুরু হল

নিয়মিত চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সেখানে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। তার পরেও শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগা কমছে না হাওড়ায়। জেলায় মোট ১২৫১ জন অপুষ্ট শিশুর সন্ধান মিলেছে নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের সমীক্ষায়। সেই অপুষ্টি দূর করতে এ বার ভুট্টা-সহ বিভিন্ন শস্যদানা দিয়ে তৈরি ‘পৌষ্টিক লাড্ডু’ বিলি শুরু করল প্রশাসন।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৮
Share:

নিয়মিত চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সেখানে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। তার পরেও শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগা কমছে না হাওড়ায়। জেলায় মোট ১২৫১ জন অপুষ্ট শিশুর সন্ধান মিলেছে নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের সমীক্ষায়। সেই অপুষ্টি দূর করতে এ বার ভুট্টা-সহ বিভিন্ন শস্যদানা দিয়ে তৈরি ‘পৌষ্টিক লাড্ডু’ বিলি শুরু করল প্রশাসন।

Advertisement

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে ছ’মাস থেকে ছ’বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। পড়ানোও হয়। গর্ভবতী মহিলারাও সেখানে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার পান। সে সব খেয়ে কোনও ফল হচ্ছে কিনা, তা জানতে নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর থেকে শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। ওজন নেওয়া হয়। তাতেই মিলেছে জেলায় ওই তথ্য।

ওই দফতর সূত্রের খবর, প্রায় প্রতিটি ব্লকেই শিশুদের কেউ কেউ অপুষ্টিতে ভুগছে। ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে ধরে নেওয়া হয় সেই শিশুটি অপুষ্টিতে ভুগছে। ১২৫১ জনের প্রত্যেকেরই ওজন স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা কম। অথচ, ওই কেন্দ্রগুলিতে প্রতি দিন শিশুদের জন্য বরাদ্দ মাথাপিছু ৪০ গ্রাম করে চালের ভাত, ১৩ গ্রাম ডাল, ১ মিলিলিটার ভোজ্য তেল, ৫০ পয়সার সব্জি এবং ১ মিলিগ্রাম নুন। এ ছাড়া সপ্তাহে তিন দিন একটি করে ডিম দেওয়া হয়। এর পরেও এত শিশুর অপুষ্টিতে ভোগার কারণ কী?

Advertisement

দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্রগুলিতে শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবার দিলে হবে না, শিশুদের বাড়ির আর্থিক অবস্থা, পরিবেশএ সবের উপরেও তাদের ভাল থাকা নির্ভর করে। যারা অপুষ্টিতে ভোগে, তাদের বাড়িতে চরম দারিদ্র। ফলে, এক বেলা পুষ্টিকর খাবার পেলেও বাকি সময় তাকে বাড়ির খাবারই খেতে হয়। দরিদ্র পরিবারগুলির পক্ষে শিশুদের জন্য সুষম ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা সোনার পাথরবাটি। তা ছাড়া, এখনও অনেক পরিবার জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে না।

শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে অবশ্য এ বারে কার্যত রাস্তায় নেমেছে জেলা নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর, জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর এবং জেলা পরিষদ। শুক্রবার জগৎবল্লভপুর, সাঁকরাইল, আমতা-২, উলুবেড়িয়া-২ এবং ডোমজুড়ে মোট ৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সচেতনতা শিবির আয়োজিত হয়। এ দিন পরীক্ষামূলক ভাবে ‘পৌষ্টিক লাড্ডু’ অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এটি এক ধরনের মণ্ড, যা বাড়িতেই তৈরি করে শিশুদের খাওয়ানো যাবে। বিনা পয়সায় এই মণ্ড নিয়মিত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে বিলি করা হবে। শিশুদের রোজ একটি করে ডিমও দেওয়া হবে।

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “শুধুমাত্র অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হলেই হবে না, মায়েদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। ১৯৭৫ সাল থেকে কেন্দ্রগুলি চলছে। কিন্তু শিশুদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় মায়েদেরও যে কিছু করণীয় আছে, সে কথা বোঝানো হয়নি। আমরা সেই কাজটিই করব।” বাকি ব্লকগুলিতেও নিয়মিত এই ভাবে সচেতনতা শিবির হবে বলে সীতানাথবাবু জানান।

তবে, শিশুদের অপুষ্টি দূর করার কাজটা যে সহজ নয় তা মেনে নিয়েছেন নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর। তার প্রমাণও মিলেছে উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের মধুবাটি রায়পাড়ায়। এখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পড়াশোনা করে ৯৬ জন শিশু। তাদের মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা গত সেপ্টেম্বর মাসেও ছিল ৯। নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ জনে। এই কেন্দ্রের নিয়মিত ছাত্র যমজ শিবনাথ সর্দার ও শিবানি সর্দারের ওজন মাত্র ৫ কিলোগ্রাম করে। স্বাভাবিকের থেকে যা অন্তত ২ কিলোগ্রাম কম। তাদের মা জানান, স্বামীর আয় ৩০০ টাকা। ফলে, ছেলেমেয়েদের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো যায় না। তাঁদের আরও দু’টি সন্তান রয়েছে।

এই অঙ্গনওয়াড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত রত্না সরকার বললেন, “বাকি ১০ জনের মধ্যে অনেকেরই শরীর খারাপ হওয়ায় ওজন কমেছে।” জেলা নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা জানান, অনেক পরিবারের চিকিৎসক দেখানোর মতো সামর্থ্য নেই। ফলে, সেই সব শিশুর ওজন কমে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন