রেজিস্ট্রেশন নেই, তবু অবাধে রোগী দেখছেন ‘ডাক্তার’

৫৯৬৩০-এই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি কার? রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নথিতে দেখা যাচ্ছে, ওই নামে রিনা সাহা নামে এক চিকিৎসক রয়েছেন। যাঁর স্থায়ী ঠিকানা জলপাইগুড়ি। অস্থায়ী ঠিকানা কলকাতার পূর্ব পুঁটিয়ারি। অথচ ওই একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরে আরও এক জন ‘চিকিৎসক’ রোগী দেখছেন, প্রেসক্রিপশন লিখে যাচ্ছেন। তাঁর নাম সি কে সাহা ওরফে চন্দনকুমার সাহা।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩২
Share:

৫৯৬৩০-এই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি কার? রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নথিতে দেখা যাচ্ছে, ওই নামে রিনা সাহা নামে এক চিকিৎসক রয়েছেন। যাঁর স্থায়ী ঠিকানা জলপাইগুড়ি। অস্থায়ী ঠিকানা কলকাতার পূর্ব পুঁটিয়ারি। অথচ ওই একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরে আরও এক জন ‘চিকিৎসক’ রোগী দেখছেন, প্রেসক্রিপশন লিখে যাচ্ছেন। তাঁর নাম সি কে সাহা ওরফে চন্দনকুমার সাহা। যাঁর বাড়ি দুর্গানগর। মেডিক্যাল কাউন্সিল জানাচ্ছে, এই নাম এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সাযুজ্যে কোনও চিকিৎসক তাদের তালিকায় নেই।

Advertisement

তা হলে ইনি কে? দমদম, এয়ারপোর্ট এলাকা, বনগাঁ, রানাঘাট, কৃষ্ণনগরে যাঁর চেম্বার চলছে? প্রেসক্রিপশনে গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট হিসেবে পরিচয় দেওয়া রয়েছে। এমডি, ডিএম-নানা ডিগ্রিরও উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে নিজেকে চন্দনকুমার সাহা বলে মেনে নিলেন যিনি, তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “আমার পরিচয় নিয়ে আপনাদের এত মাথা ব্যথা কীসের?” তিনি তখন আসানসোলে ‘রোগী দেখছেন’ বলে দাবি করে রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে তিনি বললেন, “আপনাদের এ সব নিয়ে কে খোঁজ করতে বলল? আমি কারও পরোয়া করি না। জেনে রাখুন, কেউ আমার কিচ্ছুটি করতে পারবে না।” উল্টে যাঁরা তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর করছেন, তাঁদেরই ‘বারোটা বাজিয়ে হাজতে ঢুকিয়ে দেওয়া’র হুমকি দিয়েছেন তিনি।

অভিযুক্তের লেখা প্রেসক্রিপশন।
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

Advertisement

সম্প্রতি চন্দনবাবুর কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় দমদমের একটি ক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মী খোঁজ শুরু করেন। তার পরেই জানা যায়, ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বরে এমন নামে কেউ নেই। শুভঙ্কর কর্মকার নামে ওই কর্মীর অভিযোগ, “কত মানুষ যে ওঁর কাছে ঠকছেন তার ইয়ত্তা নেই।” চার মাস আগে দমদম থানায় চন্দন সাহার নামে লিখিত অভিযোগও করেন তিনি। দমদম থানা জানিয়েছে, তারা খোঁজ শুরু করেছে, কিন্তু এ বিষয়ে যা করার কাউন্সিলকেই করতে হবে। থানার অফিসাররা জানান, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা সবিস্তার রিপোর্ট তৈরি করে কাউন্সিলে পাঠাবেন।

মেডিক্যাল কাউন্সিল সূত্রে খবর, চন্দনকুমার সাহা নামে তিন জন চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। কিন্তু কারও সঙ্গেই ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বর মিলছে না। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল রেজিস্ট্রি ঘেঁটেও দেখা যাচ্ছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, অন্য রাজ্যেও এই রেজিস্ট্রেশন নম্বরে এমন নামের কেউ নেই।

চন্দন সাহার রোগীদের একাংশের বক্তব্য, গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীর নাম উল্লেখ করেন ওই ‘ডাক্তার’। তবে অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, “এমন কাউকে আমি চিনি না। যদিও এর বিষয়ে বহু অভিযোগ আমার কানেও এসেছে। অবিলম্বে প্রশাসনের লোকটিকে গ্রেফতার করা।”

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্মল মাজি বলেন, “কোনও রোগী যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তা হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

কিন্তু প্রশ্ন হল, বিষয়টি জানার পরে কেন লিখিত অভিযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে মেডিক্যাল কাউন্সিলকে? কেন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তারা বিষয়টির তদন্ত করে পুলিশের দ্বারস্থ হবে না? নির্মলবাবু বলেন, “এটাই কাউন্সিলের নিয়ম। আগেও এই ধরনের অভিযোগ পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তাই প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।”

সমস্যা হল, সাধারণ রোগীর পক্ষে ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখে তা যাচাই করে তার পরে চিকিৎসা করাতে যাওয়া সম্ভব নয়। তা হলে কী ভাবে চিকিৎসকের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন তাঁরা? এর উত্তর আপাতত কারও কাছেই নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন