শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে চিকিত্সাধীন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগিণী। নিজস্ব চিত্র।
শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর নিশ্চিত হলেও আবর্জনা এবং জমা জল পরিষ্কার করতে পুরসভা এখনও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। এমনকী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব নির্দেশ দেওয়ার পরেও এ ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে প্রশ্ন উঠেছে।
চলতি অক্টোবর মাসেই শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ১৯ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে সংখ্যাটা ৩৫ জন। জ্বরে আক্রান্ত খালপাড়ার পবন অগ্রবালের পরিবার। রবিবার তাঁদের পরিবারের সদস্যা কিশোরী অঞ্চিতা অগ্রবালের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। অঞ্চিতার শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় শনিবার রাতেই তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। তাঁদের পরিবারের আরেক মহিলা অনিতা দেবী এ দিন জ্বরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকেও বিকেলে একই নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে হয়েছে। অথচ তাঁদের বাড়ির পাশে একটি পরিত্যক্ত জমিতে দীর্ঘদিন ধরেই আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিবারের সদস্যরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার পরে এখনও ওই জায়গা পরিষ্কার করতে পুরসভা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিবারের লোকেরা।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “কলকাতায় রয়েছি। ফিরে গিয়ে সাফাই পরিষেবার বিষয়টি দেখছি। যে করেই হোক সোমবারের মধ্যে পবনবাবুর বাড়ির পাশে ওই আবর্জনা সরাতে বলা হয়েছে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি।” পুর কমিশনারের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় সমস্যা জানাতে কয়েকজন বাসিন্দা ফোন করে তাকে পাননি বলে অভিয়োগ। পুরসভার সচিব সপ্তর্ষি নাগ জানিয়েছেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিজেপি’র জেলা কমিটির নেতা পবনবাবুর অভিযোগ, বাড়িতে একের পর এক সদস্য জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এক জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। অথচ বাড়ির পাশে মশার আঁতুরঘর ওই পরিত্যক্ত জায়গা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। রোগ প্রতিরোধ করতে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিতবাবু জানান, ওই আবর্জনা সাফ করতে বলা হয়েছে। পুরসভার ৫,৭ এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্ত বেশি মেলায় পুরসভাকে সাফাইয়ের কাজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর।
শুক্রবার খালপাড়ার ওই পরিবার এবং আশেপাশের বাসিন্দা মোট ১৪ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। এ দিন তার রিপোর্ট হাতে পেয়েছে তারা। পবনবাবুর বাড়ির ১০ জন জ্বরে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ৬ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে এনএসওয়ান পরীক্ষায়।
এ দিন শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম এবং ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলির একাংশকে নিয়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের হলঘরে বৈঠক করে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তবে নার্সিংহোমগুলিতে কোথায় কত জ্বর বা ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী রয়েছেন তা নিয়ে সঠিক তথ্য বৈঠকের পরেও দিতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য দফতর। যদিও নার্সিংহোমগুলির একাংশের দাবি তারা সমস্ত তথ্যই স্বাস্থ্য দফতরকে জানাচ্ছেন। তা ছাড়া নার্সিংহোমগুলি থেকে ডেঙ্গি আক্রান্তদের বিষয়ে তথ্য যাতে চাউর না হয় সে ব্যাপারে নার্সিংহোমগুলি থেকে আসা প্রতিনিধিদের একাংশকে বিষয়টি নিয়ে হইচই করতে নিষেধও করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আড়াল করতে চাইছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তা ছাড়া শহরের ৫০টির বেশি নার্সিংহোম থাকলেও এ দিন ৩০টি নার্সিংহোমকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। বাকিদের ডাকা হয়নি কেন সে ব্যাপারেও সদুত্তর নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ৮০ শতাংশ রোগী যে সমস্ত নার্সিংহোমে যান তাদের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। ২৭ টি নার্সিংহোমের প্রতিনিধিরা বৈঠকে ছিলেন। দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “নার্সিংহোমগুলিকে প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। ডেঙ্গি নিয়ে গুরুতর পরিস্থিতি হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। নার্সিংহোমে ঠিক কত ডেঙ্গি আক্রান্ত রয়েছেন সেই তথ্য মঙ্গলবারের মধ্যে মিলবে বলে আশা করছি।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে এ দিন জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গি রোগীদের চিকিত্সা নিখরচায় করা হচ্ছে। তবে শহরের নার্সিংহোমগুলিতে বর্তমানে একহাজার টাকারও বেশি ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ে ম্যাক এলাইজা পরীক্ষা করতে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ দিন বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনার পর ঠিক হয়েছে, সবার্ধিক ৫০০ টাকা নিতে পারেন তারা। বিভিন্ন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাতে রাজিও হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। ডেঙ্গির চিকিত্সা পরিষেবা নিয়ে ১০ নভেম্বরের মধ্যে শহরে চিকিত্সক এবং সংশ্লিষ্ট পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করতে চায় স্বাস্থ্য দফতর।