শরীরে চেনা উপসর্গ নেই, রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু

জ্বর-মাথাব্যথার মতো কোনও চেনা উপসর্গ নেই। কিন্তু, রক্ত পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে দেহে রয়েছে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণু। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামে গ্রামবাসীদের রক্ত পরীক্ষা করে এমনটাই দেখলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

রাজু সাহা

কুমারগ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৮
Share:

কামাখ্যাগুড়ির ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছ’মাসের মিকা নার্জিনারি।—নিজস্ব চিত্র।

জ্বর-মাথাব্যথার মতো কোনও চেনা উপসর্গ নেই। কিন্তু, রক্ত পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে দেহে রয়েছে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণু। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামে গ্রামবাসীদের রক্ত পরীক্ষা করে এমনটাই দেখলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

ডুয়ার্সের ওই এলাকা এমনিতেই ফরেস্ট ম্যালেরিয়া-প্রবণ। নিয়ম করে প্রতি বছরই ডুয়ার্সে ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। কিন্তু গত কয়েকবছর রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। কমে গিয়েছে রোগের তীব্রতাও। তাই মৃত্যুর ঘটনাও চোখে পড়ছে না। জীবাণু বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বছরের পর বছর একই জীবাণু শরীরে ঢুকতে ঢুকতে ডুয়ার্স এলাকার মানুষের শরীরে ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছে প্রতিরোধ শক্তি।

এ বার এই এলাকায় ফরেস্ট ম্যালেরিয়ায় ন’বছরের এক কিশোরের মৃত্যুতে তাই উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে, ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার পুরনো জীবাণু হানা দিলে এমনটা হওয়ার কথা নয়। নিজের চরিত্র বদলে নতুন প্রজাতির ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণু হানা দিল কি না সেই আশঙ্কার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকেরা।

Advertisement

সেই আশঙ্কা থেকেই গত ২৩ অগস্ট কুমারগ্রামের মরাখাতা গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সকলের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। এর পরেই দেখা যায় ১০ জনের রক্তে ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম রয়েছে। এঁদের মধ্যে ছ’জনের জ্বর, গা-হাত পা ব্যথার মতো উপসর্গ ছিল। কিন্তু, চার জনের ম্যালেরিয়ার কোনও উপসর্গ ছিল না। সেই চার জনের মধ্যে রতন নার্জিনারি, বুধুরাম ওঁরাও, সুখদেব ওঁরাও প্রাপ্তবয়স্ক। মিকা নার্জিনারির বয়স মাত্র ছ’মাস।

জীবাণু বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, ম্যালেরিয়ার জীবাণু থাকলেও যে চারজনের কোনও উপসর্গ মেলেনি তাদের সবার দেহেই সম্ভবত ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। জিনগত ভাবে কোলের শিশুরাও ওই প্রথিরোধ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে। কুমারগ্রামের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু ঠাকুর বলেন, “এলাকাটি ম্যালেরিয়া প্রবণ।

অনেক সময় ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় এমন হতে পারে। তবুও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক পার্থপ্রতিম দাস বলেন, “এমন হতেই পারে। তবে সরকারি ভাবে আমাদের কাছে কোনও রিপোর্ট আসেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে।”

কোলের শিশুদের মালেরিয়ার উপসর্গ না থাকায় চিকিৎসকের অন্য একটি দল অবশ্য অন্য রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। যেমন শিলিগুড়ির চিকিৎসক শঙ্খ সেনের কথায়, “ওই জীবাণু শরীরের ভিতরে সক্রিয় হতে অনেক সময় ৯-১২ দিন সময় নেয়। তার আগে বাহকের দেহে কোনও উপসর্গ নাও থাকতে পারে। হয়তো জীবাণু দেহে ঢুকে সক্রিয় হওয়ার আগেই রক্ত পরীক্ষা হওয়ায় ধরা পড়েছে।”

তাঁর মত, “অনেক সময় ম্যালেরিয়া-প্রবণ এলাকায় প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু তা হলেও দেহে ফ্যালসিফেরামের জীবাণু মিললে চিকিৎসা করানো জরুরি। জীবাণু সক্রিয় হয়ে কোষ ভাঙতে শুরু করার আগেই চিকিৎসা শুরু করাতে হবে।”

মরাখাতা এলাকার কাছে শামুকতলাতেও ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে। শামুকতলা প্রাথমিক হাসপাতালের চিকিৎসক কানাইলাল ঘোষ বলেন, “উপসর্গ বিহীন ম্যালেরিয়া যখন ধরা পড়েছে, তখন বিশদে পরীক্ষা করানো জরুরি। জলপাইগুড়ির জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা অবশ্য মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে রোগের বাহকের দেহে উপসর্গ নাও থাকতে পারে।

কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে। তিনি বলেন, “কুমারগ্রামে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে কি না তা দেখা হচ্ছে।”

স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার কুমারগ্রামে নতুন করে আরও পাঁচ জনের রক্তে ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিলেছে। তিনজনের বাড়ি কুমারগ্রামের সঙ্কোশ চা বাগানে। বাকি দু’জন মরাখাতার বাসিন্দা। এই মুহূর্তে কামাখ্যাগুড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ জন চিকিৎসাধীন।

এই নিয়ে কুমারগ্রাম ব্লকে গত ১০ দিনে ২০ জন ফরেস্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলল। এ দিন সঙ্কোশ চা বাগান ও মরাখাতা গ্রামে মশার লার্ভা মারার তেল ছড়ানো হয়েছে। বাড়ি-বাড়ি ঘুরে রক্তের নমুনা সংগ্রহের কাজও চলছে। ওই সব এলাকায় ক্যাম্প করে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন