অভিযানের পরে চরে বেড়াচ্ছে শুয়োর।—নিজস্ব চিত্র।
দিন কয়েক আগে একবার হানা দিয়ে ঘরে ঘরে শুয়োরের সংখ্যা গুনে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। নাম লিখে নিয়ে গেছে শুয়োরপালকদের। পুরসভা থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে শহরে শুয়োর রাখা যাবে না। হুগলির আরামবাগ মহকুমা শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে এই ধরনের অভিযানে বিভ্রান্ত সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, সরকার থেকে আগে কোনও সচেতনতার বার্তা না দিয়ে হঠাৎ এ ধরনের অভিযানে তাঁরা বিভ্রান্ত। উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ছড়ানোর কারণে রাজ্যের সমস্ত জেলায় শুয়োর ধরার অভিযান শুরু হয়েছে। যদিও অভিযান শুরু হলেও এখনও শহরের যত্রতত্র শুয়োর চড়ে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে।
শুয়োর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। পুর এলাকায় শুয়োর চাষ করেন এমন লোকদের অভিযোগ, পুরসভা বা প্রশাসনের উদ্বেগ যুক্তিযুক্ত হলেও তাঁদের কথাও ভাবা দরকার। কারণ, শুয়োর চাষ করেই তাঁদের সংসার চলে। অভিযান চালিয়ে শুয়োর না ধরে বরং পুরসভার পক্ষ থেকে তাঁদের বলে দেওয়া হোক, কোথায় কি ভাবে শুয়োর চাষ করা দরকার। বা শুয়োর রাখতে গেলে কি ধরনের সতর্কতা নেওয়া জরুরি। তাতে সবদিক বজায় থাকবে। স্থানীয় এক বাসিন্দা রাজকুমার হাড়ির দাবি, “পুরসভা আমাদের বলে দিক কোথায়, কিভাবে শুয়োর রাখব। খামার করার জায়গা দিক।”
যদিও পুরসভার পক্ষ থেকে এখনও সে ধরনের কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “এখনই বিকল্প ব্যবস্থা কিছু হয়নি। আমরা অবিলম্বে শহর থেকে শুয়ারের পাল সরাতে বলা হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে তা না সরালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরামবাগে দ্বারকেশ্বর নদীর গায়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুইপার পাড়া। সাকুল্যে ৩০ ঘর বাসিন্দা। প্রায় প্রতি ঘরেই ছোট বড় মিলিয়ে গড়ে ৮ থেকে ১০টি করে শুয়োর। সেই হিসাবে শুয়োরের সংখ্যা প্রায় ৩০০টি। যদিও পুরসভার চেয়ারম্যানের দাবি, অভিযান শুরু পর ওই এলাকায় মাত্র ২৬টি শুয়োর রয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে ওই সংখ্যাটাও শূন্য হয়ে যাবে।
পুরসভার হিসাবে অবশ্য জল ঢেলে দিয়েছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তারা ১৭০টির মতো শুয়োরের খোঁজ পেয়েছে। তাদের বাসস্থানও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ব্লক প্রাণি সম্পদ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত করতে শুয়োর পালনে সরকার নানা অনুদান এবং ঋণের সুযোগ করে দিয়েছে। এটা লাভজনক। কারণ, শুয়োরের বংশ বৃদ্ধির হার বেশি। তাড়াতাড়ি বাড়া ছাড়াও অল্প বয়সে বাচ্চা দেয়। বাজারদরও ভাল। শুয়োরের মাংস, লোম, মল সবই বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শুয়োর নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া উপায় নেই।