স্থায়ী বহির্বিভাগ নেই, হেমতাবাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিত্য সমস্যায় রোগীরা

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরি হলেও, তৈরি হয়নি স্থায়ী বহির্বিভাগ। ফলে গত চার বছর ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগের সামনে রোগীদের পরিবারের লোকজনদের বিশ্রামাগার দখল করে চলছে অস্থায়ী বহির্বিভাগ। এরফলে হাসপাতালে আনা রোগীদের জরুরি বিভাগে ঢোকাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের পরিবারের লোকজনকে।

Advertisement

গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৯
Share:

এভাবেই অপেক্ষা করতে হয়ে রোগীর পরিজনদের। তরুণ দেবনাথের তোলা ছবি।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরি হলেও, তৈরি হয়নি স্থায়ী বহির্বিভাগ। ফলে গত চার বছর ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগের সামনে রোগীদের পরিবারের লোকজনদের বিশ্রামাগার দখল করে চলছে অস্থায়ী বহির্বিভাগ। এরফলে হাসপাতালে আনা রোগীদের জরুরি বিভাগে ঢোকাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের পরিবারের লোকজনকে। শুধু তাই নয়, বিশ্রামাগার দখল করে বহির্বিভাগ চালু থাকায় চিকিত্‌সাধীন রোগীদের পরিবারের লোকজনকে দিনভর স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই সমস্যার জেরে রোগী, তাঁদের পরিবারের লোকজন ও বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরনো ভবনের ছ’টি ঘর ফাঁকা পড়ে থাকলেও কেনও সেগুলিতে স্থায়ী বহির্বিভাগ চালু করা হচ্ছে না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

Advertisement

হেমতাবাদ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ধনঞ্জয় বনিক বলেন, “এই বিষয়ে যা বলার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা বলবেন। তবে চিকিত্‌সক ও নার্সের অভাবে সুষ্ঠ চিকিতত্‌সা পরিষেবা দেওয়ার অনেক পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত করা সম্ভব হচ্ছে না।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্ত জানান, সমস্যার বিষয়টি খোঁজ না নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। হেমতাবাদ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা রোগীদের জন্য মোট ৩০টি শয্যা রয়েছে। তিন জন চিকিতত্‌সক, ছ’জন নার্স ও ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। প্রতিদিন হেমতাবাদের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা থেকে গড়ে তিনশো জন রোগী এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে ভিড় করেন। এছাড়াও প্রতিদিন গড়ে ২০ জন রোগী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন থেকে পুরনো ভবনের দূরত্ব প্রায় দু’শো মিটার। ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিত্‌সকদের চারটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুরনো ভবনের ছ’টি ঘরে যেখানে নতুন ভবন তৈরি হওয়ার আগে স্থায়ী বহির্বিভাগ ছিল সেখানে ফের স্থায়ী বহির্বিভাগ চালু করা হলে কর্তব্যরত চিকিত্‌সকদের একইসঙ্গে বহির্বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও জরুরি বিভাগে চিকিত্‌সা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। সেকথা মাথায় রেখেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনের জরুরি বিভাগের সামনে রোগীদের বিশ্রামাগারেই অস্থায়ী বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে।

Advertisement

প্রায় ছয় বছর আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা খরচ করে হেমতাবাদ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নতুন ভবনটি তৈরি করে। নতুন ভবন চালু হওয়ার পরও প্রায় দু’বছর পুরনো ভবনেই বহির্বিভাগ চালু ছিল। এরপর চিকিত্‌সক ও নার্সের অভাবে নতুন ভবনে ঢোকার মুখে জরুরি বিভাগের সামনের রোগীদের পরিজনদের বিশ্রামাগারে অস্থায়ীভাবে বহির্বিভাগ সরিয়ে নিয়ে যায় ব্লক স্বাস্থ্য দফতর।

হেমতাবাদের চৈনগর এলাকার বাসিন্দা পেশায় কৃষক মঞ্জুর আলম বলেন, “কিছুদিন আগে আমার মেয়ের অসহ্য পেটেব্যাথা শুরু হওয়ায় ওকে বেলা ১১টা নাগাদ হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু বহির্বিভাগের সামনে একশো’রও বেশি মানুষ থাকায় মেয়েকে ভিড় ঠেলে জরুরি বিভাগে ঢোকাতেই ১৫ মিনিট সময় লেগে যায়। রোগীদের স্বার্থে এভাবে জরুরি বিভাগের সামনে বহির্বিভাগ চালু রাখা ঠিক নয়।”

বাঙালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী স্বপন বর্মন জানান, তাঁর খুড়তুতো ভাই জ্বর ও পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর কথায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরনো ভবনে একাধিক ঘরকে কাজে না লাগিয়ে নতুন ভবনের বিশ্রামাগার দখল করে চলছে বহির্বিভাগ। তাই দিনভর আমার মতো চিকিত্‌সাধীন রোগীদের পরিজনকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটাতে হচ্ছে। বসারও জায়গা নেই কোনও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন