স্যালাইন-চ্যানেলের বদলে কাটা গেল শিশুর আঙুলই

স্যালাইনের চ্যানেল খুলতে গিয়ে কাটা গেল সদ্যোজাত শিশুর আঙুল! ঘটনাটি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। কিন্তু, কে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। পাঁচ দিনের ওই শিশু কন্যার মা জানিয়েছেন, ছাপা শাড়ি পরা এক মহিলা এই কাজ করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৯
Share:

স্যালাইনের চ্যানেল খুলতে গিয়ে কাটা গেল সদ্যোজাত শিশুর আঙুল!

Advertisement

ঘটনাটি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। কিন্তু, কে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। পাঁচ দিনের ওই শিশু কন্যার মা জানিয়েছেন, ছাপা শাড়ি পরা এক মহিলা এই কাজ করেছেন। সেই মহিলার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং শিশুটির পরিবারের অনুমান, ওই মহিলা কোনও আয়া বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হতে পারেন। অথচ ঘটনার সময় ওই ওয়ার্ডে দু’জন নার্স কর্তব্যরত ছিলেন। তাঁরা কেন স্যালাইনের সুচ খুললেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিশুটির পরিবার। বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে, নার্সরা এমন কাজ করতে পারেন না। ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলেন বাঁকুড়ার ইঁদপুর থানা এলাকার বাসিন্দা মঙ্গলা বাউড়ি। শুক্রবার তিনি মেয়ের জন্ম দেন। শিশুটির ওজন ছিল মাত্র ১.৬ কেজি। সে জন্য ওই শিশুকে নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিউ)-এ রাখা হয়েছিল। তার বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে স্যালাইন চলছিল। মঙ্গলাদেবীর দাবি, “বুধবার রাত ৮টা বা ৯টা হবে। ওই সময় আমার এক আত্মীয়া এনআইসিউ-এর কাছাকাছি ছিলেন। তখন ওই বিভাগে নার্স থাকলেও তিনি স্যালাইনের চ্যানেল খুলতে যাননি। আমার আত্মীয়া বলেছেন, চ্যানেল খোলার চেষ্টা করছিলেন ছাপা শাড়ি পরা এক মহিলা। প্রথমে আঙুলে জড়ানো লিউকোপ্লাস্ট ওই মহিলা খুলতে পারেননি। পরে কাঁচি এনে লিউকোপ্লাস্ট কাটতে গিয়ে ওইটুকু মেয়ের বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের ডগাটাই কেটে দিলেন! ৫-৭ মিনিটের মধ্যে পুরো ঘটনাটি ঘটে গেল। ওই মহিলা চলে যাওয়ার পরে আমার আত্মীয়া বিষয়টি নজর করেন।” মঙ্গলাদেবীর ক্ষোভ, “নার্সরা নিজেদের কর্তব্য করলে হয়তো এমনটা হত না।”

Advertisement

বৃহস্পতিবার শিশুটির পরিবারের লোকেরা হাসপাতাল সুপারের কাছে মৌখিক ভাবে গাফিলতির অভিযোগ করেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ঘটনার দিন ওই বিভাগে দায়িত্বে ছিলেন শর্মিষ্ঠা কুণ্ডু ও মৌসুমী মাঝি নামে দুই নার্স। তাঁদের সঙ্গে এ দিন বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। কিন্তু, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, নার্সরা থাকতে কেন স্যালাইনের চ্যানেল খোলার মতো কাজ কেন করবেন অন্য কেউ? ঘটনা হল, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেই এই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই রোগীদের সেলাই বা স্যালাইন লাগানো ও খোলার কাজ নিয়মবিরুদ্ধ ভাবেই করেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা। এক রোগীর ওষুধ বা ইঞ্জেকশন অন্য জনকে দেওয়ার নজিরও রয়েছে একাধিক হাসপাতালে।

বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার বলেন, “বর্তমানে এসএনসিইউতে রেখেই শিশুটির চিকিৎসা চলছে। বৃহস্পতিবার রাতেই তার আঙুলে অস্ত্রোপচার করে ক্ষতস্থান সেলাই করা হয়েছে। যে দুই নার্সের উপস্থিতিতে কেন এমন ঘটল সে জন্য ওই দুই নার্সকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”

তাতে অবশ্য জোড়া লাগবে না ওই টুকু বাচ্চার কাটা যাওয়া আঙুল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন