সতর্ক হলে ঠেকানো যায় হৃদরোগও

শরীর তার মতো করে ঠিক জানান দিয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞতার জন্য রোগী বা তাঁর আশপাশে থাকা কেউ বুঝতেই পারলেন না যে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে সময় মতো চিকিৎসাও শুরু হল না। যে মৃত্যু হয়তো রুখে দেওয়া যেত তা শেষ পর্যন্ত করা গেল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ২১:০৬
Share:

শরীর তার মতো করে ঠিক জানান দিয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞতার জন্য রোগী বা তাঁর আশপাশে থাকা কেউ বুঝতেই পারলেন না যে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে সময় মতো চিকিৎসাও শুরু হল না। যে মৃত্যু হয়তো রুখে দেওয়া যেত তা শেষ পর্যন্ত করা গেল না।

Advertisement

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘সোসাইটি ফর কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন’ (এসসিআই) আয়োজিত সাম্প্রতিক আলোচনা সভায় চিকিৎসকেরা বার বার জানালেন, হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে চলতি ধারণা থেকে বেরোতে হবে। একমাত্র বুকের বাঁ দিকে ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক নয়।

তা হলে আর কী ধরনের শারীরিক লক্ষণ দেখে সতর্ক হতে হবে?

Advertisement

চিকিৎসকেরাই জানালেন, চোয়ালে বা কাঁধ থেকে হাতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বা বুকে ভারী পাথর চাপিয়ে দেওয়ার অনুভূতি হতে পারে। কোনও কোনও সময় আক্রান্তের শুধু দমের কষ্ট হয়, দরদরিয়ে ঘাম হয়, নাড়ির গতির হেরফের হয় বা বমি-বমি ভাব হয়। এই রকম হলে ঝুঁকি না নিয়ে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি, কম বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হয়।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কাদের বেশি, হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে কী খাওয়া উচিত, জীবনযাপনে কী পরিবর্তন আনা উচিত, পেসমেকার বসানোর পর বা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি-র পর কোন কোন ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, এই সবই ছিল গত ২৫ জুলাইয়ের সভার আলোচ্য বিষয়বস্তু। ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল যেমন জানালেন, ছেলেদের হৃদরোগের আশঙ্কা মেয়েদের তুলনায় বেশি। আবার যাঁদের বংশে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, যাঁরা উচ্চাকাঙ্খী বা খুঁতখুঁতে এবং নিজেদের স্বভাবের জন্যই জীবনে ‘স্ট্রেস’ ডেকে আনেন, যাঁরা ধূমপান করেন বা মদ্যপান করেন, যাঁদের ওজন বেশি এবং শারীরিক পরিশ্রম কম, যাঁরা ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন তাঁদের সব সময়েই হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।

আর এক ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট দেবদত্ত ভট্টাচার্যের কথায়, পরিমাণে কম, কিন্তু বারে বারে খেতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোজ সকালে হাঁটা বা ব্যায়াম করা দরকার। ভাত-রুটি কমিয়ে রোজের খাবারে যতটা সম্ভব শাকসব্জি-ফল বাড়াতে হবে, ডিপ ফ্রাইয়ের বদলে স্যালো ফ্রাই অর্থাৎ অল্প তেলে খাবার সেঁকে নিতে হবে, খাবার পাতে কাঁচা নুন একেবারে ত্যাগ করতে হবে, প্রাতরাশে খাবারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি আর রাতে খাবার সবচেয়ে কম খেতে হবে, অল্প মাখন খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু কখনওই মার্জারিন খাওয়া যাবে না।

যাঁদের পেসমেকার রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট মনোতোষ পাঁজার পরামর্শ— মোবাইল ব্যবহারের সময় সেটি যেন পেসমেকারের থেকে কমপক্ষে ছয় ইঞ্চি দূরে থাকে। যে দিকে পেসমেকার রয়েছে তার উল্টো দিকের কানে ও হাতে মোবাইল ধরতে হবে, বুকপকেটে মোবাইল রাখা যাবে না। ইদানীং সর্বত্র যে মেটাল ডিটেক্টর লাগানো গেট থাকে সেগুলি এড়াতে হবে। এর জন্য চিকিৎসক বা হাসপাতালের থেকে ‘পেসমেকার আইডেন্টিফিকেশন কার্ড’ করিয়ে সঙ্গে রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন