মাস্ক পাঠালেন বিজেপি নেতা

সতর্কতা ছাড়াই বাঁকুড়ায় পার্থেনিয়াম নিধন, বিতর্ক

শহর জুড়েই বিভিন্ন জায়গায় গিজগিজ করছে পার্থেনিয়াম। কোথাও কোথাও দেখলে মনে হবে জঙ্গল গজিয়েছে! বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ চত্বরই হোক বা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর। আবার রাস্তার ধারই হোক বা শিশুদের খেলার মাঠসর্বত্রই সদর্পে মাথা উঁচু করে বাতাসে মাথা নাড়াতে দেখা যায় ছোট ছোট পাতার এই গাছগুলিকে। অথচ প্রশাসনিক স্তরে পার্থেনিয়াম নিধন অভিযানের উদ্যোগ কখনওই সে ভাবে চোখে পড়েনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০১:০৬
Share:

পুরপ্রধানের সামনে চলছে সাফাই যজ্ঞ। মঙ্গলবার। ছবি: অভিজিত্‌ সিংহ।

শহর জুড়েই বিভিন্ন জায়গায় গিজগিজ করছে পার্থেনিয়াম। কোথাও কোথাও দেখলে মনে হবে জঙ্গল গজিয়েছে!

Advertisement

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ চত্বরই হোক বা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর। আবার রাস্তার ধারই হোক বা শিশুদের খেলার মাঠসর্বত্রই সদর্পে মাথা উঁচু করে বাতাসে মাথা নাড়াতে দেখা যায় ছোট ছোট পাতার এই গাছগুলিকে। অথচ প্রশাসনিক স্তরে পার্থেনিয়াম নিধন অভিযানের উদ্যোগ কখনওই সে ভাবে চোখে পড়েনি। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সেই উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকেই বাঁকুড়া পুর-এলাকাকে পার্থেনিয়াম মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। প্রায় ৭০ জন শ্রমিককে লাগিয়ে শহরের ইতিউতি পার্থেনিয়াম গাছ উপড়ে ফেলা হচ্ছে।

কিন্তু, এই পার্থেনিয়াম নিধন-যজ্ঞে হাত লাগানো শ্রমিকদের হাত ও মুখ ঢাকতে প্রয়োজনীয় ‘দস্তানা’ ও ‘মাস্ক’ দেওয়ার বন্দোবস্ত করেনি বাঁকুড়া পুরসভা, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। শুরু হয়েছে বিতর্কও। পার্থেনিয়াম গাছের ফুলের পাপড়ি বা কুঁড়ি উড়ে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ওই গাছের সংস্পর্শে এলে অনেকের মধ্যে মারাত্মক ধরনের অ্যালার্জির উপসর্গও দেখা দেয়। তাই, এই গাছ তুলে ফেলার সময় আগাম সতর্কতা হিসাবে শ্রমিকদের নাক ও হাত ঢাকা দেওয়ার জিনিসপত্র দেওয়াটাই নিয়ম। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে তা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাঁকুড়ার বিজেপি নেতা, পেশায় চিকিত্‌সক সুভাষ সরকার। তিনি এই নিয়ে বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপাকে ফোন করে প্রতিবাদ জানান। এবং নিজের নার্সিংহোম থেকে লোক মারফত ‘মাস্ক’ পাঠান পুরসভায়।

Advertisement

সুভাষবাবু বলেন, “পার্থেনিয়াম গাছ কাটার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সতর্কতামূলক জিনিসপত্র পুরসভারই দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু, কেন তা দেওয়া হয়নি জানতে চাওয়ায় পুরপ্রধান বলেন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমি ওই মাস্কগুলি পুরসভায় পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছি।” তিনি জানান, কোনও সতর্কতা ছাড়াই এই কাজ করতে গেলে শ্রমিকেরা হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে সংক্রমণের মতো বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। পার্থেনিয়াম থেকে ছড়ানো এই সব রোগের শিকার হয়ে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা নেহাত কম নয় বলেও সুভাষবাবুর দাবি। তা সত্ত্বেও পুরসভা শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি না ভাবায় প্রশ্ন তুলছেন তিনি। তাঁর ক্ষোভ, “সব কিছু জেনেও পুরসভা শ্রমিকদের একপ্রকার ঢাল, তলোয়ার ছাড়াই যুদ্ধে নামিয়েছে! এটা অনুচিত কাজ হয়েছে বলেই মনে করছি।”

সুভাষবাবুর পাঠানো ‘মাস্ক’ শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান শম্পাদেবী। তাঁর কথায়, “বাজারে ‘মাস্ক’ পাওয়া যায়নি বলেই শ্রমিকদের আমরা তা দিতে পারিনি। একজন নাগরিক হিসেবে সুভাষবাবু ‘মাস্ক’ পাঠিয়ে পুরসভাকে সহযোগিতা করেছেন। আমরাও কিছু ‘মাস্ক’ বাজারে পেয়েছি। শ্রমিকদের তা দেওয়া হবে।” রোগ হতে পারে জানা সত্ত্বেও আগাম প্রস্তুতি ও সতর্কতা ছাড়া কেন এ ভাবে শ্রমিকদের তড়িঘড়ি পার্থেনিয়াম ধ্বংস অভিযানে নামিয়ে দেওয়াটা ঠিক হল কি না, সে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি পুরপ্রধান।

পার্থেনিয়ামের সমস্যা অবশ্য শুধু বাঁকুড়া পুরসভাতেই নয়, বাঁকুড়া জেলার অন্য দুই পুরসভা বিষ্ণুপুর ও সোনামুখীতেও একই রকম। শম্পাদেবী বাঁকুড়ায় পার্থেনিয়াম নিধনে উদ্যোগী হলেও অন্য দু’টি পুরসভার তরফে ওই গাছ ধ্বংসে তত্‌পরতার অভাব রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের রান্নাঘর লাগোয়া এলাকায় কার্যত পার্থেনিয়ামের জঙ্গল গড়ে উঠেছে। তার পাশ দিয়েই রোজ রোগীদের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়া হয়। শহরের ভিতরেও আকছার চোখে পড়ছে পার্থেনিয়ামের ঝোপ।

কেন এ বিষয়ে পুরকর্তারা ব্যবস্থা নেননি, জানতে চাওয়া হলে বিষ্ণুপুরের উপ-পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাসিন্দারা যেখানেই পার্থেনিয়াম নিয়ে অভিযোগ করেছেন, সেখানেই সাফাই কাজ করা হয়েছে। আজ, পরিবেশ দিবসেও পার্থেনিয়াম মুক্ত করতে অভিযান চালাব আমরা।” সোনামুখী পুরসভাতেও এই অভিযান চালানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুরপ্রধান কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গত বছরই পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পার্থেনিয়াম মুক্ত অভিযান চালানো হয়েছিল। এ বারও হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন