সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ নিয়ে ফের বিতর্কের মুখে স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি সরকারি ডাক্তার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে যোগ্যতামান হিসাবে প্রার্থীদের অন্তত এক বছর হাউসস্টাফ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু বছর পনেরো আগেই ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের হাউসস্টাফশিপ করাটা ‘ঐচ্ছিক’ বলে জানিয়ে দিয়েছে এমসিআই। প্রশ্ন উঠেছে, এমসিআই যে বিষয়টিকে ঐচ্ছিক হিসেবে ঘোষণা করেছে, তাকেই কী করে ‘বাধ্যতামূলক’ দাবি করে বিজ্ঞাপন দেয় রাজ্য?
স্বাস্থ্য ভবনের খবর, সরকারের এই অপরিণামদর্শিতার জন্যই বিজ্ঞাপনে তেমন সাড়া মেলেনি। অবস্থা বেগতিক বুঝে তাই ফের বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা ভাবছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এবং সেখানে হাউসস্টাফশিপকে আর বাধ্যতামূলক যোগ্যতামান হিসাবে না রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, এমবিবিএস পাশ করার পর এক বছর ইন্টার্নশিপ করতেই হয়। তারপরেই এক জন মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে চাকরি পেতে পারেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (এমডি, এমএস) হতে হলে তাঁকে ইন্টার্নশিপের পর এক বছর হাউসস্টাফশিপ করতে হত। বহু বছর ধরে চালু এই নিয়মের পরিবর্তন করে এমসিআই বছর পনেরো আগেই জানিয়ে দেয়, হাউসস্টাফশিপ করাটা আর বাধ্যতামূলক নয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এমসিআইয়ের ওই নির্দেশিকার পর থেকে প্রায় কেউই আর হাউসস্টাফশিপ করেন না। কারণ, স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে গেলেও হাউসস্টাফশিপ করাটা আর জরুরি নয়। তাঁদের মতে, এমনিতেই সরকারি হাসপাতালের জন্য ডাক্তার পাওয়া যায় না। বিশেষত, জেলায় গিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রবল অনীহা ডাক্তারদের। বিভিন্ন সময়ে বাড়তি সুযোগ-সুবিধের কথা ঘোষণা করেও গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তার পাওয়া যায়নি। নিয়োগের যোগ্যতামান হিসাবে একটি ঐচ্ছিক বিষয়কে বাধ্যতামূলক হিসাবে চাওয়ায় ডাক্তার পাওয়া আরও মুশকিল হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এপ্রিলে প্রায় দু’হাজার পদে মেডিক্যাল অফিসার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ব্লক মেডিক্যাল অফিসার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২৫ জুন। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, প্রত্যাশার ধারেকাছেও আবেদনপত্র জমা পড়েনি। ফলে আবার বিজ্ঞাপন দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। স্বাস্থ্যঅধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “এটা সত্যি যে, হাউজস্টাফশিপ না করায় অনেকই আবেদন করতে পারছেন না। ভবিষ্যতে এই যোগ্যতামান পরিবর্তন করা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।” স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের উত্তর, “আমাকে এ সব জিজ্ঞাসা করবেন না। আধিকারিকেরা নিয়ম ঠিক করেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।”
গ্রামে স্বাস্থ্য-দল
২৪ ঘণ্টায় একই গ্রামের চার জন মারা গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম এলাকার চন্দ্রহাটের ওই মৃতদের তিন জন একই পরিবারের। চতুর্থ জন প্রতিবেশী। ভিন্ন ভিন্ন কারণে চারজন মারা গিয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে, গ্রামে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে। নবগ্রামের বিএমওএইচ জয়ন্ত বিশ্বাস জানান, জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে মারা গিয়েছেন বুলুরানি মণ্ডল (৪৯)। তাঁর জা নীলিমা মণ্ডল (৪৩) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। নীলিমাদেবীর স্বামী পবিত্র মণ্ডল (৫৪) বৃহস্পতিবার রাতে নিজের বাড়িতেই মারা গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছরের বৃদ্ধ প্রতিবেশী সুকুমার মণ্ডল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শুক্রবার বাড়ি নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসিয়ে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।