হাজির চিকিৎসক, হাল ফিরেছে হাসপাতালের

মাস পাঁচেক আগেও ছবিটা ছিল অনেকটাই আলাদা। পরিষেবার হাল এমনই ছিল যে কালনা মহকুমা হাসপাতালের নামই হয়ে গিয়েছিল রেফারেল হাসপাতাল। কারণ সামান্য অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে গেলেও রোগীকে রেফার করা হত অন্য হাসপাতালে। শুধু চিকিৎসাই নয়, হাসপাতালের সামগ্রিক পরিকাঠামো নিয়েও ছিল বিস্তর ক্ষোভ।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:২২
Share:

ঝাঁ চকচকে কালনা হাসপাতালের বারান্দা।

মাস পাঁচেক আগেও ছবিটা ছিল অনেকটাই আলাদা। পরিষেবার হাল এমনই ছিল যে কালনা মহকুমা হাসপাতালের নামই হয়ে গিয়েছিল রেফারেল হাসপাতাল। কারণ সামান্য অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে গেলেও রোগীকে রেফার করা হত অন্য হাসপাতালে। শুধু চিকিৎসাই নয়, হাসপাতালের সামগ্রিক পরিকাঠামো নিয়েও ছিল বিস্তর ক্ষোভ। মাঝে তৈরি হয়েছিল চিকিৎসক সঙ্কট। দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেন্ড হয়ে যান তৎকালীন সুপার অভিরূপ মণ্ডল। এর পর হাসপাতালের সুপার হন হাসপাতালেকই চিকিৎসক কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই। তার পর অনেকটাই বদল এসেছে এই হাসপাতালের ভিতর ও বাইরে। অন্তত রবিবারের সকালে আনন্দবাজারের প্রতিনিধির চোখে ধরা পড়ল সে রকমই কিছু ভাল ছবি। তবে একই সঙ্গে বন্ধ ব্লাড ব্যাঙ্ক ও হাসপাতালের রান্নাঘর লাগোয়া আবর্জনা জমে থাকার মত খারাপ ছবিও দেখা গেল এ দিন।

Advertisement

বেলা ১২টাতেও বন্ধ ব্লাড ব্যাঙ্ক। নিজস্ব চিত্র।

ভাল ছবি

Advertisement

সময়: সকাল সাড়ে ৮টা। হাসপাতাল চত্বরে ঢুকল সাফাই কর্মীরা। বাথরুম, রোগীদের ওয়ার্ড-সহ হাসপাতাল সাফ করা শুরু করল তাঁরা। ধীরে ধীরে হাসপাতালের বিভিন্ন গেটে মোতায়েন হয়ে গেল হাসপাতালের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী। মাস খানেক আগেও হাসপাতালের কয়েকটি জায়গায় তৈরি হয়ে গিয়েছিল আগাছা। নোংরা জলে উপচে পড়েছিল নালা। কিন্তু এ দিন দেখা গেল আগাছা কাটা হয়েছে। নালাগুলিও পরিষ্কার করা হয়েছে। হাসপাতালের দেওয়ালে পানের পিক ফেলতে যাচ্ছিলেন এক যুবক। দেখতে পেয়েই ছুটে গেলেন হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী।

সময়: সকাল সাড়ে ৯টা। মেডিসিন বিভাগে রাউন্ডে এলেন এক চিকিৎসক (এই বিভাগ নিয়েই এর আগে ভুরি ভুরি অভিযোগ তুলেছেন রোগীরা)। চিকিৎসক ওয়ার্ডে ঢোকার পরেই কর্তব্যরত নার্সরা রোগীর আত্মীয়দের ওয়ার্ডের বাইরে যেতে নির্দেশ দিলেন। মেডিসিন বিভাগ ঘুরে তিনি গেলেন হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে। বেলা ১২টা পর্যন্ত চলল রোগীদের শারীরিক পরীক্ষা। এরমধ্যেই শিশু বিভাগে ভর্তি থাকা এক খুদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নার্সরা খবর দিলেন বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসককে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলেন সেই শিশু চিকিৎসক।

সময়: দুপুর ১২টা। প্রচন্ড ব্যস্ত প্রসূতি বিভাগ। হাসপাতালের হিসেব অনুযায়ী এ দিন তখনও পর্যন্ত এই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন ও ছাড়া পেয়েছেন ১০জন। নাদনঘাট এলাকার আশা কর্মী চন্দনা দাস জানান, প্রসূতি বিভাগে রয়েছেন দু’জন চিকিৎসক। স্থানীয় বাসিন্দারা এখন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে নির্ভয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি করতে পারছেন।

চলছে নিকাশি নালা সাফাই।

খারাপ ছবি

সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকল হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রবিবারে ভর্তি থাকা রোগীর যদি রক্তের দরকার পড়ে তাহলে কর্তৃপক্ষ খবর দেয় ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মীদের। তার পরেই খোলে ব্লাড ব্যাঙ্কের দরজা। এ দিনও তাই হল। বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে কালো রঙের মোটরবাইক নিয়ে এলেন এক যুবক। বাইক থেকে নেমে তিনি ফোনে ডাকলেন ব্লাড ব্যাঙ্কেরই এক কর্মীকে। মিনিট দু’য়েক পর ওই কর্মীকে নিয়ে ভিতরে গেলেন তিনি। ১২টা ৩৬ মিনিট নাগাদ একটি ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে এলেন ওই যুবক। বোঝা গেল তিনি রক্ত নিয়ে গেলেন। তার পর আবার বন্ধ হয়ে গেল ব্লাড ব্যাঙ্কের দরজা। কিন্তু রক্ত গেল কোথায়? রবিবার হাসপাতালের সুপারের অফিস বন্ধ ছিল। এই খবর পেয়ে সুপার কৃষ্ণচন্দ্রবাবু জানান, সরকারি একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ওই রক্ত গিয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের নির্দেশ দেন, রবিবার কারওকে রক্ত দেওয়ার আগে যেন তাঁকে জানানো হয়।

হাসপাতাল কতটা বদলাল? সুপারের কথায়, “হাসপাতাল থেকে রেফারের সংখ্যা অনেক কমেছে। চিকিৎসকরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। এই হাসপাতালের প্রতি আগে সাধারণ মানুষের যে আস্থা ছিল সেটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।” রান্নাঘরের পাশে জমি থাকা আবর্জনা প্রসঙ্গে সুপার জানান, হাসপাতাল চত্বরের আবর্জনা নিয়ে যায় পুরসভা। ওই আবর্জনার স্তুপ পরিষ্কারের জন্য রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন